শূন্য় রানে দশ উইকেট, স্কুল পড়ুয়ার কেরামতিতে গর্বিত ভারত 1

স্বপ্ন নয়। সত্য়ি ঘটনা। উপরের শিরোনামে ঠিকই পড়েছেন আপনি। শূন্য় রানে দশ উইকেট নিয়েছেন ভারতের এক স্কুল পড়ুয়া ক্রিকেটার। আর তার কেরামতিতে অবাক ক্রিকেট বিশ্ব। যা আজ পর্যন্ত কেউ করে দেখাতে পারেননি, সেটাই করে দেখালেন ভারতের এই পনেরো বছরের ক্রিকেটারটি।

নাম আকাশ চৌধুরী। রাজস্থানের জয়পুরের বাসিন্দা। জয়পুরের একটি ঘরোয়া টি-২০ ম্য়াচে এই রেকর্ড গড়েছে এই কিশোর ক্রিকেটার। টুর্নামেন্টের নাম প্রয়াত ভবর সিং টি-২০ টুর্নামেন্ট। জয়পুরের এক স্থানীয় মাঠ মালিকের দাদু সম্প্রতি মারা যান, তাঁর স্মরণে ওই ব্য়ক্তি এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন। সেখানেই আকাশের এই রেকর্ড ব্রেকিং বোলিং প্রচারের শিরোনামে চলে এসেছে।শূন্য় রানে দশ উইকেট, স্কুল পড়ুয়ার কেরামতিতে গর্বিত ভারত 2

দিশা ক্রিকেট অ্য়াকাডেমি (ডিসিএ) এবং পার্ল অ্য়াকাডেমি (পিএ)-এর মধ্য়ে ম্য়াচটি শুরু হয় এদিন। স্য়াঁতস্য়াঁতে উইকেটে পিএ টসে জেতার পর প্রথমে ফিল্ডিয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০ ওভারে বিপক্ষ দল ১৫৬ রানে থেমে যায়। জবাবে পিএ ব্য়াট করতে নেমে ৩৬ রানেই গুটিয়ে যায়। ডিসিএ টিমের আকাশ ১০ উইকেট নেয় একাই। আর তা কোনও রান খরচ না করেই।

এমন বিরল কৃতিত্ব গড়ার পর আকাশকে নিয়ে সবাই মাতামাতি করছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্য়ে ক্রিকেট বিশ্বের সব প্রান্তেই এই খবর ছড়িয়ে পড়বে। ক্রীড়া বিষয়ক একটি সংবাদমাধ্য়মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ম্য়াচের পর আকাশ বলে, ভগবানকে ধন্য়বাদ দিতে পারব না এজন্য়। টি-২০ ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়। অবশ্য়ই সেদিন যদি ভাগ্য় সহায় হয় তবে। কিন্তু, দশ উইকেটের নজির। কোনও রান না দিয়ে। এটা পুরোপুরি ভাগ্য়ের ব্য়াপার।শূন্য় রানে দশ উইকেট, স্কুল পড়ুয়ার কেরামতিতে গর্বিত ভারত 3

প্রথম ওভারেই দুটি উইকেট তুলে নিয়েছিলাম। তার পরের ওভারে আরও দুটি উইকেট তুলে নিই। তৃতীয় ওভারে আরও দুটি উইকেট ঝুলিতে পুরে নিই। আর শেষ ওভারে চারটি উইকেট পেয়েছি। তার মধ্য়ে শেষ তিনটি উইকেট হ্য়াটট্রিক করে পেয়েছি।

শূন্য় রানে দশ উইকেট, স্কুল পড়ুয়ার কেরামতিতে গর্বিত ভারত 4 শূন্য় রানে দশ উইকেট, স্কুল পড়ুয়ার কেরামতিতে গর্বিত ভারত 5

 

২০০২ সালে জন্ম আকাশের। রাজস্থানের উত্তরপ্রদেশ সীমানা সংলগ্ন ছোট্টো জেলা ভরতপুরের ছেলে। ক্রিকেটে কিভাবে আকাশ এলেন সেটা তাঁর মুখ থেকেই জেনে নেওয়া যাক। আমার দাদা জেলা স্তরে ক্রিকেট খেলত রাজস্থানে। সেই থেকেই আমার ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। অনেক সময়তেই ও আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যেত ম্য়াচ দেখাতে। তারপর আমার বাবা-মা বিকানিরের শার্দুল স্পোর্টস স্কুলে আমাকে ভর্তি করিয়ে দেয় ২০১৪ সালে।

জয়পুরে চলে আসি তারপর। আরাবল্লী ক্রিকেট ক্লাবে ভিভেক যাদবের কাছে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি। উনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলস এবং রাজস্থানের রঞ্জি টিমের সঙ্গে কাজ করেছেন।

বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেস বোলিং করার পাশাপাশি আকাশ খুব ভালো ফিল্ডার। সেই সঙ্গে লোয়ার-অর্ডারে ব্য়াটিংটাও করতে পারে। আমি জাহির খানের ফ্য়ান। ওঁর মতো বল করার ইচ্ছে। আশা করি, বড় হয়ে জাহির মতো জাতীয় দলে খেলতে পারব।

শূন্য় রানে দশ উইকেট, স্কুল পড়ুয়ার কেরামতিতে গর্বিত ভারত 6

২০১৭ চ্য়ালেঞ্জার ট্রফির জন্য় এখন তৈরি হচ্ছে আকাশ। জেলা ক্রিকেট থেকে রাজ্য়স্তরে ক্রিকেটে যাওয়ার পথ চ্য়ালেঞ্জার খেলেই পার করে কিশোর ক্রিকেটাররা।

সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্য়ালেঞ্জার ট্রফিতেও ভাগ্য় যাচাই করেছিলাম। ১৩০০ ছেলের মধ্য়ে থেকে দেড়শোজনকে মেডিকেলের জন্য় বাছাই করা হয়েছে। আমি তাদের মধ্য়ে একজন। ওই দেড়শোজনের মধ্য়ে থেকে নব্বই জনকে চ্য়ালেঞ্জার ট্রফির জন্য় বাছাই করা হবে। আমার আশা, সুযোগ পাবো।শূন্য় রানে দশ উইকেট, স্কুল পড়ুয়ার কেরামতিতে গর্বিত ভারত 7

মেডিকেলের জন্য় বাছাই করা হয়েছে – সেটা আবার কি? উত্তরটা আকাশ নিজেই দিল। আসলে জুনিয়র লেভেলে অনেকেই বয়স ভাঁড়িয়ে ক্রিকেট খেলে। সেটা আটকানোর জন্য়ই মেডিকেল টেস্টে বসানো হয় কোনও বয়সভিত্তিক ট্রফিতে দল নির্বাচনের আগে। যাতে কোনও স্তরে ক্রিকেটারদের বয়স নিয়ে কোনও গাফিলতি না থাকে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *