সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের মধ্যে প্রতিযোগিতাটি একটি রুদ্ধশ্বাস লড়াইতে পরিণত হয়েছিল এই ম্যাচ শেষ বল অব্ধি গড়ানোয়। প্রথম দিকে খানিকটা ব্যাকফুটেই ছিল চেন্নাই, কিন্তু তাদের মিডল অর্ডারের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে তারা একটি কঠিন লক্ষ্যমাত্রা খাড়া করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় সানরাইজার্স, কিন্তু কেন উইলিয়ামসন এবং ইউসুফ পাঠানের মত প্লেয়াররা তাদের ম্যাচ থেকে হারিয়ে যেতে দেন নি, কিন্তু শেষপর্যন্ত এই ম্যাচে চার উইকেটে জিতে সিএসকে লিগ টেবিলের শীর্ষে পৌঁছে যায়।
সানরাইজার্সকে উড়িয়ে দেন রায়ডু
আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন থাকায় টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন হায়দ্রাবাদ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তার এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে যায় নি, কারণ শুরুতেই একটি স্লোয়ার ডেলিভারিতে শেন ওয়াটসনকে আউট করেন ভুবনেশ্বর কুমার। ঠিক এরপরই রশিদ খান তুলে নেন ফাফ দু’প্লেসিকে যিনি এই ম্যাচে তার জাতীয় দলের সতীর্থ ইমরান তাহিরের পরিবর্তে দলে এসেছেন। এরপরই চেন্নাই ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে আম্বাতি রায়ডু এবং সুরেশ রায়নার কাঁধে, এই খারাপ শুরুয়াত থেকে দলকে টেনে তোলার জন্য।
এই সময় চেন্নাইয়ের ভাগ্যপরিবর্তন হয়ে সূর্যের মুখ দেখা দেয় এবং তাদের এই দুই ব্যাটসম্যান বাউন্ডারির বন্যা বইয়ে দেন। একদিক ধরে রেখে ইনিংস গড়ার দায়িত্ব নেন রায়না, অন্যদিকে রায়ডু হায়দ্রবাদ বোলারদের বিরুদ্ধে স্ট্রোকে ফুলঝুড়ি ছোটাতে থাকেন যা তাদের স্কোরবোর্ডকে সচল রাখতে সাহায্য করে। এই জুটির পতন হয় রায়ডু একটি অসম্ভব এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হওয়ায়। শেষ দিকে একটি ক্যামিও ইনিংস খেলে ধোনি সিএসকেকে ১৮২ রান স্কোরবোর্ডে তুলতে সাহায্য করেন।
উইলিয়ামসন এবং পাঠানের দাগ কাটার চেষ্টা, কিন্তু সিএসকের জয়
রান তাড়া করতে নেমে, নতুন বল হাতে দীপক চহেরের দুরন্ত বোলিংয়ের সামনে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ রিকী ভুঁই, মনীশ পান্ডে এবং দীপক হুডার উইকেট দ্রুত হারিয়ে ফেলে। এরপরই মিডল অর্ধারে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান, এবং বেশ কিছু দুরন্ত শট খেলেন, কিন্তু তার ইনিংস দ্রুত শেষ করে দেন কর্ণ শর্মা। অন্যদিকে আশানুরূপ প্রদর্শন করতে থাকেন উইলিয়ামসন এবং হোম টিমকে এই ম্যাচে জিইয়ে রাখেন।
যদিও লং অনে দুরন্ত ক্যাচ নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। এরপরই ধীরে শুরুয়াত করেও ইউসুফ পাঠান তার ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটান, যা তার দলকে এই লড়াই থেকে হারিয়ে যেতে দেয় নি। কিন্তু তার আউট হওয়ার পরই সিএসকে এই ম্যাচে জাঁকিয়ে বসে। শেষ দিকে ব্যাট করতে নেমে রশিদ খান পরপর তিনটি বাউন্ডারি মারেন যা ফের হায়দ্রাবাদের জয়ের আশাকে জাগিয়ে তোলে। কিন্তু নিজের মাথা ঠান্ডা রাখেন এবং শেষ বলে ছয় রান বাঁচাতে সক্ষম হন। শেষ পর্যন্ত এই ম্যাচ চার উইকেটে জিতে নেয় চেন্নাই।
ম্যাচ শেষে সিএসকে অধিনায়ক ধোনি বলেন, “ (শেষ বলের আগে ব্রাভোর সঙ্গে কথা বলা প্রসঙ্গ) আমরা কি বিষয়ে কথা বলেছি তা বলতে চাইনা, ওর পরিকল্পনা বদলাতে চেয়েছিলাম। সেই সময় এমনকী সেরা ব্র্যাভোরও সামান্য পরামর্শের প্রয়োজন ছিল। এটাই তা, যার জন্য ওদের মূল্য দেওয়া হয়। যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল আপনি ভুল থেকেই শিক্ষা নেন। লিগ স্টেজে এটা করতে আপনি সক্ষম। আমরা এই মুহুর্তে যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সামান্য ভুল হলেও আমাদের ক্ষতি হবে না। বোলারদের এটা থেকে শিখতে হবে। উইকেট ভাল হয়ে গিয়েছিল। যদি এটা আপনি আইপিএলের প্রথম দিকের কিছু সংস্করণের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে এটা দারুণ ব্যাটিং উইকেট। ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ওরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। ওরা পরিকল্পনা করে যে কোন বোলার কি বল করবে। যখনই আমরা নকআউটে যাব, আমরা দেখব যে বোলারা নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছে এবং এবং সেটা ব্যাটসম্যানদের জন্য সহজ হবে না এভাবে রান করার যেভাবে তারা এখনও অব্ধি করে আসছে। গুরুত্বপূর্ণ হল তরুণ বোলারদের যত বেশি সম্ভব ম্যাচ দেওয়া উচিৎ। দীপক বল সুইংও করাচ্ছে আবার লোয়ার অর্ডারে ব্যাট হাতে ভারসাম্যও এনেছে। শার্দূলের বেশ কিছু ম্যাচ খারাপ গেছে। শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ ওর জন্য ভাল যায় নি। কিন্তু ওর মধ্যে সঠিক অ্যাটিটিউড রয়েছে এবং বৈচিত্রও রয়েছে। রায়ডু দুর্দান্ত ছিল। একটা ব্যাপার হল ওকে কোথায় খেলানো হবে। ওর জন্য জায়গা বানানোর দরকার ছিল, কারণ আমি সবসময় ওকে উঁচু জায়গায় রেখেছি। আমি ওকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে ব্যাট করতে দেখেছি, ওকে আত্মবিশ্বাসি দেখায়। যখনই ও বড় শট খেলে, ও শেপকে মেন্টেন করে। ও এমন একজন যে, আলাদা নাম্বারে ব্যাট করতে পারে। কিন্তু আমি ওকে ওপেনিং ব্যাট করাতে পছন্দ করি”।