তিন ম্য়াচের সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০ ম্য়াচে ভারতীয় ক্রিকেট দল রাজকোটে নিউজিল্য়ান্ডের কাছে হেরেছে। বোলিংয়ের চেয়ে বেশি করে ব্য়াটিং ব্য়র্থতা দায়ী এক্ষত্রে। সিরিজ জেতার পরিবর্তে কিউয়িদের সিরিজে সমতা ফেরাতে দিয়েছে বিরাট কোহলির টিম। দলের নেতা হাফ-সেঞ্চুরি করলেও, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন না। বড় কথা হলো, ভারত চল্লিশ রানে ম্য়াচ হারল, আর দলের সেরা ব্য়াটসম্য়ান ও অধিনায়ক ক্রিজে অপরাজিত থেকে গিয়ে ম্য়াচ জেতাতে পারলেন না – এর চেয়ে বড় লজ্জাজনক পরিস্থিতি, আর কিছু হতে পারে না। নিজে যেমন তিন নম্বরে শ্রেয়স আইয়রকে ঠেলে দিয়ে চারে নামেন, তেমনই প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে আরও উপরে কিছুতেই তুলে আনছেন না বিরাট ও হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। হার্দিক পান্ডিয়া ভালো ক্রিকেটার, এক-আধটা সিরিজ খারাপ কাটতেই পারে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, হার্দিক তরুণ ক্রিকেটার। রক্তের জোশে ক্রিকেট খেলেন। আর ধোনি একজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা। ব্য়াটিং অর্ডারে তাঁকে ওপরে তুলে আনলে ফর্মে না থাকলেও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসবেন না। আর সেই সঙ্গে অন্য়দের গাইড করতে পারবেন।
রাজকোটে ভারত লড়াই করে ম্য়াচ হেরেছে বলা যাবে না। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, বড় শট খেলে ম্য়াচ শেষ করার তাড়া, আবার প্রথম তিন ব্য়াটস্য়ান প্রায়শই ম্য়াচ জিতিয়ে দেওয়ার কারণে ক্রিজে নেমে ব্য়াটিংয়ের অভ্য়াসটা থাকছে না পরের দিকের ব্য়াটসম্য়ানদের। ম্য়াচের পর সাংবাদিক সম্মেলন সেরে হোটেলে ফেরার পর সব ক্রিকেটারদের উচিত ভুল-ত্রুটি নিয়ে বিশ্লেষণ করা। তার বদলে অধিনায়ক বিরাট কোহলি দলের সতীর্থদের নিয়ে যেভাবে নিজের জন্মদিন পালনে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেন, তা মোটেই শুভ বার্তা পাঠালো না ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে।
কাকতালীয়ভাবে নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্য়াচের পরের দিনই ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির জন্মদিন পড়েছে। রবিবার (৫ নভেম্বর) ঊনত্রিশে পা দিলেন বিরাট। মুহূর্তটা আনন্দের অবশ্য়ই। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতির কথা সবসময় মাথা রাখা উচিত। অনেকে বলতেই পারেন, বিরাট তো রান করেছেন। কিন্তু, বাস্তব হলো, দল হেরেছে। ভারত অধিনায়ক হিসেবে তিনি তাঁর দায় এড়াতে পারেন না। দলের ছেলেদের মোটিভেট করা এবং ভুলগুলি দেখিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে ভারতীয় দলের জার্সি না খুলেই ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা পের করতেই কেক কাটা এবং মাথায়-মুখে তা নিয়ে মাখামাখি করা, মোটেই কাঙ্খিত ছিল না।
সমালোচকরা বলছেন, ধোনি অধিনায়ক থাকলে কি এটা করতেন? কখনই করতেন না। আর যদিও বা জন্মদিন পালন করলেন বিরাট, তা কেক কেটে ক্য়ামেরার আড়ালেও সারা যেত। অধিনায়ক বিরাটের আরও পরিণত হওয়া প্রয়োজন। কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে আচরণ করতে হয়, তা এখনও শেখার রয়েছে। কারণ, দেশের ক্রিকেট অনুরাগীরা গাঁটের টাকা খরচ করে, মূল্য়বান সময় বাঁচিয়ে রেখে বা কাজ তুলে রেখে বিরাটদের সমর্থন জানাতে টিভির পর্দায় চোখ রাখেন। ভারত জিতলে তাঁরা যেমন খুশি হন, তেমন জাতীয় দল হারলে মন ভেঙে যায় তাঁদের। সেই কথা মাথায় না রেখে বিরাটসহ ভারতীয় দল যে মনোভাব দেখিয়েছে ম্য়াচের পর, তাতে বহু ফ্য়ানের কষ্ট পাওয়া স্বাবাবিক।
Revenge no. 1️⃣ 😂
Happy birthday, skipper- @imVkohli pic.twitter.com/mkv5KV08gH— hardik pandya (@hardikpandya7) November 4, 2017
একই কথা প্রযোজ্য় বিসিসিআই‘য়ের জন্য়ও। মান-সম্মান ডুবিয়ে ম্য়াচ হারার পরও অধিনায়কের জন্মদিন পালনের ছবি যেভাবে তারা ট্য়ুইটারে পোস্ট করেছে, তাতে ভুল বার্তা গিয়েছে ক্রিকেট ফ্য়ানেদের কাছে। আজকাল ভারতীয় ক্রিকেটে ড্রেসিং রুমে কেক কেটে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে জন্মদিন পালন করা যেন ফ্য়াশনে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে ছবি ট্য়ুইট করা তো রয়েইছে। অথচ আগেকার দিনে ক্রিকেটাররা অনেক পরিণত আচরণ করতেন। আনন্দ করলেও নিজেদের একটা গণ্ডীর মধ্য়ে বেঁধে রাখতেন ফ্য়ানেদের সমর্থনের কথা ভেবে। এখন সেই ব্য়াপারটাই নেই ভারতীয় ক্রিকেটে। দল হারুক বা জিতুক, তার কোনও প্রভাব ক্রিকেটারদের জন্মদিন পালনের ওপর পড়ে না।
Happy Birthday, @imVkohli. Have yet another fabulous year. God bless #HappyBirthdayVirat pic.twitter.com/33fCZye5cE
— Ravi Shastri (@RaviShastriOfc) November 5, 2017
এদিকে, ভারত অধিনায়ক জন্মদিন উপলক্ষ্য়ে অনেকেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কোচ রবি শাস্ত্রী কেক কাটার সময় উপস্থিত থাকার পাশাপাশি ট্য়ুইটারে বিরাটকে শুভেচ্ছা জানান। হার্দিকও অধিনায়কের সঙ্গে উচ্ছ্বাসের মুহূর্তের ছবি পোস্ট করেছেন।
#HappybirthdayVirat pic.twitter.com/SeFCAxttIG
— BCCI (@BCCI) November 4, 2017