দু‘বছর নির্বাসনের সাজা কাটিয়ে একাদশ আইপিএল থেকে আবার ক্রিকেটের মূলস্রোতে ফিরছে চেন্নাই সুপার কিংস টিম। দু‘বারের আইপিএল বিজেতা, আবার চারবারের ফাইনালিস্ট। ২০১৩ সালে যখন চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে, সবাই চমকে গিয়েছিলেন। তারপর থেকে এই চার বছর দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ও আইকন ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনি, ফিক্সিংকাণ্ড নিয়ে একটা কথা বলেননি মিডিয়াতে। তাঁকে নিয়েও কম কথা হয়নি এজন্য়। সব চুপ করে হজম করেছেন এতদিন।
আগামী আইপিএলে তিনি সিএসকে টিমে ফিরবেন কি না, তা সময়ই বলবে। আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল তিন ক্রিকেটার ধরে রাখার যে কোটার প্রস্তাব দেবে, তাতে ধোনির পুরনো টিমে ফেরার সম্ভাবনা জোরদার। তার আগে, ক্রিকেট অনুরাগীদের সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন মাহি। জানালেন, চেন্নাই সুপার কিংসের মালিকপক্ষ ইন্ডিয়া সিমেন্টেসের মালিক নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা আবার ক্রিকেট সংক্রান্ত বিষয় থেকে আজীবন নির্বাসিত শ্রীনির জামাই গুরুনাথ মিয়াপ্পনের সঙ্গেই বা তাঁর সম্পর্ক কতটা ছিল?
সিএসকে টিমে ধোনিকে অধিনায়ক করা বা রাখা নিয়ে শ্রীনি কতটা সচেষ্ট ছিলেন, সে সম্পর্কে নতুন করে বলে দেওয়ার দরকার নেই। আইপিএল ও চ্য়াম্পিয়ন্স লিগ টি-২০‘তে সিএসকে টিমকে যে সাফল্য় এনে দিয়েছেন অধিনায়ক ধোনি, তাতে তাঁকে ঘরের ছেলে বলেই মনে করেন চেন্নাইয়ের ক্রিকেট ফ্য়ানরা।
প্রখ্য়াত সাংবাদিক রাজদীপ সারদেশাই তাঁর নতুন প্রকাশিত বই ‘ডেমোক্রেসি ইলেভেন‘-এ ধোনি ও শ্রীনিকে নিয়ে অনেক কথাই জনগণের সামনে এনেছেন। সেখানেই দুই ব্য়ক্তিত্বই একে অপরের প্রতি সম্মানও জানিয়েছেন।
ধোনি বলেছেন, ”লোকে কি ভাবে বা মনে করে, আমি তাতে বিন্দুমাত্র কান দিই না। কারণ, শ্রীনিবাসনের মধ্য়ে আমি একজন মানুষকে খুঁজে পেয়েছি, যিনি ক্রিকেটারদের সাহায্য় করার জন্য় সবসময় এগিয়ে আসেন।”
বইটিতে মিয়াপ্পনকে সম্পর্কে দু‘বারের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ধোনি বলেছেন, ”আপনাদের একটা সত্য়ি কথা বলি। (সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত) প্রোব প্য়ানেল বলেছিল, আমি বলেছি, মিয়াপ্পন একজন ক্রিকেট উৎসাহী। ওটা মিথ্য়ে কথা বলা হয়েছে আমায় নিয়ে। আমি বলেছিলাম, অন-ফিল্ড ক্রিকেটীয় ব্য়াপার বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মিয়াপ্পনের কোনও যোগ নেই। আমি ওই এনথুজিয়াস্ট কথাটা উচ্চারণই করিনি।”
সিএসকে ও রাজস্থান রয়্য়ালস টিমকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের আইপিএল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ফলে ২০১৮ সালে এই দুই টিমের আইপিএলে কামব্য়াক নিয়ে বেশ হাইপ তৈরি হয়েছে। রাজস্থান আবার প্রথম বারের আইপিএল চ্য়ম্পিয়ন।
আইপিএলে ফিক্সিং কাণ্ড সামনে আসার পর বিসিসিআই‘য়ের সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে হয় শ্রীনিকে। তবে, শ্রীনি স্বীকার করে নিয়েছেন, সে সময় তিনি ধোনিকে ভোট না দিলে ভারতীয় দলের আধিনায়কত্ব হারাতে হত তাঁকে। আর তার জন্য় বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই ইন্ডিয়া সিমেন্টেসের কর্ণধারের। বলেছেন, ”হ্য়াঁ, আমি ভেটো দিয়েছিলাম ওদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। একটা মানুষ বিশ্বকাপ এনে দিল আমাদের, তাকে কি করে এক বছরের মধ্য়ে অধিনায়কের পদ থেকে সরাতে চায় লোকে। আপনারা যাকে পক্ষপাত বলেন, আমি তাকে একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটারের সফলতাকে সম্মান জানানো বলি।”
উল্লেখ্য়, বিদেশ সফরে ভারতীয় দলের খারাপ পারফরম্য়ান্সের জেরে ২০১২ সালে মহিন্দর অমরনাথের নেতৃত্বাধীন সিলেকশন প্য়ানেল ধোনিকে অধিনায়কের পদ থেকে সরানোর কথা তোলে। কিন্তু, তৎকালীন বোর্ড সভাপতি শ্রীনি তা সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দেন নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। সে সময় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় সিরিজের ঘোষণার সময় অমরনাথ মিডিয়াকে জানিয়েছিলেন, ”দলের সতেরোজনের ক্রিকেটারকে আমরা বেছেছি। অধিনায়ক আমরা বাছাই করিনি। অন্য় কেউ বাছাই করেছেন।”