তাদের প্রাক্ত অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের দল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে ইডেনে ঘরের মাঠে এক ইঞ্চিও জায়গা না ছেড়ে এই ম্যাচে ৭১ রানে জিতে নিল কলকাতা নাইটরাইডার্স। এদিন ঘরের মাঠে অনবদ্য পারফর্মেন্স দেখাল নাইটরা। টস জিতে কলকাতাকে প্রথম ব্যাট করতে পাঠান প্রাক্তন নাইট গৌতম গম্ভীর। যদিও শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি নাইটদের। দিল্লির জোরে বোলার ট্রেন্ট বোল্ট প্রথম ওভারেই মেডেন ওভার করেন, অন্যদিকে ওপেনার সুনীল নারিন এই ম্যাচেও নিষ্প্রভ থাকেন এবং মাত্র এক রান করে আউট হন। এরপরই রবিন উথাপ্পা এবং ক্রিস লিন দুজনে মিলে কলকাতার ইনিংসকে নির্ভরতা দিতে শুরু করেন। কিন্তু খুব বেশিক্ষন কলকাতার ইনিংসকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন নি তারা। পাওয়ার প্লের পরই আউট হয়ে যান এই দুজন। এরপরই ক্রিজে জুটি বাঁধেন কলকাতার মিডল অর্ডার দুই ব্যাটসম্যান নীতিশ রানা এবং অ্যান্দ্রে রাসেল। মূলত এই দুজনের ব্যাটে ভর করেই নির্ধারিত ২০ ওভারে কলকাতা ২০০ রানে পৌঁছয়।
মাত্র ৩৫ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন নীতিশ রানা অন্যদিকে রাসেলও ১২ বলে ৪১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। এক সময় মনে হচ্ছিল কলকাতার রান বোধহয় ২০০ রানও ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু এরপরই ম্যাচে ফিরে আসে দিল্লি। শেষে ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে কলকাতা ২০০/৯ রানে আটকে দেয় তারা। অন্যদিকে ব্যাট করতে নেমেই মাত্র প্রথম তিন ওভারে দিল্লির শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। যদিও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং ঋষভ পন্থ মিডল ওভারে কলকাতার জন্য বিপদের সঙ্কেত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তাদেরকেও দ্রুত কফিরিয়ে দেন কলকাতার বোলাররা। মূলত স্পিনারদের কাঁধে ভর করেই এই ম্যাচে আটকে দেয় দিল্লিকে। পন্থ এবং গ্লেনকে ফিরিয়ে দিতেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে দিল্লির ইনিংস। একবার জেনে নেওয়া যাক ম্যাচ শেষে কি কি বললেন।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নীতিশ রানা:
“ এটা বেশ ভালো অনুভূতি কারণ এটা কেকেআরে আমার প্রথম মরশুমে এবং আমি ভাল পারফর্ম করতে চেয়েছিলাম। দূর্ভাগ্যবশতভাবেই আমি গত দুটি ম্যাচে আউট হয়ে গিয়েছিলাম, তাই এটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটা ইনিংস। এছাড়াও এই ম্যাচটাও আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ আগের দুটি ম্যাচই আমরা হেরে গিয়েছিলাম। আমি বলের ধরণ সম্বন্ধে বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম মাঠের দিকে তাকিয়েই, আমি এই ব্যাপারে একটি সঠিক ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। অন্য দলগুলি পরিকল্পনা থাকে অফের বাইরের দিকে বল না করার, কিন্তু যখন ওরা আমার শরীর লক্ষ্য করে বল করা শুরু করল ঠিক তখনই আমি শট মারার দিকে যাই এবং এটা কাজ করে যায়। যখন বল আমার রেঞ্জের মধ্যে থাকে, তখনই আমি শট মারা দিকে যাই, এবং আজ রাতে আমি এটা ঠিকঠাকভাবে করতে পেরেছি”।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক:
(শ্রেয়স আইয়ারের আউট নিয়ে) আমরা সামান্য পরিকল্পনা করেছিলাম। নীতিশ রানা দুরন্ত ক্যাচ ধরেছে। জয় আপনাকে খুশি দেয় এবং আপনি ধীরে ধীরে সেই দিকে অগ্রসর হন। টাচউড, এটা সেইরকমই একটা দিন, যেখানে আপনি কোনও একটা পদক্ষেপ নেন এবং সেটা কাজ করে যায়। অধিনায়ক হিসেবে দারুণ অনুভব করছি। আইপিএলে রিস্ট স্পিনারদের একটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য নেওয়া হয়। আমাদের তিনজন টপ কোয়ালিটির স্পিনার রয়েছে। তারা সামনের দিকে এগিয়ে এসেছে। এটা দেখার পক্ষে দারুণ। ( নিজের অধিনায়কত্বকে রেটিং করার কথা বলায়) আপনারই অবশ্য আমাকে বলা উচিৎ (হাসি)। এটা বেশ ভালই যাচ্ছে। আপনি অনেক চিন্তা নিয়ে ঘুমোতে যান, আপনি অনেক চিন্তা নিয়েও জাগেন, আমি জিনিসে আমাকে অভ্যস্ত হতে হচ্চে। ওই সমস্ত চিন্তাকে ব্যালান্স করা প্রয়োজন, এবং চেষ্টা করা উচিৎ ব্যাটিংকে অধিনায়কত্ব থেকে আলাদা করার”।
দিল্লি ডেয়ারডেভিলস অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর:
“আমাদের কেকেআরকে কৃতিত্ব দিতেই হবে, ওরা সত্যিই দারুণ খেলেছে। একসময় আমারা মনে করেছিলাম ওরা ১৭০-১৭৫ এর বেশি যেতেই পারবে না, কিন্তু তারপর ২০০ পর্যন্ত যাওয়া সত্যিই ওদের কৃতিত্ব। আমরা জানতাম এই রান তাড়া করাটা একটু কঠিনই হবে কারণে ওদের তিনজন কোয়ালিটি স্পিনার রয়েছে। আমার মনে হয় আমরা আমাদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে কার্যকর করতে পারি নি। রাসেলের মত কেউ যখন বোলারদের মারতে শুরু করে, তখন তাকে আটকানো সত্যিই কঠিন। এমনকী আমরা রাউন্ড দ্য উইকেটও বল করার চেষ্টা করেছি। আমাদের আলাদা পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু সেই প্ল্যানগুলোকে কার্যকর করা সত্যিই কঠিন ছিল। প্রচুর বল আমরা ওর র্যা ডারের কাছাকাছি করেছি। আমাদের কাছে গুরুত্বপুর্ণ ঘরের মাঠে ম্যাচ জেতাটা, সেখানে ওদের মধ্যে প্রায় পাঁচজন রয়েছে যারা ঘরের মাঠে খেলছে। পরের ম্যাচটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যদি আমরা জিততে চাই। যদি আমরা ব্যাঙ্গালোরে জিততে পারি, তাহলে আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে যাবে। এখনও আমাদের কাছে ১০টি ম্যাচ বাকি রয়েছে এবং প্রচুর পরিশ্রমও করার রয়েছে”।