একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ শতরানকারীর তালিকায় ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি এখন যুগ্মভাবে অস্ট্রেলিয়া দু‘বারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রিকি পন্টিং‘য়ের সঙ্গে দু‘নম্বরে। দু‘জনের সেঞ্চুরির সংখ্য়া এখন ত্রিশ। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খুব একটা বড় অঘটন না ঘটলে বিরাটের একত্রিশটি সেঞ্চুরি এখন শ্রেফ সময়ের অপেক্ষায়। তালিকায় সবার আগে ঊনপঞ্চাশটি সেঞ্চুরি নিয়ে রয়েছেন বিশ্বক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ব্য়াটসম্য়ান ক্রিকেটে গড শচীন তেন্ডুলকর। বিরাটের এখনও দু‘শো ম্য়াচও খেলা হয়নি, তার মধ্য়েই শচীনের সেঞ্চুরির মাইলফলকের অর্ধেকের বেশি রাস্তা পার করে ফেলেছেন। গত দু‘বছরে ভারত অধিনায়ক যে ফর্মে আছেন আর যেভাবে প্রত্য়েকটা সিরিজে গোটা দু-তিনেক সেঞ্চুরি করছেন, তাতে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, শচীনের ওই রেকর্ড বিরাট ভাঙবেনই। আর তা খুব তাড়াতাড়ি। তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, বিরাট ভারতের সর্বকালের সেরা ব্য়াটসম্য়ান। বিরাট গ্রেট নন, গ্রেটেস্ট। কিন্তু, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া টিমের অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক কিন্তু এযুক্তি একেবারেই মানতে চান না। বিরাট কোনওভাবেই গ্রেট নন। একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্য়মকে সাক্ষাৎকার দিয়ে গিয়ে প্রাক্তন অজি দলনায়ক বলেন, ”শচীনকে গ্রেটেস্ট বলা যায়। বিরাটকে কখনই বলা যায় না। ও এখনও তরুণ ক্রিকেটার। একদিনের ক্রিকেটে ওর পরিসংখ্য়ান অবিশ্বাস্য়। তিরিশটা সেঞ্চুরি করা মুখের কথা নয়। তবে, শচীনের সঙ্গে বিরাটের তুলনা টানা যায় না। বিরাট যখন ওর গ্লভস জোড়া তুলে রাখবে, তখন ওর তুলনা করে দেখতে পারেন শচীনের সঙ্গে। এখন নয়। বিরাট এটা নিয়ে ভাবছে বলে আমার মনে হয় না। শচীনও এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। শচীন লেজেন্ড, ব্রায়ান লারা লেজেন্ড। বিরাট ওর ভবিতব্য় নিজে গড়বে।”
ক্রিকেট কেরিয়ারে দুই প্রজন্মের ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল ক্লার্কের। বিরাটের ভারতীয় দল কি বিদেশের মাটিতে ম্য়াচ জেতার ক্ষেত্রে অতীতে ভারতীয় দলগুলির থেকে বেশি মাত্রায় সক্ষম? এই প্রশ্নের উত্তরে ক্লার্ক বলেন, ”আবার বলব, তুলনা টানা ঠিক নয়। আগের দলটাও অসাধারণ ছিল। আমি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন গাঙ্গুলি, সেহওয়াগ, দ্রাবিড়, তেন্ডুলকর, লক্ষ্মণ, কুম্বলে, হরভজন, জাহির, জাভাগালের মতো ক্রিকেটাররা খেলত। তাই তুলনা টানলে ওদের অপমান করা হবে। ওই দলটা অসাধারণ ছিল। ভারতীয় ক্রিকেটের আমূল পরিবর্তনে সৌরভের অনেক বড় হাত ছিল। সৌরভের মধ্য়ে যে আগ্রাসী মনোভাব ছিল, বিরাটের অধিনায়কত্বেও সেই ভাবটা রয়েছে।”
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু‘ম্য়াচের টেস্ট সিরিজ খেলে ভারতে এসেছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিম। চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে সমতা ফেরানোর আগে ঢাকা টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল। তবে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের প্রভাব ভারতের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের সিরিজের ওপর পড়বে না বলে মনে করেন ক্লার্ক। ”বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ না জেতা ব্য়াপারটা হতাশজনক। তবে, দ্বিতীয় টেস্টের জয় থেকে ইতিবাচক অনুপ্রেরণা নেওয়ার কথা। উপমহাদেশের গরম পরিবেশে দলটা এখন মানিয়ে নিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে জিতলে বছর শেষের আগে একদিনের ক্রিকেটে এক নম্বর স্থানটা দখল করার একটা সুযোগ রয়েছে। দেশে ফেরার আগে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও বাড়বে তাহলে।”
আগামী দিনে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্য়ৎ নিয়ে বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বলেন, ”টেস্ট ক্রিকেটই আসল চ্য়ালেঞ্জ। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে টেস্ট জেতা। টেস্টের আসরে ভারত এক নম্বর দল এখন। তবে, এবার ওদের দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকের বিরুদ্ধে, ইংল্য়ান্ডে গিয়ে ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে এবং অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে হবে। যদি ওখানেও একইরকম দাপট দেখাতে পারে, তাহলে সত্য়িই সত্য়িই ভারত টেস্টের আসরে এক নম্বর দল হওয়ার যোগ্য়। ঘরের মাটিতে তো জিততেই হবে, তবে বিশ্বের সেরা দল তারাই, যারা বিদেশের মাটিতে যে কোনও পরিস্থিতি জয় ছিনিয়ে নেওয়ার রাস্তা খুঁজে নেয়। আমি যখন ক্রিকেট খেলতাম, সেই সময় আমাদের অস্ট্রেলিয়া দলটাও সেরকম ছিল। ওই দলের অঙ্গ হতে পেরেছিলাম বলে সবসময় গর্ব অনুভব করি।”