শ্রীলঙ্কায় সীমিত ওভারের ক্রিকেট সিরিজে ভাল পারফর্ম করতে না পারায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চেন্নাই ম্য়াচে প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি কান্নুর লোকেশ রাহুলের। তাই আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েছেন কর্নাটকের এই ক্রিকেটার। টেস্টের আসরে ভালো পারফর্ম করলেও একদিনের ক্রিকেটে প্রত্য়াশা মতো পারফর্ম করতে পারছেন না অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর অতি পছন্দের এই ক্রিকেটার। পঞ্চাশ ওভারের ফরম্য়াটে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্য়াচে শতরানের ইনিংস দিয়ে শুরু করলেও, তারপর থেকে ঠান্ডা রাহুলের ব্য়াট। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে আহামরী পারফরম্য়ান্স করতে পারেননি।
চোট সারিয়ে দলে ফেরার পর ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তারপর দ্বিতীয় টেস্টে দলে ফেরেন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে টানা আটটি টেস্টে হাফসেঞ্চুরি করার নজির গড়েন। তাঁর ওই পারফরম্য়ান্সের জেরে শ্রীলঙ্কায় একদিনের সিরিজে রাহুলকে ক্রমাগত খেলিয়ে যান কোহলি ও শাস্ত্রী। ওপেনিং স্লটে জায়গা না থাকায় মিডল অর্ডারে তাঁকে ওপরের দিকে জায়গা দেওয়া হয় নিজেকে যাতে মানিয়ে নিতে পারেন। তিন, চার ও পাঁচ নম্বর পজিশনে তাঁকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুযোগ দিলেও, সফল হতে পারেননি। ব্য়াটে বড় রান নেই। তিনটি ইনিংসে ২৮ রান করার পর তাঁকে প্রথম একাদশের বাইরে রাখতে বাধ্য় হন কোহলি। কারণ, শ্রীলঙ্কার মতো দুর্বল দলের বিরুদ্ধে ব্য়র্থ হলেও টানা সুযোগ দেওয়া যায়, কিন্তু, বিশ্বচ্য়াম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে এই বিলাসিতা দেখানো মারাত্মক ব্য়াপার।
অন্য়দিকে, তার পরিবর্তে দলে আসা মণীশ পান্ডে সামান্য় সুযোগটাকেই আঁকড়ে ধরেছেন। শ্রীলঙ্কায় একদিনের সিরিজে একটি হাফ-সেঞ্চুরি ও ৩৬ রান করার পর একমাত্র টি-২০ ম্য়াচে তাঁর অপরাজিত ৫১ রানের দৌলতে ভারত জয় পায়। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে স্বভাবতই রাহুলের আগে মণীশকে সুযোগ দেওয়ার পক্ষপাতী টিম ম্য়ানেজমেন্ট। প্রথম একাদশে অটোমেটিক চয়েস না হওয়ায় লোকেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। প্রথম একাদশে জায়গা করে নিতে মরিয়া তিনি। আর তার জন্য় খুব খাটছেন তিনি। নিজের মেসেজ ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে পৌঁছে দিতে সোশ্য়াল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ট্য়ুইটারকে বেছে নিয়ছেন তিনি। ট্য়ুইট করেছেন, ”কঠোর পরিশ্রম করো, বিনম্র থাকো এবং প্রক্রিয়াতে বিশ্বাস রাখো।”
অধিনায়ক বিরাট কোহলি রাহুলের পাশে সবসময় থেকেছেন, এবারও আছেন। প্রথম ম্য়াচের আগে দলের নেতা বলছেন, ”যে কোনও একটা ফরম্য়াটে বারবার একই পজিশনে ব্য়াট করতে নামার পর অন্য় ফরম্য়াটে গিয়ে কোনও ব্য়াটসম্য়ান ওই একই পজিশনে ব্য়াট করতে চাইলে, দলের পক্ষে তা মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয়। সেই ক্রিকেটারেরও তেমন অসুবিধে হয় অন্য় পজিশনে নিজেকে মানিয়ে নিতে। আমার তাই মনে হয়। তাই দলের প্রয়োজনে ক্রিকেটারকে মানিয়ে নিতেই হয়। যেমন, আমি টি-২০ ক্রিকেটে ওপেন করতে নেমেছি। যদি এরকম পরিস্থিতি আসে যে দেখলাম মিডল অর্ডারে ভালো একজন ব্য়াটসম্য়ান আছে, তাহলে আমাকে আবার নামতে ওপেন করতে নামতে হবে। দলের প্রয়োজনে নমনীয় হতেই হবে। দল যে পজিশনে যে যে সময় তোমাকে চাইছে, তুমি সেই মতো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে কি না, সেটা সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের ওপরেই নির্ভর করে।”
ভারত অধিনায়ক এরপর বলেন, ”আমি একবারও বলব না, কাজটা খুব সহজ। যেমন জিঙ্কসকে (অজিঙ্কা রাহানে) দেখুন। টেস্টের আসরে আবার একদিনের আসরে মিডল অর্ডারে খেলেছে। তেমনই দু’ধরনের ক্রিকেটে দলের প্রয়োজনে ওপেন করতেও নেমেছে। ও নিজেও বুঝতে পেরেছে, কাজটা খুব একটা সহজ নয়। আমরা ওকে এখন টপ অর্ডারে চাইছি। ও সেই মতো নিজের পরিকল্পনা তৈরি করে নিচ্ছে। একজন ব্য়াটসম্য়ান একটা পজিশনে মানিয়ে নিলে, তাকে সেই পজিশনে বেশ কয়েকটা সুযোগ দেওয়া হয় থিতু হওয়ার জন্য়। তবেই আত্মবিশ্বাস আসে। মণীশ, কেদার দলে আছে। প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার লড়াই রয়েছে। কেএল প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ও সব ফরম্য়াটেই নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। আর সেই কারণে আমরা ওর পাশে আছি। থাকা উচিত। ও একবার মানিয়ে নিতে পারলে, ভারতের জন্য় ম্য়াচ জেতানো ইনিংস খেলবে। আমরা এব্য়াপারে নিশ্চিত।”