ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে আইপিএলের একাদশ সংস্করণের প্রথম ম্যাচেই চির প্রতিদ্বন্ধী মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স এবং চেন্নাই সুপার কিংসের লড়াইয়ে। চিরকালই টস ভাগ্য ভালো অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির। সেই প্রথা মেনেই প্রথম ম্যাচেই টসে জিতে ঘরের দল মুম্বাই কে ব্যাট করতে পাঠান ক্যাপ্টেন কুল। শুরুটা ভালো হয়নি গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের। শুরুতেই তাদের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং এভিন লুইস ফিরে যান সাজঘরে। শুরুটা ভালো না হলেও এরপর মুম্বাইয়ের ইনিংসের হাল ধরে সূর্যকুমার যাদব। শুরুয়াতি বিপর্যয় থেকে মুম্বাইকে উদ্ধার করে তিনি মুম্বাইকে পৌঁছে দেন বড়ো স্কোরের দিকে। বেশ কিছু দুর্দান্ত শট করে ব্যক্তিগত ৪৩ রানের মাথায় আউট হন তিনি। রানের গতি বাড়াতে গিয়েই বড় শট খেলার খেসারত দিতে হয় তাকে সহজ ক্যাচ দিয়ে। মুম্বাইয়ের পরের দিকে দ্রুত রান তোলেন ক্রুণাল পাণ্ডিয়া। প্রথম বল থেকেই বাউন্ডারি মারতে শুরু করে ক্রুণাল পাঁচটি চার এবং দুটি ছক্কার সাহায্যে ২২ বলে ৪১ রান করেন।
অন্যদিকে হার্দিক পান্ডিয়াকে প্রথম থেকেই সংঘর্ষ করতে দেখা যায় রান করার ক্ষেত্রে। গোটা দুয়েক বাউন্ডারিরি সাহায্যে তিনি ২০ বলে ২২ রান করেন। কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে পায়ে চোট লাগে তার। যদিও তার খেসারত দিতে হয় নি মুম্বাইকে। চেন্নাইয়ের ব্যাট করতে নামার আগেই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।
অন্যদিকে কঠিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আম্বাতি রায়ডু এবং শেন ওয়াটশন ভালো শুরু করলেও, চেন্নাইয়ের স্কোরবোর্ডে ২৭ রান ওঠার পরই দ্রুতই শেন ওয়াটসনের উইকেট হারিয়ে ফেলেন তারা। মুম্বা ইয়ের অলরাউন্ডার হার্দিক শেন ওয়াটসনের রূপে মুম্বাইকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন। এর কিছু পরেই ফের পান্ডিয়াই সুরেশ রায়নাকে ফিরিয়ে দিয়ে চাপে ফেলেন চেন্নাইকে। অন্যদিক থেকেও তরুণ লেগ স্পিনার ময়ঙ্ক মারকান্ডেও তার প্রথম ম্যাচে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে একটি দুর্দান্ত লেগব্রেকে ফিরিয়ে দেন রায়ডুকে।
কিন্তু এই তরুণ লেগস্পিনার তার দ্বিতীয় উইকেট নিতে ব্যর্থ হন তার বলে কেদার যাদব আউট হওয়া সত্ত্বেও, কারণ এক্ষেত্রে রিভিউ নিতে অস্বীকৃত হন মুম্বাইয়ের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু যদিও ভালো বল করার পুরস্কার হিসেবে এর কিছু পরেই ধোনির উইকেট পেয়ে যান তিনি। মারকান্ডের দ্রুত আসা একটি বলে বিভ্রান্ত হয়ে যান ধোনি। অ্যাম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ চান ধোনি। কিন্তু রিভিউর ফলাফল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের পক্ষেই যায়। এই ম্যাচ কখনও চেন্নাইয়ের দখলে ছিল না। নিয়িমিত অন্তরালে তারা উইকেট হারাতে থাকে। দীপক চাঁচড়ের উইকেট নিয়ে প্রথম ম্যাচের দুর্দান্ত বোলিং ফিগার দাঁড়ায় মারকান্ডের ৩/২৪। অন্যদিকের নিজের প্রথম স্পেলে বল করতে এসে রবীন্দ্র জাদেজা এবং মিচেল ম্যাকলেঘনকে তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেও সাফল্য পান তিনি। তুলে নেন হরভজন সিংয়ের উইকেট। শেষ দিকে চেন্নাইয়ের দিকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার ডোয়েন ব্রাভো।
৭টি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ৩০ বলে ৬৮ রানের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। ১৯ তম ওভারে ব্র্যাভো পরপর তিনটি ছক্কা হাঁকানোয়, শেষ ওভারে লক্ষ্য মাত্রা দাঁড়ায় ৭ রানের। যদিও ওই ওভারের শেষ বলে ব্র্যাভো আউট হওয়ায় ফের ম্যাচ ঝুঁকে যায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের দিকে। অন্যদিকে এরপরই ব্যাট করতে নামেন চেন্নাইয়ের রিটায়ার্ড হার্ট ব্যাটসম্যান কেদার যাদব। শেষ ওভারের প্রথম তিনটি বল মিস করেন তিনি। চতুর্থ বলে ফাইন লেগের উপর দিয়ে দুর্দান্ত একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। এরপর একবল বাকি থাকতেই পঞ্চম বলে দুর্দান্ত একটি কভার ড্রাইভে চেন্নাইকে জয় এনে দেন তিনি। নিঃসন্দেহে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান ব্র্যাভো।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী সমারোহে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক ধোনি তার বক্তব্যে যা বললেন:
“ওরা প্রতিযোগিতাটা মিস করে ফেলল বলে আমার মনে হয়। আইপিএলে সিএসকে বনাম মুম্বাই এমন একটা ম্যাচ যা দেখার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। এই আইপিএলে আমরা দু বছর পর ফিরে এসেছি তার কারণ মানুষ আমাদের খেলতে দেখতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। খুব বাস্তববাদী একজন মানুষ আমি। তাই ড্রেসিংরুমে বসে আমি ভাবছিলাম যে হয়ত আমাদের হারের ব্যবধানটা খুব বেশি হবে না। তবে ব্র্যাভো যেভাবে ব্যাট করল, তাতে ওকে দায়িত্ব নিতে দেখে দারুণ অনুভূতি হল। আমি মনে করিনা যে একটা দল হিসেবে আমরা খুব ভালো ব্যাট করেছি। কিন্তু যেহেতু এটা প্রথম ম্যাচ, তাই আমরা এই ম্যাচে আমাদের পজিটিভ দিকগুলির দিকেই ধ্যান দেব। যে ধরনের প্লেয়ার আমাদের হাতে রয়েছে তাতে তাদের নির্বাচনটাও নির্ভর করবে তাদের সক্ষমতার উপরে। এখনও অনেক কিছুর উপরেই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে”।