লোধা কমিটির সুপারিশ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে এখন যেন জুজুর মতো। বোর্ডের শাঁসালো পদ আঁকড়ে থাকা তাবড় তাবড় প্রশাসককে সরে যেতে হয়েছে এর কারণে। পোড় খাওয়া প্রশাসক অনুরাগ ঠাকুরও রেহাই পাননি। স্বার্থ-সংঘাতের প্রশ্ন টেনে এনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে বরখাস্ত করে বিসিসিআই’য়ের সভাপতি পদ থেকে। ভারতীয় ক্রিকেট মহলে লোধা কমিটির সুপারিশ বেশ মাথা-ব্য়াথার কারণ পদে থাকা প্রশাসকদের। কার বিরুদ্ধে কখন যে কে স্বার্থের-সংঘাতের প্রশ্ন টেনে আনবেন বা অস্বচ্ছ বলে বসবেন, তা কেউ জানেন না। এবার ওই কমিটির সুপারিশ বলা নিয়ম-নীতির মতো ফাঁস সৌরভ গাঙ্গুলির গলায় বসতে চলেছে।
ক্রিকেটার হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলি কতটা বড় ছিলেন, সে নিয়ে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেন না। কিন্তু, ক্রিকেট মাঠের বাইরে দাদার প্রশংসকের অভাব রয়েছে। ২০১৫ সালে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্য়াসোসিয়েশনের সভাপতি হওয়ার পর, সৌরভকে ওই পদে অনেকেই দেখতে চাননি। সিএবি’তে এখনও সৌরভ বিরোধী লবি রয়েছে, যারা সুযোগ পেলেই ফোঁস করে ওঠে। ইদানিং বাংলা ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার অন্দরে সৌরভ বিরোধী লবি ফের সক্রিয় উঠেছে, তাঁকে সভাপতি পদ থেকে তাড়ানোর জন্য।
সিএবি’র প্রাক্তন যুগ্ম-সচিব সুবীর গাঙ্গুলি সৌরভকে চিঠি লিখে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছেন, লোধা কমিটির সুপারিশ মেনে যে নীতি-নির্দেশিকা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা যাতে উলঙ্ঘন না হয়, সেই কথা মাথায় রেখে, সৌরভ যেন সভাপতি পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নেন, কোনও রকম আইনি বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আগে।

সৌরভ ও সুবীরের মধ্য়ে দ্বন্দ্ব এই প্রথম নয়। ন’বছর সিএবি’র যুগ্ম-সচিব থাকার পর সুবীর গাঙ্গুলি নিজের মেয়াদ শেষ করার পর তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে ওয়ার্কিং কমিটিতে আনা হয়নি। সভাপতি সৌরভ তাঁকে কোনও শাঁসাল পদও দেননি। ফলে, ব্য়ক্তিগতভাবে সভাপতির ওপর চটে রয়েছেন প্রাক্তন যুগ্ম-সচিব। সুযোগ পেয়ে তাই সৌরভ বিরোধিতা সুর ফের তাঁর গলায়।

প্রাক্তন ক্রিড়া প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া মারা যাওয়ার পর সৌরভ যখন দু’বছর আগে সেপ্টেম্বর মাসে সভাপতি নিযুক্ত হন সিএবি’তে, সেসময় ডালমিয়ার ছেলে অভিষেক যুগ্ম-সচিব হয়ে আসেন। এরপর সৌরভকে বারবার বিসিসিআই সভাপতি করার প্রস্তাব নানা মহলে বারবার উঠেছে। কিন্তু, দাদা নিজে বরখাস্ত হওয়া অনুরাগ ঠাকুরকে ওই পদে দেখতে চান। এর মাঝে সৌরভ আবার বিসিসিআই’য়ের ক্রিকেট অ্য়াডভাইজরি কমিটির সদস্য়ও হয়েছেন।
তবে, আসল সমস্য়া জড় অন্য় জায়গায়। আর সেই কারণেই বিরোধিতার সুর ফের চড়িয়েছেন সুবীর গাঙ্গুলি। কয়েক মাস আগেও সৌরভ বোর্ডের একটি কমিটির সদস্য় ছিলেন। সাত-সদস্য়ের ওই কমিটির কাজ ছিল, লোধা কমিটি যা সুপারিশ করেছে, সেই বিষয়গুলি খুঁটিয়ে দেখা। পরে নিরঞ্জন শাহকেও ওই কমিটিতে যুক্ত করা হয়।

তবে, সিএবি’তে হঠাৎ কি কারণে সৌরভবিরোধী সুর পালে হাওয়া পেলো, তানিয়ে সৌরভ সে নিজেও মুখ খুলতে চাইছেন না। একটি সংবাদ সরবরাহকারী সংস্থাকে সৌরভ জানিয়েছেন, ”সুবীর গাঙ্গুলি যা বলেছেন, আমি সে সম্পর্কে কোনও রকম মন্তব্য় করব না। আমি শুধু বলতে পারি, উনি ন’বছর সিএবিতে অফিস বিয়ারার ছিলেন। কোষাধ্য়ক্ষ হিসেবে চার বছর এবং যুগ্ম-সচিব হিসেবে পদ সামলান। আর ওর সরে যাওয়ার পেছনে আমার কোনও হাত ছিল না। ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।”
তবে, বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, সৌরভকে সিএবি’র সভাপতি পদ থেকে সরানো অত সহজ হবে না। কারণ, প্রশাসক হিসেবে তাঁর নাম কোনও রকম দুর্নীতির সঙ্গে জড়ায়নি এখনও পর্যন্ত। ফলে সভাপতি হিসেবে দাদা তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করবেন।