”যদি পারো, তাহলে তীব্র গতিতে দৌড়ও। যদি না পারো, তাহলে দৌড়ও। দৌড়তে না পারলে? তাহলে জগিং করো। জগিং না পারলে? তাহলে অন্তত হাঁটো। হাঁটতে না পারলে? তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো। কিন্তু, কথা হলো, তোমাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতেই হবে। এক জায়গায় থেমে গেলে হবে না।” বুধবার (পয়লা নভেম্বর) আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্য়াচ। তার একদিন আগে এই কথা বললেন আশিস নেহরা।
আঠারো বছরেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক আঙিনায় কাটিয়ে দেওয়ার পর নেহরা নামের পাশে মোটে ১৬৩টি আন্তর্জাতিক ম্য়াচ খেলার নজির। তাও তিন ধরণের ফরম্য়াট মিলিয়ে। নিঃসন্দেহে এত লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক আসরে থেকে এই ক‘টা ম্য়াচের পরিসংখ্য়ান মোটেই বড়াই করার মতো নয়। কিন্তু, এছাড়া যে আর কিছু করার ছিল না। শরীরটাই যে সঙ্গ দেয়নি। বারোবার অপারেশন টেবিলে শোয়ার পরও, ২০১৭ সালেও তাঁকে জাতীয় দলে দেখা যাচ্ছে, তার একটাই কারণ মনের জোর আর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা। সত্য়ি কথা বলতে, নেহরাকে দেখে অনেক বড়বড় ক্রিকেটারও অবাক হন। যে ধরণের প্রতিভা তাঁর মধ্য়ে ছিল, তাতে অনেক বড় মাপের বোলার হতে পারতেন। আর এত চোট-আঘাতের পরও একজন ফাস্ট বোলার হয়েও আটত্রিশ বছর বযসে জাতীয় দলে কামব্য়াক করা সোজা কথা নয়।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দিল্লি সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশের নয়ডা‘র এক অ্য়াকাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে এক সংবাদ সরবরাহকারী সংস্থাকে নেহরা বলেন, ”বিশ্বাস করুন, গত কুড়ি বছর বেশ ভালোই কেটেছে – আমি বলব। আমি খুব একটা আবেগপ্রবণ মানুষ নই। এবার আমার জীবনের পরবর্তী কুড়িটা বছর কাটাতে হবে। আশা করি, একই রকমভাবে নানান ঘটনার মধ্য়ে দিয়ে কাটবে। ১৯৯৭ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম দিল্লির হয়ে।” এই বাঁ-হাতি পেস বোলারটি এরপর বলেন, ”মাঝের এই সফরটা ভালো কাটল। হয়ত একটা খেদ রয়ে গেলো মনে। কুড়ি বছরের ক্রিকেট জীবনে যদি কিছু পরিবর্তন করতে পারতাম, তাহলে ২০০৩ সালে জোহানেসবার্গের সেই দুপুরটা বদলে দিতাম। বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্য়াচটা। কিন্তু, ভাগ্য়ে যেটা থাকে, সেটাই হয়।”
পুরনো দিনের স্মৃতি উস্কে দিয়ে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে দিল্লির বিখ্য়াত সনেট ক্লাবে যাওয়ার কথা বলতে বলতে কোটলা ময়দানে তাঁর জীবনের প্রথম ম্য়াচ রঞ্জি ম্য়াচ খেলার কথা বলেন নেহরা। প্রয়াত রামন লাম্বা ছাড়াও অজয় শর্মা, অতুল ওয়াসন, রবিন সিং জুনিয়রদের নাম নেন তিনি। বিশেষ করে ফিল্ডিং করতে গিয়ে মাথায় বল লেগে লাম্বার অকাল মৃত্য়ুর স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি নেহরা। কথা বলতে বলতে বলে বসলেন, ”দাদা প্লেয়ার থা (ক্রিকেটীয় ভাষায় এর অর্থ, খুব জোরদার ব্য়াটসম্য়ান ছিল)।”

বর্তমান ভারতীয় দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির প্রশংসা করতে করতে হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর প্রসঙ্গ চলে আসে। এব্য়াপারে নেহরা বেশ রক্ষণাত্মক, ”রবির সবচেয়ে ভালো দিক কি জানেন! যদি কারও ব্য়াড প্য়াচ চলে, তাহলে ওকে দরকার। কেউ যদি একটা বলও ব্য়াটের মাঝখান দিয়ে ঠিকমতো মারতেও না পারে, রবি তাকে এমনভাবে গাইড করবে, যে সে নিজেকে ব্রায়ান লারা মনে করবে। কেউ কেউ হাসবেন। কিন্তু, ক্রিকেটে এটাই ম্য়ান-ম্য়ানেজমেন্ট।”
কুম্বলে বিতর্কে বিরাটের পাশে দাঁড়িয়েছেন নেহরা। নাম না করেই ভারতের পূর্বতন হেড কোচ সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য়, ”ধরুন একজন কোচ রাখা হয়েছে দলে, তার বয়স পঞ্চাশ বছর। আর উল্টোদিকে অধিনায়কের বয়স আটাশ বছর। তখন কোচের দায়িত্ব হলো, আটাশ বছরের অধিনায়কের মানসিকতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। অন্য় রাস্তা খোঁজা নয়। কারণ, অন্য় রাস্তা কখনই কাজে আসবে না।”
ভবিষ্য়তে কি ভারতীয় দলের বোলিং কোচ হিসেবে আশিস নেহরাকে দেখা যাবে?
”এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও পরিকল্পনা নেই। হ্য়াঁ, তবে কোচিং করানো বা ধারা ভাষ্য়কারের কাজ করার ইচ্ছা আছে অবসর নেওয়ার পর। কিন্তু, জাতীয় দলে কোচ হয়ে আসা…২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত তেমন কোনও ভাবনা নেই। তারপরে কি হয়, তখন দেখা যাবে!”
ডারবানে ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ৬/২৩
২০০৩ বিশ্বকাপে আশিস নেহরার সেই বোলিং, এখনও ক্রিকেটপ্রেমীরা সুযোগ পেলেই বলে ওঠেন। কিন্তু, বোলার নেহরাকে কি শুধু ওই একটা ম্য়াচের জন্য়ই মনে রাখবে মানুষ? সেসম্পর্কে দিল্লির এই বোলারটি বলেন, ”যে কোনও খেলা ব্য়াপারটাই তাই। মুহূর্তের ব্য়াপার। লোকে আমায় নিয়ে সেই রাতটা মনে রেখেছে। আমি চাইব, ক্রিকেট অনুরাগীরা আমাকে একজন এমন ক্রিকেটার হিসেবে মনে রাখুক, যে চেষ্টা করত। এক অ্য়ায়সা শকস জিসনে সিখকে নহি খেলা, খেলকে সিখা।”