ক্রিকেট হোক বা অন্য কোনো খেলা, যে কোনো খেলাতেই খেলোয়াড়দের ফিটনেস অনেকটাই তাদের সফলতা রহস্য থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে ক্রিকেটও সেই খেলাগুলির মধ্যে রয়েছে যেখানে খেলোয়াড়দের ফিটনেস তাদের প্রদর্শনের উপর পরিস্কার দেখা যায়। কিন্তু বেশকয়েকবার খেলোয়াড়দের মাঠে বা প্র্যাকটিস চলাকালীন চোটের মুখে পড়তে হয়। শুধু তাই নয় কখনো কখনো তাদের মাঠের বাইরেও অ্যাক্সিডেন্টের মুখে পড়তে হয়, যে কারণে তাদের জীবনই বদলে যায়। কিন্তু বর্তমান সময় বিশ্ব ক্রিকেটে এমন বেশকিছু খেলোয়াড় রয়েছেন যাদের বড়ো বড়ো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে কিন্তু তারা ফিট হয়ে দ্বিতীয়বার মাঠে ফিরে এসেছেন আর নিজেদের দলের হয়ে ভালো প্রদর্শন করেছেন। তো আসুন এই প্রতিবেদনে আপনাদের সেই ৫জন ক্রিকেটারের ব্যাপারে জানানো যাক যারা অ্যাক্সিডেন্টে আহত হওয়ার পর ক্রিকেট মাঠে ফিরে এসেছেন।
ওশেন থমাস
ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেট দলের জোরে বোলার ওশেন থমাস ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে দুর্দান্ত প্রদর্শন করেছেন। এরপর তরুণ স্পিডস্টারকে দ্রুতই জাতীয় দলে জায়গা দেওয়া হয়। জাতীয় দলে ভালো প্রদর্শন করার পর আইপিএল ২০১৯ এর নিলামে তাকে ১.১ কোটি টাকা দামে রাজস্থান রয়্যালস কিনে নেয়। এরপর ফেব্রুয়ারি ২০২০র কথা, যখন জামাইকায় থমাসের গাড়ির বড়ো অ্যাক্সিডেন্ট হয়। এই দুর্ঘটনায় থমাসের গাড়ি সম্পূর্ণ উলটে গিয়েছিল আর তাকে কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই সময় ডাক্তাররা এই তারকাকে বাড়িতে বিশ্রাম করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু এই বোলার দ্রুতই রিকভারি করেন আর শ্রীলঙ্কা সফরে খেলা হওয়া টি-২০ ম্যাচে দলে ফিরে আসেন। যেখানে তিনি দুর্দান্ত প্রদর্শন করে। এটা দেখে বলা ভুল হবে না যে যদি আপনার মধ্যে প্যাশন থাকে তো কোনো দুর্ঘটনা আপনাকে ভেঙে ফেলতে পারে না।
নিকোলস পুরণ
বাঁহাতি বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান নিকোলস পুরণকে ওয়েস্টইন্ডিজ ক্রিকেট দলের ভবিষ্যত হিসেবে দেখা হয়। এই ২৪ বছর বয়সী খেলোয়াড় নিজের জাতীয় দলের মিডল অর্ডারকে শক্তিশালী করে তোলেন। নিকোলস বিশ্বজুড়ে একজন ম্যাচ উইনার খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত কিন্তু একটা সময় এমনও ছিল যখন ভীষণ একটি অ্যাক্সিডেন্টের মুখোমুখী হওয়ার পর পুরণ হাঁটতেও পারতেন না। জানুয়ারি ২০১৫র কথা যখন পুরণ নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন ঠিক সেই সময় ত্রিনিদাদে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পুরণ আহত হন। তাকে দ্রুতই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আর তাকে পায়ের দুটি অপারেশনের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়। অপারেশনের পর তিনি সাউথপা থেরাপি করান আর বহুমাস তাকে হুইলচেয়ারে থাকতে হয়। আগস্ট পর্যন্ত তিনি জগিং শুরু করে দেন আর একমাস পরে নেট সেশন করেন। ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করার পর পুরণ খোলসা করেছিলেন যে যখন তিনি হাঁটতেও পারছিলেন না তখন কায়রন পোলার্ড তার বড়ো ভাইরের মতোই তার উৎসাহ বাড়ান তার সৌজন্যেই তিনি ক্রিকেট মাঠে ফিরতে পেরেছেন।
করুণ নায়ার
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে করুণ নায়ার দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। সেহবাগের পর নায়ার ২০১৬য় চেন্নাইয়ের চিন্নাস্বামী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা নিজের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন। এই বছর করুণ নায়ার একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। আসলে ২০১৬য় তিনি কেরলে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। করুণ নিজের আত্মীয়ের সঙ্গে পাম্বা নদীর আপড়ে একটি নৌকোয় আরনমুলা মন্দিরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু নৌকো দুর্ঘটনাগ্রস্থ হয় আর করুণ নায়ারকে কিছু দূর পর্যন্ত সাঁতরে যেতে হয়। তবে আশেপাশের গ্রামবাসীরা তাকে বাঁচিয়ে নেন। ওই দুর্ঘটনায় করুণ নিজের বেশকিছু আত্মীয়কে হারান। এখন ক্রিকেট কেরিয়ারের কথা বলা হলে তার কেরিয়ার ভীষণই ছোটো থেকেছে কিন্তু টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে তিনি ইতিহাসে নিজের নাম নথিভূক্ত করে ফেলেছেন।
মহম্মদ শামি
টিম ইন্ডিয়ার তারকা জোরে বোলার মহম্মদ শামির নামও সেই খেলোয়াড়দের তালিকায় শামিল রয়েছে যারা দুর্ঘটনার পর ক্রিকেট মাঠে ফিরে এসেছেন আর আজও নিজের দলের হয়ে দুর্দান্ত প্রদর্শন করছেন। আসলে ২০১৮য় যখন শামি দেরাদুন থেকে দিল্লি আসছিলেন তখন তিনি একটি অ্যাক্সিডেন্টের শিকার হন। ওই দুর্ঘটনায় শামির ডান চোখের উপ্র মাথায় চোট লাগে, যার ফলে কিছু সেলাইও পড়ে। ওই দুর্ঘটনার সময় শামি এবং তার স্ত্রী হাসিল জাহানের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। তবে শামি নিজের চোট থেকে দ্রুত ফিরে আসেন আর ক্রিকেটেও ফিরে আসেন। বর্তমান সময় শামি ভারতের হয়ে তিন ফর্ম্যাটেই শক্তিশালী বোলিং করে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলতে বিরাট কোহলির বড়ো হাতিয়ার হয়ে উঠেছেন। ২০১৯ আইসিসি বিশ্বকাপে শামি দুর্দান্ত বোলিং করেন আর সেই সঙ্গে হ্যাটট্রিকও করেন। এছাড়াও ঘরোয়া সিরিজ এবং আইপিএলেও তাকে ভালো বোলিং করতে দেখা গিয়েছে।