নিজেকে নিয়ে বিতর্ক এড়াতে কমিটি অফ অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর্সের কোর্টে বল ঠেলেছিলেন সৌরভ। বলেছিলেন, মিথ্য়া কথা বলছেন শাস্ত্রী। তুলেছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীদের সামনে সত্য়টা সামনে আনার মতো জোরালো চ্য়ালেঞ্জ। কিন্তু, কোথায় কি? সুপ্রিম কোর্টের জোর করে বসিয়ে দেওয়া কমিটি অফ অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর্স শুধুই কাগুজে বাঘ। না আছে নখ, আর না আছে দাঁত। চার সদস্য়ের কমিটি থেকে দু-জন ইতিমধ্য়েই সরে গিয়েছেন। বাকি আর দু-জন। তার মধ্য়ে একজন আবার এমাসেই ছাড়তে চাইছেন। কে জানে, কোচ নিয়োগ নিয়ে এইসব খেলা না চললে, তিনিও হয়ত, এই দায়িত্ব থেকে ছুটি নিয়ে নিতেন ইতিমধ্য়ে।
এখানে দেখুনঃ ভারতীয় দলের কোচের মতো এবার বিশেষ এই পদের যোগ্য সদস্যর জন্য বিজ্ঞাপন দিল বিসিসিআই
দেশের শীর্ষ আদালতের নিয়োগ করা কমিটি মীমাংসা করতে বসে দায়িত্ব এড়াল, নাকি কৌশলে সৌরভকে বেকায়দায় ফেলতে চাইল – তা বোঝা দায়। জাহির খান আর রাহুল দ্রাবিড়কে শাস্ত্রীর সহকারী হিসেবে নিয়োগ করা হবে কি না, সেটা শাস্ত্রী নিজেই ঠিক করবেন। ১১ জুলাই থেকে সাসপেন্স থ্রিলার চলার পর আপাতত গা বাঁচাবার, থুড়ি মীমাংসার এই পথ পেয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাধের কমিটি অফ অ্য়াডমিনিস্ট্রেটর্স।



আরোও দেখুনঃ শাস্ত্রী-সৌরভ বিতর্কের মোড় ঘোরাতে কমানো হল জাহিরের কন্ট্র্য়াক্টের সময়সীমা
জাহির খানকে বোলিং উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করার শর্তে শাস্ত্রীকে কোচ করার ব্য়াপারে সবুজ বাতি দেখিয়েছিলেন দাদা। এই খবর মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ার পরই সৌরভ বলতে শুরু করেন, জাহিরকে একশো পঞ্চাশ দিনের জন্য় চুক্তিবদ্ধ করা হবে। অথচ ঘোষণার দিন বিসিসিআই বিবৃতি দিয়ে ফলাও করে মিডিয়াকে জানায়, রবি শাস্ত্রীকে হেড কোচ করা হচ্ছে, জাহির খানকে বোলিং উপদেষ্টা ও রাহুল দ্রাবিড়কে বিদেশ সফরে টেস্ট সিরিজের জন্য় ব্য়াটিং উপদেষ্টা করা হচ্ছে।

রাতারাতি জাহির খানের কন্ট্র্য়াক্ট একশো পঞ্চাশ দিনের হয়ে যাওয়াকে বিশেষজ্ঞ মহল শাস্ত্রী-সৌরভ ঠান্ডা লড়াইকেই দেখছেন। উল্লেখ করার মতো বিষয় বোলিং কোচের পদ খালি থাকলেও ব্য়াটিং কোচ হিসেবে দলের সঙ্গে সঞ্জয় বাঙ্গার রয়েছেন। বোর্ড বাঙ্গারের কাজে খুশিও। কাজেই দ্রাবিড়কে ব্য়াটিং উপদেষ্টা হিসেবে কোনও যুক্তিও গ্রাহ্য় নয়। সমালোচকরা তাই বলতে শুরু করেছেন, শাস্ত্রীর সঙ্গে সৌরভের লড়াই প্রকাশ্য়ে এসে গিয়েছে। ভারতীয় দলে নিজের জোর বজায় রাখতে জাহিরকে জোর করে বসাতে গিয়ে অকারণে দ্রাবিড়ের মতো একজন নিপাট ভদ্রলোকের নাম না জড়ালেই পারতেন সৌরভ।

নিন্দুকদের এক অংশ আবার বলছে, আসলে সুপ্রিম কোর্টের বসানো কমিটির অপারগতা তুলে ধরতে সৌরভ-শাস্ত্রীর এই ঠান্ডা লড়াইকে কাজে লাগাচ্ছে বোর্ড। দেখাতে চাইছে বিপদের সময় ত্রাতার ভূমিকা নিতে কমিটি কতটা অসহায়। ক্রিকেট বোর্ডটা তাঁদেরই চালাতে দেওয়া হোক, যাঁদের ভারতীয় ক্রিকেটের রাজনীতির সমঝ আছে। স্বচ্ছতার নামে এক প্রকার জোর করে বসিয়ে দিয়ে বিসিসিআইকে চালানো যায় না। যাঁদেরকে সুপ্রিম কোর্ট স্বার্থের সংঘাত দেখিয়ে ছাঁটাই করেছে, এতদিন তাঁরাই বিসিসিআই চালিয়ে আসছিলেন।
তবে, ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরে যে নাটক চলছে এই মুহূর্তে, তা একমাত্র টিভি সিরিয়ালের সঙ্গেই তুলনা করা যেতে পারে। একদিন আগে যাঁর কোচ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, সেই ব্য়ক্তিই কমিটির কল্য়াণে অন্য়ের ভাগ্য় নির্ধারণ করবেন।