ভারতীয় ক্রিকেটে বর্তমানে ওয়ানডে ফরম্যাটে ওপেনিংয়ে অটো চয়েজ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিখর ধবন এবং রোহিত শর্মার জুটি। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ওপেনিং পজিশন একা হাতেই সামাল দিচ্ছেন রোহিত শর্মা। অন্যদিকে বর্তমান কাপ্তান কোহলি একের পর এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য ম্যাচ।
কোহলি গত কয়েক বছর ধরে আইসিসি ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দিকে থাকলেও রোহিত শর্মা বেশ পিছিয়েই ছিলেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স রোহিতকে এগিয়ে নিয়ে গেছে বহু দূর।
এবার দেখা যাক ঠিক কি কারণে ২০১৩ সাল থেকে কোহলির চেয়ে পিছিয়ে নেই রোহিত শর্মা।
১। সর্বাধিক রান
ওয়ানডে ফরম্যাটে ওপেনিং পজিশনে ব্যাটিং শুরু করার পর থেকেই নিজেকে ভিন্নভাবে প্রমাণ করা শুরু করেন রোহিত শর্মা। ২০১৩ সাল থেকে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০৩ ইনিংস ব্যাট করে ৫৮.৯১ গড়ে করেছেন ৫২৪৩ রান। অন্যদিকে বিরাট কোহলি একই সময়ে এই ফরম্যাটে ১১৭ ইনিংস ব্যাট করে ৬৬.৫৫ গড়ে করেছেন ৬১৯০ রান। এখানে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে রোহিত শর্মা কোহলির চেয়ে ১৪ ইনিংস কম খেলাতে রানের দিক থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডের মত পেস কন্ডিশনে রোহিত শর্মার নির্ভরযোগ্য শুরুর উপর ভিত্তি করে বহু ম্যাচে জয়ের হাসি হেসেছে ভারত।
২। উন্নত সংযোগ রেট
বিরাট কোহলই একহজন ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান তা জলের মতই পরিষ্কার তবে রোহিতও কম নয়। প্রতি ২.২৯ ইনিংসে যেখানে কোহলির একটি ফিফটি হাঁকানোর ধারাবাহিকতা রয়েছে অপরপক্ষে রোহিত শর্মাও ২.২৫ ইনিংসে হাঁকান একটি করে ফিফটি। অন্যদিকে সেঞ্চুরি হাঁকানোর দিকেও কোহলি এবং রোহিত বেশ কাছাকাছি অবস্থান করছেন। কোহলি একটি সেঞ্চুরি হাঁকাতে যেখানে খেলে থাকেন ৪.৮৮ ইনিংস তেমনি রোহিত খেলে থাকেন ৫.৭২ ইনিংস।
নতুন বল মোকাবেলায় যথেষ্ট পারদর্শী রোহিত ব্যাটে বলে সংযোগ ঘটিয়ে রান বের করে আনতে পারেন। ৫০ রানের ইনিংসকে ১০০তে রূপান্তর করা ও ১০০ রানের ইনিংসকে ১৫০ বা ২০০ তে নিয়ে যেতে পারেন নতুন বল মোকাবেলা করা রোহিত।
৩। আইসিসি টুর্নামেন্টে প্রভাব
২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর থেকেই আইসিসির সব বড় বড় টুর্নামেন্টে ফেভারিটের তকমা গায়ে মেখে মাঠে নামে ভারত। যদিও সর্বশেষ এশিয়া কাপে শিখর ধবন সেরা রান সংগ্রাহক হয়েছেন তবে রোহিত শর্মার ব্যাট থেকেও বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ইনিংস দেখা গিয়েছে।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রোহিত ২০১৫ ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী ১৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৫ ইনিংসে ৩০৪ রান। রানের গ্রাফ হিসেব করলে দেখা যায় আইসিসির কোনো বড় আসরে কোহলির চেয়ে রান করার ক্ষেত্রে এগিয়েই রয়েছেন রোহিত।
৪। সেরা স্কোরের ধারাবাহিকতা
একদিনের ক্রিকেটে রোহিত শর্মার এখন পর্যন্ত ১৫০ রান ছাড়ানো ইনিংস রয়েছে ছয়টি এবং ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে তিনটি। কোহলি ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ডাবল সেঞ্চুরির দেখা না পেলেও সেঞ্চুরি করেছে ৩৮টি। বিপরীতে রোহিতের সেঞ্চুরি সংখ্যা ২০টি। এদিক থেকেও খুব বেশি পিছিয়ে নেই রোহিত। কেননা রোহিত ধারাবাহিকভাবে যে রান করে যাচ্ছেন এতে করে কোহলির সম পরিমাণ রান করে ফেলবেন খুব বেশি দিনের ব্যবধান ছাড়াই।
৫। অধিনায়কত্বের চাপ
জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে রোহিত অধিনায়ক ছিলেন গত এশিয়া কাপে। সফলও হয়েছেন শতভাগ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে টিম ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব কোহলি দিয়ে থাকলেও আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের দায়িত্ব বেশ শক্ত হাতেই পালন করে আসছেন রোহিত। তাই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে রোহিতের অভিজ্ঞতাও কম নয়।
রোহিত শর্মা দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্বে থাকলে দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে যে একাত্ববোধ বা দলগত পারফরম্যান্স দেখা যায় তাও স্পষ্ট সবার কাছেই। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করলে কোহলির চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকায় ওয়ানডে ফরম্যাটে যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে কোহলিকেই দেখা যায়।