ভদ্র লোকের খেলা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচকেই বলা হয়ে থাকে মর্যাদা রক্ষার ম্যাচ। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর অভিষেক টেস্ট ম্যাচটিতে টাইগারদের মুখোমুখি হয় ভারত। যদিও পরিপক্ক ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহই পেয়েছিল অভিষিক্ত বাংলাদেশ তবে ম্যাচের ফলাফল যায় ভারতের পক্ষে।
অন্যদিকে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পাঁচ বছর পর বাংলাদেশ দল নিজেদের ৩৫ তম টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়ের দেখা পায়। যে ম্যাচে ব্যাট হাতে জাবেদ ওমর, হাবিবুল বাশার, রাজিন সালেহদের পাশাপাশি বল হাতে অবদান রেখেছিলেন সাবেক দুই স্পিনার মোহাম্মদ রফিক, এনামুল হক এবং বর্তমান ওয়ানডে কাপ্তান মাশরাফি মুর্তজা।
প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়ের পার হয়ে গেছে প্রায় তেরো বছর। এই তেরো বছরে আরো বহুল সংখ্যক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যাদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে প্রথম জয় পেয়েছিল টাইগাররা সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ৩ নভেম্বর ঘরের মাঠ সিলেটে আবারও সাদা পোশাকে মাঠে নামতে যাচ্ছে টাইগাররা।
এবার দেখে নেয়া যাক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত টেস্টে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা তিন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের তালিকা।
৩। ইমরুল কায়েস
টেস্ট দলে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত পারফরম্যান্স করে গেলেও ওয়ানডেতে নিজেকে কেমন জানি ঠিক মেলে ধরতে পারছিলেন না ইমরুল। টেস্টের পাশাপাশি ওয়ানডেতেও কতটা আক্রমণাত্মক রূপ ধারণ করতে পারেন ইমরুল সেটাই টাইগার ভক্তরা দেখেছেন জিম্বাবুয়ের সাথে ওয়ানডে সিরিজে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে দুই দল বর্তমানে রয়েছে চায়ের দেশ সিলেটে। আর দলের সাথে এবারও ব্যাগ পেছনে নিয়ে সাথে আছেন ইমরুল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে ইমরুল অবশ্যই একটু স্মৃতি রোমন্থন করতে চাইবেন ২০১৪ সালের চিটাগাং টেস্টের দিকে। কেননা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে ওপেনিংয়ে নেমে কায়েস যে খেলেছিলেন ১৩০ রানের ঝলমলে ইনিংস।
মাসাকাদজাদের বিপক্ষে বিপক্ষে ২০১৪ সালের ঐ টেস্ট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে তামিমের যোগ্য সঙ্গ পেয়ে এদিন উদ্বোধনী জুটিতে দুই ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ২২৪ রান। তামিম ব্যক্তিগত ১০৯ রানে আউট হলেও মুমিনুলকে নিয়ে স্কোরবোর্ডে আরও ৪৮ রান যোগ করেন ইমরুল। ইমরুল শেষ পর্যন্ত আউট হন ব্যক্তিগত ১৩০ রানে যেখানে ছিল ১২টি চার এবং দুইটি ছক্কার মার। আর তাঁর এই ইনিংসটি তালিকার তৃতীয় স্থানে জায়গা করে দিয়েছে তাঁকে।
২। মুমিনুল হক
২০১৪ সালে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে ইমরুলের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে আরও একটি রেকর্ড গড়েন টেস্ট দলের নিয়মিত মুখ মুমিনুল। ওপেনিং জুটি দলীয় ২২২ রানে বিচ্ছিন্ন হবার পর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ছোট ছোট সংগ্রহে ৫০৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ দল।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দল ব্যাটিং করতে নেমে মাত্র ৩৬ রানে প্রথম উইকেটের পতন ঘটলে ব্যাট হাতে মাঠে নামেন মুমিনুল হক সৌরভ। সাগরিকার উইকেটে দলের হাল ধরেন এই লিটল মাস্টার। শেষ পর্যন্ত পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ যখন তাদের ইনিংস ঘোষণা করে ৩১৯ রানে ততক্ষণে এই ইনিংসের অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুমিনুল ১৮৯ বলে ১৩টি চারের সাহায্যে নিজের নামের পাশে লিখিয়ে নেন ১৩১ রান। যা এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে দিয়েছে তাঁকে।
১। সাকিব আল হাসান
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় ও বর্তমানে টেস্ট এবং টি-২০ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নাম রয়েছে তালিকার প্রথম স্থানে। দুই এবং তিন নম্বর স্থানে থাকা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা দুই ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস এবং মুমিনুল হকের রেকর্ড গড়া হয়েছে যে সিরিজে একই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডটি রয়েছে সাকিব আল হাসনের পকেটে।
তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুই দল। টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলে উদ্বোধনী জুটিতে তামিমের সাথে আসেন সামসুর রহমান শুভ। ব্যক্তিগত দুই রানে শুভ ফিরে গেলে মুমিনুলকে নিয়ে ছোট পার্টনারশিপ করেন তামিম। তবে মুমিনুল ব্যক্তিগত ৩৫ এবং মাহমুদউল্লাহ ৫৬ রানে আউট হয়ে মাঠ ছাড়লে ক্রিজে আসেন টেস্টের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। দেখে শুনে শুরু করা সাকিব এদিন ১৮০ বল মোকাবেলা করে ১৮টি চার এবং দুইটি ছক্কার সাহায্যে করেন ১৩৭ রান। যা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
-আব্দুর রহমান