“এতদিন ধরে যার জন্য আমি নিজেকে তিল তিল করে উজার করেছি, সেই সবকিছুকেই আমি মিস করব। আমি আগেও বলেছি একটা জিনিশই এখন শান্তিতে থাকবে, আর তা হল আমার শরীর। এতদিন আমি সত্যিই নিজেকে ধাক্কা মেরে নিয়ে চলছিলাম। হয়ত আরও এক দু’মাস কিংবা বছর এভাবেই নিজেকে ধাক্কা মেরে চালাতে পারতাম। কিন্তু কে না জানে এর থেকে বড় আর ভাল সুযোগ আমি পেতাম না। এবং এটাই সঠিক সময় নীল জার্সিটা তুলে রাখার। আমি অবশ্যই এমন একজন বোলার হতে চাইতাম যে শেষ ওভারে ভারতের জন্য সব থেকে বেশি বল করেছে। এটা চিরকালই একটা অন্য ধরনের চাপ ছিল আমার উপর, বরং সেই তুলনায় আজকেরটা ছিল অনেকটাই সহজ। আমার ক্ষেত্রে বিরাট চেয়েছিল আমি লাস্ট ২-৩ ওভার বল করি।
কিন্তু আমি শেষ ওভারটাই করতে চেয়েছিলাম”। দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলার সাংবাদিক এরিনায় দাঁড়িয়ে যখন কথাগুলো বলছিলেন আশিস নেহেরা তখন অনেকটাই আবেগ তাড়িত দেখাচ্ছিল দিল্লীর এই বাঁ হাতি জোরে বোলারকে। ডেথ ওভারে নির্ভরযোগ্য ভারতের এই জোরে বোলারের প্রথম শ্রেণীর কেরিয়ার শুরু হয়েছিল ১৯৯৭-৯৮ মরশুমে দিল্লীর হয়ে। ১৯৯৯এর শ্রীলঙ্কা সফরে কলম্ব টেস্ট ম্যাচে তার অভিষেক হয়। নিজের ক্রিকেট জীবনে বার বার চোট আঘাতের সমস্যায় জর্জরিত নেহেরা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতীয় পেস অ্যাটাকের নির্ভরযোগ্য সৈনিক ছিলেন। ওয়ান ডে এবং টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেলা নেহেরা এতদিন শুধু টি২০তেই খেলে চলেছিলেন। ২০০১এ হারারে তে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে তার অভিষেক হয়। সৌরভের টিম ইন্ডিয়ার পেস বোলিংয়ে তিনিই ছিলেন মূল স্তম্ভ। ২০০৩ ওয়ার্ল্ড কাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর স্বপ্নের বোলিং আজও ক্রিকেট প্রেমীদের মনে জায়গা করে রেখেছে। চোট নিয়ে বোলিং করেও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেদিন তিনি স্বপ্নের বোলিং করেছিলেন। ২৩ রানে ৬ উইকেট নিয়ে সেদিন একাই ইংল্যান্ডকে রুখে দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৩ বিশ্বকাপের পুরোটা জুড়েই তিনি অসাধারন ফর্ম দেখিয়েছিলেন। চোট আঘাতের সমস্যায় তাকে বার বার টিম ইন্ডিয়া থেকে বাদ পড়তে হলেও প্রতিবারই তিনি ফিরে এসেছিলেন স্বমহিমায়। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও বলেন,

‘ আমি প্রায় ১৮-১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি। এখন ক্রিকেটে অনেক বদল এসেছে। ফিরোজ শাহ কোটলাতেই আমি প্রথম খেলতে শুরু করি ১৯৯৭ সালে। এখানেও এখন বিরাট বদল এসেছে। ক্রিকেটের অনেক নিয়ম বদলেছে, এখন আগের তুলনায় ক্রিকেটে অনেক বেশি রান হয়। এই ভারতীয় দলটি দুর্দান্ত। এখন ভারতীয় দলের প্রচালনার ভার সঠিক হাতেই রয়েছে। অন্তত আগামী ৭-৮ বছরের জন্যে তো বটেই। প্রতি ৮-১০ বছর অন্তর অন্তর ক্রিকেটে বদল ঘটে। আমি কোনো প্রজন্মের সংগেই তুলনা টানা পছন্দ করি না। অতীতেও আমরা অনেক ভালো ক্রিকেটারকে পেয়েছি। গাঙ্গুলি, ধোনি, শচীন। সবার নাম নেওয়া আমার পক্ষে সম্বব নয়। কিন্তু এটা বলতে পারি সবকিছু মিলিয়েই এটা একটা দুর্দান্ত সফর ছিল আমার জন্য। এবং আমি খুশি যে আমি জিতে মাঠ ছাড়তে পারছি”।