লোকেশ রাহুল দলে ফেরায় খুশি সৌরভ, দিনেশ কার্তিককে খেলানোয় ঘোর আপত্তি 1
সৌরভ গাঙ্গুলি

সোমবার নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আসন্ন টেস্ট সিরিজের প্রথম দুটি টেস্ট ম্য়াচের জন্য় দল ঘোষণা করেছেন জাতীয় নির্বাচকরা। কিউয়িদের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে লোকেশ রাহুলকে দলে রাখা হয়নি। টি-২০ সিরিজে তাঁকে দলে ফেরানো হয়েছে গা-ঘামানোর ম্য়াচে বোর্ড সভাপতি একাদশের হয়ে ভালো খেলার জন্য। রাহুল দলে ফেরায় খুব খুশি ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। তিনি বলছেন, রাহুলকে একদিনের সিরিজের দলে না রাখায়, তিনি নির্বাচকদের কাছে কর্নাটকের ক্রিকেটারটিকে দলে নেওয়ার জন্য় আর্জি জানিয়েছিলেন। তাই রাহুল দলে আসার সৌরভ বলছেন, তাঁর ইচ্ছে পূরণ হয়েছে।

এদিকে, তিন ম্য়াচের একদিনের সিরিজে ভারত মুম্বইতে প্রথম ম্য়াচে হেরে ১-০ ব্য়বধানে পিছিয়ে পড়েছে কিউয়িদের কাছে। ওয়াংখেড়েতে রবিবার (বাইশ অক্টোবর) প্রথমে ব্য়াট করতে নেমে ক্রমাগত উইকেট হারাতে থাকায় পুরো পঞ্চাশ ওভার খেলে অল-আউট না হলেও বড় রান তুলতে ব্য়র্থ হয় ভারত। শিখর ধওয়ন ও রোহিত শর্মা ওপেনিং জুটি অল্প রানে থেমে যাওয়ার পর কেদার যাদব ও দিনেশ কার্তিক কম রানেই প্য়াভিলিয়নে ফিরে যান। যদিও কোহলির সঙ্গে কার্তিক একটা পার্টনারশিপ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন সাঁইত্রিশ রান করে আউট হওয়ার আগে। এমএস ধোনিও ২৫ রান করে ফিরে য়ান। বিরাট শতরান করে একা রুখে দাঁড়ানোয় স্কোর ২৮০ পর্যন্ত গড়ায়। নিউজিল্য়ান্ড ওই রানের লক্ষ্য়মাত্রা চার উইকেট খুইয়েই ছুঁয়ে ফেলে।

তবে, নির্বাচকরা দিনেশ কার্তিককে দলে এনে লোকেশ রাহুলকে বাদ দেওয়ায় দাদা একেবারেই খুশি নন। তিনি বলেন, কেএল রাহুলকে দল থেকে বাদ দেওয়ায়, আমি মোটেই খুশি হইনি। কারণ, ও ভবিষ্য়তের খেলোয়াড়। দিনের কার্তিক আমাদের সময়ে ২০০৭ সালে ভারতীয় দলে ডেবিউ করেছিল। তারপর ও জাতীয় দলে জায়গা পাকা করতে পারেনি। গত দশ বছরে ও দলে এসেছে-গিয়েছে। সৌরভ এরপর বলেন, কেএল রাহুল এমন একজন ক্রিকেটার যে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে খেলতে নামলে রান করবে। সে অস্ট্রেলিয়া হোক, কিংবা শ্রীলঙ্কা বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আমি মনে করি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাহুলকে দলে ফিরিয়ে আনা উচিত। ও প্রতিভাবান ক্রিকেটার। কেএল রাহুল যেমন সেঞ্চুরি করেছে, রেকর্ড গড়েছে, তেমন ওর সবচেয়ে বড় ব্য়াপার হলো, ও তরুণ ক্রিকেটার।

বছরের শুরুতে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ঘরে রাখতে ভারতীয় দলের হয়ে বড় ভূমিকা নেওয়ার পর শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্টের আসরে ভালো পারফর্ম করে একদিনের ক্রিকেট সিরিজে ব্য়র্থ হন রাহুল। ওই ব্য়র্থতার কারণে টি-২০ সিরিজে টিম ম্য়ানেজমেন্টের ভরসা হারান কর্নাটকের এই ক্রিকেটার। এরপর অস্ট্রেলিয়া সিরিজে একদিনের ও টি-২০ ফরম্য়াটের তাঁকে স্কোয়াডে রেখে দেওয়া হলেও একটিও ম্য়াচে খেলানো হয়নি। নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান-ডে সিরিজের দল ঘোষণা হওয়ার পর দেখা যায়, স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।

তবে, ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও কোচ রবি শাস্ত্রী বেশ পছন্দ করেন রাহুলকে। ফলে, তাঁর দলে ফেরা নিয়ে তেমন কোনও সন্দেহ ছিল না। তবে, সৌরভ যেভাবে কেএল রাহুলের প্রশংসা করছেন, তাতে আগামী দিনে তিনি অনেক ভরসা পাবেন জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামলে। বিরাট কোহলি ছাড়া বর্তমান ভারতীয় দলে কেএল রাহুল একমাত্র ক্রিকেটার যে সব ধরনের ফরম্য়াটে খেলেছে সাম্প্রতিক অতীতে। বিশ্বের যে কোও প্রান্তে গিয়ে রান করা প্রতিভার ব্য়াপার। তিন ধরনের ফরম্য়াটেই ও সফল হয়েছে। রোহিত টেস্টে ভালো খেলতে পারে না, রাহানে একদিনের ক্রিকেটে নড়বড়ে। আর ওদিকে, কেদার যাদব ও মণীশ পান্ডেরা ওয়ান-ডে ম্য়াচে নিয়মিত সদস্য় হয়ে খেলে যাচ্ছে। সমস্য়া হলো, ওকে খেলতে দিতে হবে। চার নম্বরে ওকে খেলানোতে কোনও অসুবিধা দেখতে পাচ্ছিনা আমি। ধোনি চার নম্বরে খেলতে চায় কি না, ওকে জিজ্ঞাসা করা দরকার। ইদানিং আমরা দেখেছি, ধোনি রান করার আগে সময় নিচ্ছে। ফলে, উল্টোদিকে মেরে খেলার জন্য় কোনও একজনকে চাই, যাতে ধোনি থিতু হয়ে নিজের খেলা খেলতে পারে।

একদিনের ক্রিকেটে ভারত শীর্ষে থাকলেও, বর্তমান ভারতীয় দলটা অতি মাত্রায় দুই ওপেনার ও বিরাট কোহলির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপে ভালো ফল করতে হলে মিডল অর্ডারে চার ও পাঁচ নম্বরে ব্য়াটস্য়ামনকে দায়িত্ব নিতে হবে। সেব্য়াপারে সৌরভ বলেন, আমি মনে করি, ব্য়াটিং অর্ডারে টপ ফোর বা টপ ফাইভ ব্য়াটসম্য়ানকে তৈরি থাকতে হবে। কারণ, ছয় বা সাত নম্বর ব্য়াটসম্য়ানদের নিয়ে নাড়াচাড়া করা যায়। কিন্তু, প্রথম পাঁচ ব্য়াটসম্য়ানকে নিয়মিত রাখতে হবে। রোহিত, ধওয়ন ও বিরাট – প্রথম তিনে এই ব্য়াটসম্য়ানরা পাকাপোক্ত। কিন্তু, চার নম্বরে একজন ধারাবাহিক ব্য়াটসম্য়ান চাই। কেদার, মণীশ, রাহুল, ধোনি, হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে এভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলালে চলবে না।  পরীক্ষা-নীরিক্ষা যতই সফল হোক, স্থায়ী সমাধান একটা চাই ইংল্য়ান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে। দাদা আরও বলেন, ইংল্য়ান্ডে বল ব্য়াটে অনেক তাড়াতাড়ি আসে। প্রথম তিন ব্য়াটসম্য়ান শুরুতে ফিরে যেতেই পারে! তাই চার নম্বর ব্য়াটসম্য়ানকে তৈরি রাখতে হবে এখন থেকেই। রাহুল বা রাহানের মতো একজন স্পেশালিস্ট ব্য়াটসম্য়ানকে চাই ওই পজিশনে। টিম ম্য়ানেজমেন্ট যদি রাহুলকে চার নম্বরে খেলাতে চায়, তাহলে ওকে ওই পজিশনেই খেলিয়ে যাক। ওকে ব্য়াটিং অর্ডারে নিচের দিকে ঠেলে দিয়ে কোনও কাজ হবে না। আশা করি, টিম ম্য়ানেজমেন্ট স্থায়ী সমাধান বের করবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *