আইপিএল ক্রিকেটে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি যে দলের হয়ে ২০০৮ সাল থেকে ক্রিকেট খেলে আসছেন, সেই দলের মালিকপক্ষ মদের কোম্পানি। রয়্য়াল চ্য়ালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোর। সংক্ষেপে আরসিবি। নামের প্রথম দুটি শব্দ থেকে লোকে আঁচ করতে পারেন ওটি একটি বিখ্য়াত মদের ব্র্য়ান্ডের নাম। দলের নাম ওরকম হওয়ার কারণও আছে। কারণ আইপিএল টিম আরসিবি এবং মদের ব্য়ান্ড আরসি – দু‘টির মালিকই ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেড। আর এই কোম্পানির কর্ণধার বিজয় মালিয়া। হ্য়াঁ, ঠিকই পড়ছেন। কেন্দ্র সরকার যাকে দেশে ফেরৎ আনার জন্য় আন্তর্জাতিক পুলিশের সাহায্য় চাইছে। ন‘হাজার কোটি কর ফাঁকি দেওয়া মালিয়া দিব্য়ি লন্ডনে বসে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এবং দেশে তার কোম্পানি মদ বেচা টাকায় আইপিএলে টিম চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেই টিমের অধিনায়ক আবার বিরাট কোহলি।

Photo by Vipin Pawar / BCCI / SPORTZPICS
বিরাট বারবার বলে চলেছেন, এমন পণ্য়ের বিজ্ঞাপণে তিনি মুখ দেখাবেন না, যা তিনি ব্য়বহার করেন না। সে যত টাকা দেওয়া হোক, তিনি তাঁর নৈতিকতা থেকে সরবেন না। এই কারণে পেপসি কোম্পানির সঙ্গে নতুন করে চুক্তির মেয়াদ বাড়াননি বিরাট। তখনই বিরাট জানান, যেহেতু নরম পানীয় এখন আর তিনি মুখে তোলেন না ফিট থাকতে, তাই তাঁর ফ্য়ানেদের কাছে মিথ্য়া কথা পৌঁছে দিতে চান না বিজ্ঞাপণে মুখ দেখিয়ে। কারণ, এতে নাকি তাঁর নিজস্বতা থাকবে না। তাই বিরাটের বিবেকে বেঁধেছে। আস সেই কারণেই পেপসি কোম্পানির বহু কোটি টাকার অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন।

Photo by Deepak Malik / BCCI / SPORTZPICS
২০১৬ সালের একটি সমীক্ষা বলছে, কোহলি মোট ১৩টি কোম্পানির হয়ে ২০টি ব্র্য়ান্ডের প্রচার করেন।
এদিকে, মিডিয়াতে নিজের ফিটনেস সম্পর্কে মন্তব্য় করতে গিয়ে বিরাট বড় মুখ করে জানিয়েছেন, ”২০১২ সালে আইপিএলে খারাপ পারফরম্য়ান্স করার পর থেকে আমি অনিয়ম করা ছেড়ে দিয়েছি। আগে যা পেতাম, তাই খেতাম, বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকতাম আবার রোজ এক-দু‘পেগ করে মদ খেতাম। কিন্তু এখন ওসব আর করি না। আর তার ফলও পাচ্ছি। এখন আমি বেশ ফিট। নিয়ম মেনে চলায় ক্রিকেটেও তার প্রভাব পড়েছে।”
দিল্লির এই ক্রিকেটারটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সেরা ব্য়াটসম্য়ান, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। গত আড়াই বছরে বিরাটের রেকর্ডই তাঁর হয়ে কথা বলছে। কিন্তু, মিডিয়াতে বড়াই করে অনুরাগীদের উদ্দেশে যে নৈতিক বার্তা দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক, সেই কথা মানলে আইপিএলে আরসিবি টিমে কি করে খেলে চলেছেন বিরাট? মালিকপক্ষ তো মদের কোম্পানি। আর বিরাটের মতো ক্রিকেটার সেই টিমে থাকা মানে ওই কোম্পানির মদ ব্য়বসা আরও বাড়বে।
বিরাট অবশ্য় সেইভাবে দেখতে নারাজ। তাঁর কাছে এই প্রশ্ন রাখার পর তিনি যা জবাব দিয়েছেন, তা শুনে ওয়াকিবহল মহল এবং সমালোচকদের চোখ কপালে উঠেছে।
আরসিবি অধিনায়ক বলেছেন, ”আমি যে জিনিস মুখে তুলি না, সেই পণ্য়ের প্রচার করি না। ফলে সেই সব ব্র্য়ান্ডকে আমি না করে দিই। চুক্তি ফিরিয়ে দিই। পেপসির মতো বড় ব্র্য়ান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর আরও অনেক ব্য়ান্ডের হয়ে বিজ্ঞাপণে মুখ দেখানোর জন্য় আমার কাছে প্রস্তাব এসেছে, কিন্তু আমি ফিরিয়ে দিয়েছি তাদেরও।” এরপর বিরাট বলেন, ” আর ওইটা (আরসিবি) মদের কোম্পানি হলেও আমি ওটার সঙ্গে যুক্ত আছি। কারণ, আমি মদের প্রচার চালাচ্ছি না, এনার্জি ড্রিঙ্কসের প্রচার করছি।”
বিরাটের এই বক্তব্য় নিয়ে এখন নানা-মহলে নানা কথা চলছে। কিসব কথা বলছেন বিরাট? তিনি যে মন্তব্য় করেছেন, তা ধোপে টেকে না। কারণ, ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেডে অধীনে ১৪০টি মদের ব্র্য়ান্ড রয়েছে। শুধু এখানেই থেমে নেই। অনলাইন তথ্য়প্রদাণকারী সংস্থা উইকিপিডিয়া বলছে, কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর ইউবি টাওয়ারের অফিস থেকে ভারতসহ বিশ্বের বাজারে এত পরিমাণ মদ বেচা হয় যে ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেড বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মদ কোম্পানি ব্র্য়ান্ডের বহরের দিক থেকে।
২০১৩ সালে ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেড তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছিল, তাদের ১৪০টি মদের ব্র্য়ান্ডের মধ্য়ে ১৫টি ব্র্য়ান্ড বছরে প্রত্য়েকটি আলাদা আলাদা করে দশ লক্ষেরও বেশি বিক্রি হয়। আর তিনটি ব্র্য়ান্ড এতই জনপ্রিয়, বছরে প্রত্য়েকটি আলাদা আলাদা করে এক কোটিরও বেশি করে বিক্রি হয়।
ভারতের বাজারে ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেডের বেচা মদের ব্র্য়ান্ডগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক। অ্য়ান্টিকুইটি, ব্য়াগপাইপার, ম্য়াকডাওয়েল‘স নাম্বার ওয়ান, ম্য়াকডাওয়েল‘স নাম্বার ওয়ান প্লাটিনাম, ম্য়াকডাওয়েল‘স সিঙ্গেল মল্ট, রয়্য়াল চ্য়ালেঞ্জ এবং সিগনেচার ব্র্য়ান্ডগুলির অধিনে হুইস্কি বিক্রি হয়। ম্য়াকডাওয়েল‘স ভিএসওপি নামে ব্র্য়ান্ডি বিক্রি হয়। এছাড়া, ম্য়াকডাওয়েল‘স নাম্বার ওয়ান সেলিব্রেশনের ব্র্য়ান্ডের অধীনে রাম বেচা হয়। এখানেই শেষ নয়। পিঙ্কি, রোমানোভ, ভ্লাদিভার এবং হোয়াইট মিশচিফ ব্র্য়ান্ডের ভোদকা ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেডেরই। ব্লু রিব্য়ান্ড নামে জিন ও ফোর সিজনস নামে ওয়াইন‘ও বিক্রি করে তারা।
আশ্চর্যের বিষয়, বিজয় মালিয়ার কোম্পানি যে এনার্জি ড্রিঙ্ক বিক্রি করে আর বিরাট তার প্রচার করার কথা বলছেন, সেই পানীয় রোমানভ ভোদকা ব্র্য়ান্ডের অধীনেই বিক্রি করা হয় রোমানভ রেড নামে। এছাড়া কিং ফিশার সোডা ও জলের বোতল বিক্রি করলেও, ইউনাইটেড স্পিরিটস লিমিটেডের মূল উদ্দেশ্য়, নিজেদের ব্র্য়ান্ডের ভোদকার ব্য়বসাকে আরও মাইলেজ দেওয়া উপভোক্তাদের নামের সঙ্গে বেশি করে পরিচয় করিয়ে দিয়ে।