ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি খুব ব্য়স্ত মানুষ হলেও বিজ্ঞাপন এবং টিভিতে মুখ দেখানোর কোনও সুযোগই ছাড়েন না। ক্রিকেটার বিরাট কোহলিকে কিভাবে ‘ব্র্য়ান্ড বিরাট কোহলি‘তে গড়ে তুলতে হয়, তা বেশ দক্ষতার সঙ্গেই রপ্ত করেছেন দিল্লির ক্রিকেটারটি। একদিনের ক্রিকেট ও টি-২০ ক্রিকেটের শত ব্য়স্ততার মাঝেও বিরাট ঠিক সময় বের করে তাঁর বন্ধু, গৌরব কাপুরের চ্য়াট শো‘তে উপস্থিত হন। বেশ খোলেমেলা আলোচনাও চলে টক শো‘কে দর্শকদের জন্য় উপভোগ্য় করে তুলতে। যেহেতু বিরাট পেশাদার ক্রিকেটার, ফলে প্রশ্ন ক্রিকেট সংক্রান্ত হওয়াই স্বাভাবিক। ব্য়াটসম্য়ান বিরাট এখন এতটা ভীতি ধরান বোলারদের মনে, যে অনেকে তাঁকে বোলারদের ত্রাস বলতেও পিছপা হন না। সেই তিনি কাকে ভয় পান, তা জানার ইচ্ছে যে কারওরই থাকবে। গৌরবও তাঁকে কোটি টাকার প্রশ্নটা করেই ফেলেন দর্শক এবং অনুরাগীদের হয়ে। প্রশ্নের জবাবে বিরাট জানান, শোয়েব আখতার যখন বল করতেন, তখন ক্রিকেট খেললে তিনি নন-স্ট্রাইকার এন্ডে থাকতেই পছন্দ করতেন। ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারকে এতটাই ভয় করেন তিনি।
ক্রিকেটকে ভালোবাসেন, অথচ শোয়েব আখতারের নাম জানেন না – এমন কেউ নেই। পাকিস্তানের এই ফাস্ট বোলার এত জোরে বল করতেন, বিপক্ষ দলের অনেক ব্য়াটসম্য়ানও তাঁর নাম শুনে কাঁপত সে সময়। ওয়াসিম আক্রাম, ওয়াকার ইউনিসরা যখন পিক ফর্মে সেই সময় পাকিস্তান দলে এক তারকার জন্ম হয়, তাঁর নামই শোয়েব আখতার। কেরিয়ারের শেষ দিন পর্যন্ত বাইশ গজে সুপার ফাস্ট ট্রেনের মতো ক্রিকেট বল সাঁ সাঁ করে ছুটত তাঁর হাত থেকে বেরনোর পর। নিউজিল্য়ান্ডের শেন বন্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি‘র চেয়েও বড় মাপের ফাস্ট বোলার বলা হতো তাঁকে। আজকাল সেই ধরনের বোলার আর কোথায়। এখনকার ব্য়াটসম্য়ানদের তেমন চ্য়ালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় না। নব্বই ও দু‘হাজার সালের প্রথম দশকে এখনকার ঝুড়ি ঝুড়ি রান করা ব্য়াটসম্য়ানরা ক্রিকেট খেললে, কেমন করে রান করতেন, তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন। অনেকে আবার বলেন, শোয়েবের মতো ওরম বোলারের সামনে পড়লে ক্য়াপ্টেন কোহলি কতটুকু আগ্রাসী মনোভাব দেখাতে পারতেন, সে নিয়েও তর্ক করা যায়। শচীন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষণরা এই কারণেই গ্রেট।
ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে শোয়েব আখতারের ওরকম হিংস্র বোলিংয়ের মুখে কোনওদিন পড়তে হয়নি। তবে, প্রতিপক্ষ হয়ে একই ম্য়াচে অংশ নিয়েছিলেন দু‘জনে। এশিয়া কাপের এক ম্য়াচে ডাম্বুলাতে শোয়েব যখন বল করছিলেন, সে সময় বিরাট নন-স্ট্রাইকিং এন্ডে ছিলেন। আখতার তখন তাঁর কেরিয়ারের পড়ন্ত বেলায়। কিন্তু, বিরাট তাঁকে এতটাই ভয় পেতেন যে তখনও শোয়েবকে দেখে বিভীষিকা মনে হয়েছিল তাঁর।
বিরাট বলছেন, ”আমাকে কোনওদিন শোয়েবের (বোলিংয়ের) সামনে পড়তে হয়নি। তবে, আমি ওকে ডাম্বুলাতে বল করতে দেখেছিলাম। তখন ওর কেরিয়ারের শেষ পর্ব চলছে। ওকে দেখে ঘাতক লেগেছিল আমার। শোয়েব আখাতারকে দেখার পর আমার মনে হয়েছিল, ও যখন ওর ফর্মের শিখরে ছিল, সে সময় আমি ক্রিকেট খেললে নন-স্ট্রাইকিং এন্ডেই থাকতে পছন্দ করতাম ওর বোলিং করার সময়।”
ক্রিকেট কেরিয়ারে ক্রিকেট গড শচীন তেন্ডুলকরের সঙ্গে আখতারের বেশ দ্বৈরথ তৈরি হতো যখনই দুই দেশ মুখোমুখি হওয়ার সামান্য়তম সুযোগ পেত। আর তা দেখার জন্য় দুই দেশের কেন, ক্রিকেট বিশ্বের বহু চোখ জোড়া তখন ব্য়স্ত থাকত টিভির পর্দায় তাক করে।
শোয়েব আখতার সম্পর্কে বিরাটের বক্তব্য় কোট করে বেশ কয়েক জায়গায় ট্য়ুইট ও রিট্য়ুইট হয়েছে। শোয়েবকে ট্য়াগ করে ট্য়ুইট হওয়ায় ব্য়াপারটি তাঁর গোচরেও এসেছে। বিরাটের মতো একজন বড় মাপের ব্য়াটসম্য়ানের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার পর প্রাক্তন পাকিস্তানি স্পিডস্টার পাল্টা সৌজন্য় দেখিয়ে ট্য়ুইট করেছেন, ”কোহলি যখন ব্য়াট করবে আমি বল না করতে পারলেই ভালো। ঠাট্টা-তামাশা, দূরে সরিয়ে রেখে বলছি, ও একজন বড় ব্য়াটসম্য়ান এবং ওর বিরুদ্ধে বল করতে পারলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠত।”
উল্লেখ্য়, শোয়েবকে তাঁর বলের গতির জন্য় রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস বলে ডাকা হতো। ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বল করার রেকর্ড বুকে শোয়েব নামও লেখা রয়েছে। একশো মাইলের গতি ছুঁয়ে ফেলা শোয়েবের সেই ডেলিভারি বিশ্ব ক্রিকেটের দ্বিতীয় দ্রুততম ডেলিভারি। যদিও, সে সময় ক্রিকেটে এত নিখুঁত আধুনিক প্রযুক্তি ছিল না। অনেকে বলেন, শোয়েবই নাকি বিশ্বের দ্রুততম বোলার ছিলেন। বর্তমানে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিও ব্য়াটসম্য়ান হিসেবে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। এক অপরের মুখোমুখি হলে, পাল্লা কোন দিকে ঝুঁকত, সেই তর্কে না গেলেও বলতেই হয়, শোয়েব ও বিরাট – দুই ভিন্ন প্রজন্মের ক্রিকেটার হলেও, দু‘জনেই নিজের সময়ের স্টার ক্রিকেটার।