কুম্বলেকে প্রাপ্য় সম্মান দেওয়া হয়নি, বললেন দ্রাবিড় 1

বিরাট কোহলি-অনিল কুম্বলে বিরোধ বিতর্ক পাঁচ মাসের পুরনো হতে চললেও, এখনও ছাইচাপা আগুনের মতো জ্বলছে। কুম্বলের মতো একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভারতীয় দলের হেড কোচ হয়েছিলেন। সেই তিনি যেভাবে দলনেতার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে নিজের পদ ছেড়ে দিলেন কাউকে কোনও কিছু না জানিয়ে – এবিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিসিসিআই কোনও ব্য়াখ্য়াই সংবাদমাধ্য়মকে দেয়নি ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সবাই মুখে কুলুপ এঁটে আছেন। মাঝে ভারতীয় টেস্ট দলের উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা কিছু মন্তব্য় করেন বিরাটের বারন করে দেওয়া সত্ত্বেও। তারপর প্রাক্তন ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সেহওয়াগ কুম্বলে প্রসঙ্গে তাঁর মত রেখেছিলেন। কিন্তু, ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় যা বললেন, তাতে ভারতীয় বোর্ডকে  আরও একবার ভাবনা-চিন্তা করতে হবে এবিষয়ে। কারণ, ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে সত্য়িটা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখতে হবে, অনিল কুম্বলে কোনও এলেবেলে নাম নয়। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক হওয়ার পাশাপাশি তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক (টেস্ট ও একদিনের আসরে)।

চ্য়াম্পিয়ন ট্রফির ফাইনালে ভারতের হারের পরই হেড কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন কুম্বলে, বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দল তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পথে। ক্য়ারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে পা দেওয়ার পর তাঁরা জানতে পারেন, কুম্বল ইস্তফা দিয়েছেন। ঘুরপথে জানা যায়, বিরাট বিরোধিতাকে এতটা চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যে সেদিন ফাইনালে কুম্বলে প্রথমে ব্য়াটিং নিতে বললেও, বিরাট ফিল্ডিং নেন তাঁর পরামর্শকে উপেক্ষা করে। ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে কুম্বলে সরে দাঁড়ান ভবিষ্য়তে এধরণের পরিস্থিতি এড়াতে।

একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্য়মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলে কুম্বলের এক সময়কার বহুদিনের সতীর্থ দ্রাবিড় এপ্রসঙ্গে বলেন, যা ঘটনা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্য়জনক। অনিলের সঙ্গে অনুচিত ব্য়বহার করা হয়েছে। যা ঘটনা ঘটেছে, তা বন্ধ দরজার পিছনে ঘটেছে। ফলে, এনিয়ে আমার মন্তব্য় রাখতে চাইছি না। তবে, যা ঘটেছে, সত্য়িই দুর্ভাগ্য়জনক ব্য়াপার। বিশেষ করে নামটা অনিল কুম্বলে বলে। ও একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। ও এমন একজন ক্রিকেটার যে ভারতীয় দলকে টেস্ট ক্রিকেটে জয়ে অন্য়ান্য়দের থেকে অনেক বেশি অবদান রেখেছে। তাছাড়া একবছরে কোচ হিসেবে ভারতীয় দলের সফলতাও রয়েছে অনিলের।

২০১৬ সালের জুন মাসে ভারতীয় দলের হেড কোচ নিযুক্ত হয়েছিলেন জাম্বো। কুম্বলে জমানায় কোহলির ভারত টানা পাঁচটি টেস্ট সিরিজ জিতেছে। এছাড়া নিউজিল্য়ান্ড ও ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ জয়। চলতি বছরের জুনে চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালেও ওঠে ভারত।

 

মত পার্থক্য় ও কুম্বলে জমানার অবসান

বিসিসিআইকে দেওয়া চিঠিতে কুম্বলে ইস্তফা দিতে গিয়ে লেখেন, আমি গতকালই জানতে পারি, দলনায়ক আমার কোচিং স্টাইল নিয়ে বোর্ডের কাছে আপত্তি জানিয়েছে। বিসিসিআইকে অধিনায়ক এই কথাও জানিয়েছে, কোচ হিসেবে আমার কাজ করে যাওয়ার ব্য়াপারেও। আমি এতে আশ্চর্য হয়েছি। আমি সবসময় কোচ এবং অধিনায়কের কর্মের মধ্য়ে যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাকে আমি সম্মান করতাম এতদিন।

যদিও বিসিসিআই উদ্য়োদ নিয়েছিল, অধিনায়ক ও আমার মধ্য়ে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে। কিন্তু, একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া আর সম্ভব নয়। তাই আমার মনে হয়েছে, আমার সরে দাঁড়ানোই সঠিক কাজ হবে।

পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা, দায়বদ্ধতা, সততা, পরিপূরক দক্ষতা এবং ভিন্ন মতাদর্শের মতো বৈশিষ্ট্য় আমি সবার সামনে আনার চেষ্টা করেছিলাম। পার্টনারশিপ গড়ে তুলে গেলে এগুলিকে মূল্য় দিতে হয়। আমি মনে করি, কোচের কাজ হলো, দলের স্বার্থে আয়নার সামনে সবাইকে দাঁড় করিয়ে তাদের আরও উন্নতি করতে চালিত করা।

এই যে আপত্তি জানানো হয়েছে, তাতে আমি বিশ্বাস করি, আমার উচিত সিএসি বা বিসিসিআইয়ের হাতে ফের ক্ষমতাটা ফিরিয়ে দিই, যার হাতে দেওয়া এটা উপযোগী হবে।

উল্লেখ্য়, ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ পর্বে কুম্বলে ভারত অধিনায়ক থাকাকালীন ১৪টি টিস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর মধ্য়ে তিনটিতে ভারত জেতে এবং পাঁচটিতে ভারত হারে, ছটি টেস্ট ড্র হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *