মাত্র ২৪ ঘন্টা আগেই নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে অস্ট্রেলিয়ার কোচ ড্যারেন লেম্যান জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন না কোচের পদ থেকে। কিন্তু পরের ২৪ ঘন্টায় নিজের আগের মতের সম্পুর্ণ বিপরীত মত প্রকাশ করলেন তিনি। বৃহস্পতিবারই সাংবাদিকদের কাছে জানিয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জোহানেসবার্গের চতুর্থ টেস্টই অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসেবে তার শেষ টেস্ট। ওই টেস্টের পরই নিজের পদত্যাগ পত্র তিনি জমা দেবেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ মহলে প্রশ্ন উঠে পড়েছেন লেম্যানের এমন মত পরিবর্তনের পেছনের কারণ কি? একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে যে বৃহস্পতিবারই প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক স্মিথ এবং বেনক্রফটকে সাংবাদিক সম্মেলনে ভেঙে পড়তে দেখেই নাকি নিজের মত বদল করেছেন এই অস্ট্রেলীয়। এতদিন তার কোচিংয়ে একই দলে একসঙ্গে থাকা দুই ক্রিকেটারকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেন নি এই প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান তথা বর্তমনা কোচ।
সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের দুই প্রিয় ছাত্রকে কাঁদতে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে তারও উচিৎ নয় এভাবে পদে থাকা। তাই লেম্যান পরিস্কারই জানিয়ে দেন যে নিজের বিবেকের ডাক উপেক্ষা করতে পারেন নি তিনি। বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়েই তাই তিনি ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের লিখিত একটি বিবৃতির শুরুতেই লেম্যান জানিয়েছেন, “ আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই এটাই আমার শেষ টেস্ট অস্ট্রেলিয়ার হেড কোচ হিসেবে। আমি ইস্তফা দিচ্ছি”। প্রসঙ্গত এর আগের দিনের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে একদ্ম উল্টো কথা বলেছিলেন লেম্যান। জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন না। ফলত এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে লেম্যানের মুখে অন্য কথা শুনে চমকে যান উপস্থিত সাংবাদিকরা। হতবাক হয়ে পড়া সাংবাদিকদের বিস্ময়ের ঘোর কাটাতেই লেম্যান ফের জানান, “ আজ সাংবাদিক বৈঠকে স্মিথ এবং ব্যানক্রফটকে দেখে আমার মনে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে এগোতে দিয়ে আমার এখানেই শেষ করা উচিৎ”। স্মিথকে সাংবাদিক বৈঠকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেন লেম্যান।
জানান, “ স্টিভকে সংবাদমাধ্যমের সামনে কাঁদতে দেখে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। শুধু আমি নই দলের সবাইই খুব কষ্ট পাচ্ছে”। লেম্যান আরও আনিয়েছেন তা কোচের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তে তার পরিবারও তার পাশে রয়েছে। তার পরিবারও তার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এ ব্যাপারে লেম্যান জানান, “ বিগত এক সপ্তাহ ধরে প্রচুর অপমান হস্য করতে হয়েছে আমার পরিবারকেও। তারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। গত কয়েকদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে এবার ছেড়ে দেওয়াই ভালো। দলের এই কালচারের জন্যও আমিও সমানভাবে দায়ী। আমি কিভাবে সেই দায়কে অস্বীকার করব? যদিও আগের দিনই আমি বলেছিলাম যে আমি থাকছি, কিন্তু স্টিভদের এই মানসিক অবস্থা দেখে আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না”। প্রসঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া লেম্যানকে নির্দোষ হিসেবে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তাতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয় অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক এবং ক্রিকেট মহলেও। তাদের ধারণা লেম্যানও কম দোষী নন। কারণ দলকে জয়ের জন্য ঝাঁপাতে যে মন্ত্র দেন লেম্যান, তার ফলেও ক্রিকেটাররা এতটা আগ্রাসী হয়ে পড়েন। ফলে যে কোন মূল্যেই তারা জয় পেতে চান। শেষ পর্যন্ত তাই নিজের দায় স্বীকার করেই কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন ড্যারেন লেম্যান।