ছাব্বিশেই যবনিকা, অবসর নিয়ে গোটা বিশ্বকে অবাক করে দিলেন এই তরুণ প্রতিভা! 1

ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। টিভিতে খেলা দেখার সময় ধারাভাষ্য় শুনতে গিয়ে কথাটা বারবার শুনেছি। উপমাটা ক্রিকেটে মূলত দেওয়া হয় হঠাৎ হঠাৎ ম্য়াচের মোড় ঘুরে গেলে। তবে, মাঝেমধ্য়ে উপমাটা আরও অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়ে যায়। কব্জির চোটে কারও কেরিয়ার শেষ হয়ে যায়, কথাটা হুট করে শুনলে, যে কেউ বিষ্ময় প্রকাশ করে বলে উঠবেন, এমনটা আবার হয় নাকি! ওসব চোট তো কয়েক দিন বিশ্রাম নিলেই সেরে যায়। রোজকার জীবনে আমরা নিজেদের কব্জি দু’টিকেই পাত্তা দিই না। কিন্তু, পরনের জামা-প্য়ান্ট কাচতে গিয়ে বা বাজারের ভারি ব্য়াগটা হাত থেকে নামিয়ে হঠাৎই কব্জির শিরায় যখন টান লাগে বোঝা যায়, ব্য়থা কাকে বলে। ক্রিকেট খেলা দেখা পরিপক্ক মাথা যতই যতই এক্সপার্ট ওপিনিয়ন দিক, একজন ক্রিকেটারই বোঝেন এই খেলায় কব্জি কতটা জরুরি। ফিল্ডারদের মাঝ দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে গেলেও কব্জির মোচড় যেমন দরকার, তেমনই বলে স্পিন ধরাতে গেলেও চাই সেই কব্জির মোচড়।
যে বয়সে ক্রিকেট কেরিয়ার পরিণতি পাওয়ার কথা সেই বয়সেই অকালেই শেষ হয়ে গেল ক্রিকেট কেরিয়ার। কব্জির চোটের কারণে মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে অবসর নিতে বাধ্য় হলেন স্কটল্য়ান্ডের তরুণ প্রতিভা ম্য়াট মাচান। আর কিছু করার ছিল না। ডাক্তারের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিতেই হল। অবসরের কথাটা মিডিয়াকে জানানোর সময় গলা বেশ ভারভার। বলা ভালো অবসরটা নিতে বাধ্য় হলেন। অপারেশন করিয়েও শেষ রক্ষা হল না।
স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি সাসেক্সের হয়েও ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট খেলতেন মাচান। কব্জির চোটের কারণে গত মরশুমের অর্ধেকটা মাঠের বাইরেই কাটাতে হয়েছিল। না সারায় গতবছর সেপ্টেম্বরে অস্ত্রোপচার করান। কিন্তু চোট সারেনি পুরোপুরি। চোট নিয়ে খেলা চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্য়ায় পড়তে পারেন, ডাক্তার জানিয়ে দেন।
ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সময় আবেগ তাড়িত হয়ে ওঠেন ম্য়াট। ”আমি অবসর নিতে বাধ্য় হচ্ছি। খুব দু:খ হচ্ছে। মন ভীষণ ভার হয়ে আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নিতে হল। এছাড়া আর কোনও রাস্তা ছিল না। আগামী দিনে আমার শরীরটাকে সুস্থ রাখার কথাটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে।”
ম্য়াট আরও বলেন, ”একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে সবেমাত্র প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছিলাম। খুব দু:খজনক ব্য়াপার যে তার আগেই নিজেকে থামিয়ে দিতে বাধ্য় হলাম। আমার স্থির বিশ্বাস, সাসেক্সকে আগামী দিনে আরও অনেক কিছু দিতে পারতাম।
ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের এই বাঁহাতি ক্রিকেটারটি আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার হিসেবেই পরিচিত। স্কটিশ ক্রিকেট টিমের একজন নির্ভরযোগ্য সদস্য় ছিলেন। ম্য়াটের জন্ম সাসেক্সের ব্রাইটনে। মা স্কটিশ হওয়ায় ২০১২ সালে মাচান স্কটল্যান্ডের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টিমের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০১৩ সালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। স্কটল্য়ান্ড খুব একটা আন্তর্জাতিক ম্য়াম খেলার সুযোগ পায় না বলে ৩৩টি ওয়ানডেতে মাত্র একটি সেঞ্চুরি মাচানের, অর্ধশতরান তিনটি। গড় ৩৩.৩৬। টি-টোয়েন্টিতে ৪০টি ম্য়াচে গড় ৪০.৭০, স্ট্রাইক রেট ১২৭.৯৮।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষবার মাঠে নেমেছেন গত বছর ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। হংকংয়ের বিরুদ্ধে মাচানের দৌলতে সেবার জয় পায় স্কটিশ ক্রিকেট টিম। বোলিংয়েও হাতটা ভালো ছিল। অফ স্পিন বল করতেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে উইকেট নিয়েছেন ১৪টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে স্কটল্যান্ড ও সাসেক্সের হয়ে ৪৪ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি সহ ২০৮৯ রান সংগ্রহ করেছেন।
সাসেক্স কাউন্টি ক্লাবের ডিরেক্টর কিথ গ্রিনফিন্ড মাচানের অবসর সম্পর্কে বলেন, ”সেই দশ বছর বয়স থেকে সাসেক্সের সঙ্গে ওর সম্পর্ক। খুব দু:খজনক ব্য়াপার যে ওকে আর আমরা খেলতে দেখতে পাবো না। ম্য়াট সবসময় ক্লাব অন্ত প্রান ছিল। এমন একজন ক্রিকেটারের এত অল্প বয়সে চোটের কারণে কেরিয়ারে ইতি পড়ে যাচ্ছে।”

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *