পাঁচ ক্রিকেটার, যারা একটি আইপিএল খেলেই হিরো মর্যাদা পাওয়ার পর হারিয়ে গেছেন

ভারতের ঘরোয়া টি২০ প্রফেশনাল লিগ আইপিএল বাস্তবিক অর্থেই তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের তাদের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটানোর জন্য আদর্শ মঞ্চ। কিছু কিছু ক্রিকেটারদের কাছে আইপিএল সাফল্যের রূপকথা লিখে জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয় তাদের জন্য, আবার কিছু কিছু ক্রিকেট প্রতিভা সঠিক প্রদর্শনের অভাবে ব্যর্থ হন এই বড় মঞ্চে। দেশী বিদেশি সমস্ত ক্রিকেটারদের কাছে সব অর্থেই এই ক্রিকেট টি২০ লিগ রূপকথার গল্প হয়ে দেখা দেয়। এখনও পর্যন্ত ১০ বছর পূর্ণ করে ফেলেছে ভারতের এই পেশাদার ক্রিকেট লিগ। বছরের পর বছর ধরে সাফল্য আসায় এই মুহুর্তে বিশ্বের সব থেকে সেরা এবং আকর্ষণীয় ক্রিকেট লিগে পর্যবসিত হয়েছে আইপিএল। অন্যদিকে এই প্রতিযোগিতায় এমন কিছু ক্রিকেটারদেরও দেখা গিয়েছে যারা এই বিশাল মঞ্চে অসাধারণভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েও পরবর্তীকালে হারিয়ে গিয়েছেন ব্যর্থতার অন্ধকূপে। এই প্লেয়াররা এমনকী তাদের সংশ্লিষ্ট ফ্রেঞ্চাইজিত খেতাব জেতার সাফল্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা হারিয়ে গিয়েছে ক্রিকেট থেকেই। এমনই পাঁচ প্লেয়ারের দিকে একবার চোখ রাখা যাক।

পাঁচ ক্রিকেটার, যারা একটি আইপিএল খেলেই হিরো মর্যাদা পাওয়ার পর হারিয়ে গেছেন 1

৫– স্বপ্নিল আসনোদকর

পাঁচ ক্রিকেটার, যারা একটি আইপিএল খেলেই হিরো মর্যাদা পাওয়ার পর হারিয়ে গেছেন 2

গোয়াজাত ক্রিকেটার স্বপ্নিল আসনোদকর ২০০৮ এ প্রথম মরশুমেই রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তার খেলা একটি মাত্র আইপিএল মরশুমে স্বপ্নিন ৩৩১ রান করেছিলেন রাজস্থানের হয়ে। সেই সঙ্গে রাজস্থানকে আইপিএলের প্রথম এবং একমাত্র খেতাব জেতাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন স্বপ্নিল। তবে এর পরই দূর্ভাগ্যবশত এই ক্রিকেটার পরের মরশুমে নিজের ফর্ম ধরে রাখতে পারেন নি। এবং রাজস্থানের হয়ে পরের মরশুমে ১১টি ম্যাচ খেলে তিনি ১১২ রান করেন। এখনও পর্যন্ত আইপিএল ২০টি ম্যাচ খেলে ডানহাতি ব্যাটসম্যান স্বপ্নিল ৪২৩ রান করেন ২১.১৫ গড়ে। এই গোয়ানিজ ক্রিকেটার আইপিএলে তার শেষ ম্যাচ খেলেন ২০১১য় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে এই সম্ভবনাময় ব্যাটসম্যান জাতীয় দলেও জায়গা পেতে ব্যর্থ হন এবং ধারাবাহিক খারাপ ফর্মের কারণে ক্রিকেট থেকেও হারিয়ে যান।

৪–পল বালথাটি

পাঁচ ক্রিকেটার, যারা একটি আইপিএল খেলেই হিরো মর্যাদা পাওয়ার পর হারিয়ে গেছেন 3

২০০৯ এ কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে আইপিএলের দ্বিতীয় সংস্করণে অভিষেক হয় পল বালথাটির। কিন্তু নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে তিনি প্রথম লাইম লাইটে আসেন ২০১১ র আইপিএলে। জেদি মনোভাবাপন্ন বালথাটি আইপিএলের চতুর্থ সংস্করণে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে ৪৬৩ রান করেন। কিন্তু পরের দিকে আহত হওয়ায় কারণে তিনি তার এই স্বপ্নের ফর্ম ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। পাঞ্জাবের এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ২৩টি আইপিএল ম্যাচে ২2. ৯৫ গড় নিয়ে ৫০৫ রান করেন। শুধু তাই নয় আইপিএলে একটি সেঞ্চুরিও করেন বালথাটি। তার ৬৩ বলে ১২০ রানের ইনিংসে ভর করেই পাঞ্জাব দুবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়েছিল। আইপিএলে তাকে শেষ খেলতে দেখা যায় ২০১৩ মরশুমে।

৩– মানবিন্দর বিসলা

পাঁচ ক্রিকেটার, যারা একটি আইপিএল খেলেই হিরো মর্যাদা পাওয়ার পর হারিয়ে গেছেন 4

মনবিন্দর বিসলা আইপিএলে বিখ্যাত হয়ে আছেন ২০১২ মরশুমের ফাইনালে তার ৪৮ বলে ৮৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংসের জন্য। ওই মরশুমে ফাইনাল ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের ১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। মূলত বিসলার এই ইনিংসই কলকাতার জন্য চেন্নাইয়ের ওই বিশাল রান তাড়া করার কাজটি সহজ করে দেয়। সেই সঙ্গে নাইটদের আইপিএলের প্রথম খেতাবও এনে দেয় ফাইনালে বিসলার ওই ইনিংসটি। তার ওই ইনিংসের জন্যই ফাইনালে ম্যান অফ দ্য মাচের পুরস্কারও পান তিনি। এখনও পর্যন্ত এই উইকেটকীপার ব্যাটসম্যান ৩৯টি আইপিএল ম্যাচ খেলে ৭৯৮ রান করেন ২১ গড় নিয়ে।

২–যোগিন্দর শর্মা

পাঁচ ক্রিকেটার, যারা একটি আইপিএল খেলেই হিরো মর্যাদা পাওয়ার পর হারিয়ে গেছেন 5

যোগিন্দর শর্মাকে সকলেই মনে রেখেছেন ২০০৭ এ প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ ওভারে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে দুরন্ত বোলিংয়ের কারণে। ভারতকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়ায় লাইম লাইটে আসা যোগিন্দরকে তুলে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। আইপিএলে চেন্নাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করে যোগিন্দর ১৬টি ম্যাচে মোট ১২টি উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৬টি ইনিংসে ব্যাট হাতে ৩৬ রানও করেন। কিন্তু ২০১১য় একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন এই অলরাউন্ডার। বর্তমানে তিনি হরিয়ানা পুলিশের ডিএসপি পদে কর্মরত।

১–কামরান খান

পাঁচ ক্রিকেটার, যারা একটি আইপিএল খেলেই হিরো মর্যাদা পাওয়ার পর হারিয়ে গেছেন 6

শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলতে আসার জন্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে কামরান খানকে। উত্তর প্রদেশের একটি অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে উঠে এসে আইপিএলে মঞ্চে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন এই জোরে বোলার। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তার বাবা জঙ্গলে কাঠ কাটতেন। আইপিএল মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করে রাজস্থানের হয়ে ৯টি ম্যাচে অংশ নেন তিনি। নিজের সংক্ষিপ্ত আইপিএল কেরিয়ারে ভীষণই প্রভাবশালী পারফর্মেন্স করা কামরান ইচ্ছেমত উইকেট নেওয়ায় পারদর্শী ছিলেন। প্রসঙ্গত জীবনে একটাও প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে অংশ নেন নি এই জোরে বোলার। তা সত্ত্বেও তিনি সুযোগ পান আইপিএলে। যদিও তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ ওঠায় ক্রিকেট জীবনই শেষ হয়ে যায় এই জোরে বোলারের।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *