নেহেরার অবসরে আবেগী যুবরাজ। ফেসবুকে লিখলেন বিদায়ী ম্যাসেজ 1

গত বুধবার ক্রিকেট কেরিয়ারে নিজের শেষ ম্যাচ খেলা ভারতীয় ফাস্ট বোলার আশিস নেহেরার জন্য চারদিক থেকেই এই মুহুর্তে শুভেচ্ছা বার্তা আসছে। কিন্তু ভারতীয় দলে তার এক সময়ের সতীর্থ যুবরাজ সিংয়ের শুভেচ্ছা বার্তা বোধ হয় সবার উপরে থাকবে। ২০১১ বিশ্বকাপের এই হিরো সদ্য অবসর নেওয়া এই পেসারের প্রশংসা করে লেখেন, ‘ কে ছিল সেই মজার মানুষ, যিনি কখনও দলকে হারতে দেন নি’। ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টে ‘রেজিলেন্স অফ মিস্টার আশিস নেহেরা’ শিরোনামে যুবরাজ এই জোরে বোলারে হার না মানা মনোভাবের প্রশংসা করে নেহেরা সম্পর্কে ড্রেসিং রুমের বেশ কিছু গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন নেহেরার এই নামটি প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর দেওয়া। ফেসবুকে ঠিক কি লিখেছেন যুবরাজ?
“ এটা আমার কাছে খুবই আবেগের একটি মুহুর্ত। এবং আমি নিশ্চিত এটা নেহেরা এবং তার পরিবারের ক্ষেত্রে দারুণ আবেগের একটি মুহুর্ত। আমি কৃতজ্ঞ যে, ক্রিকেট আমাকে এমন একটি সত্যিকারের বন্ধু দিয়েছে, যার বন্ধুত্ব আমি সারাজীবন উপভোগ করব”। ফেসবুকে তার পোস্টে আশিস নেহেরে সম্পর্কে বলতে গিয়ে যুবরাজ লিখেছেন, নেহেরা সম্পর্কে যে কথা আমি প্রথমেই বলতে চাই তা হল ও একজন সত্যিকারের সৎ মানুষ… ওহ দিল কা বহুত সাফ আদমি হ্যায় (ও মনের দিক থেকে খুব পরিস্কার একজন মানুষ)। কিছু মানুষের জন্য ও ঠোঁটকাটা, তার জন্য ওকে বিপদেও পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে ও একজন মজাদার মানুষ, যে সৎ এবং যে কখনোই নিজের দলকে হারতে দেয় নি। আমার সঙ্গে ওর প্রথম সাক্ষাৎ অনুর্দ্ধ ১৯ দলে খেলার সময়, যখন ও ভারতীয় দলের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। ও হরভজন সিংয়ের সংগে রুম শেয়ার করেছিল। সেই সময় আমি ভাজ্জির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখেছিলাম একজন লম্বা রোগা পাতলা মানুষ কিছুতেই একজায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছে না। ওর অবস্থা অনেকটা গরম টিনের ছাদের উপর বিড়ালের মত ছিল। এক মুহুর্ত হয়ত ও বসে আছে, হঠাৎই পরের মুহুর্তেই উঠে দাঁড়িয়ে স্ট্রেচ করছে নয়ত মুখে অঙ্গভঙ্গি করছে অথবা গোল গোল করে চোখ ঘোরাচ্ছে। আমি খুব মজা পেয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল কেউ বোধ হয় ওর প্যান্টে এক মুঠো পিঁপড়ে ছেড়ে দিয়েছে। পরে যখন আমরা একসঙ্গে ভারতের হয়ে খেলছি আমি বুঝতে পারি এটাই হচ্ছে আশু – যে কখনও স্থির থাকতে পারে না। সৌরভ গাঙ্গুলী আশুকে পোপট ডাক নাম দিয়েছিল বেশি কথা বলার জন্য। আমার মনে হয় ও জলের তলাতে থাকা অবস্থাতেও কথা বলতে পারে। উপরন্তু ও দারুণ মজাদার। আমার ক্ষেত্রে ওর কথা বলার দরকার পড়ে না, ওর বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মধ্যেই এমনটা ব্যাপার আছে যা আমার কাছে খুবই মজাদার। আগার আপ আশিস নেহেরাকে সাথ হো তো আপকা দিন খারাব নেহি যা সাকতা… নো চান্স। ওহ বান্দা আপকো হাসা হাসা কে গিরা দেগা ( যদি আপনি আশিস নেহেরার সঙ্গে থাকেন তবে কখনোই আপনার দিন খারাপ যাবে না… নো চান্স। ও আপনাকে হাসিয়ে হাসিয়ে মাটিতে ফেলে দেবে)। আমি এসব কথা ওকে কখনোই বলি নি, কিন্তু গোপনে আমি ওর কাছ থেকেই ইন্সপায়ারড হয়েছি। আমি সবসময়ই ভাবি যদি এই মানুষটা ৩৮ বছর বয়েসেও ওর এত চোট আঘাত আর অস্ত্রপোচার নিয়েও জোরে বোল করতে পারে, ৩৬ বছর বয়েসে আমি কেনো ব্যাট করতে পারব না! সত্যি বলতে কি এই ভাবনাটাই আমি মনের মধ্যে নিয়ে চলি এমনকী এখনও। আশুর শরীরে ১১টা অস্ত্রপোচার হয়েছে – এলবো, কোমর, এঙ্কেল, আঙুল, দুটো হাঁটু মোটে কয়েকটা মাত্র নাম। এত কিছু সত্ত্বেও যা ওকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত আরও কঠোর পরিশ্রমের দিকে, তা হলে আরও ভালো কিছু করা খিদে। আমার মনে পড়ছে ২০০৩ ওয়ার্ল্ড কাপের সময় খুব খারাপ ভাবে ওর গোড়ালি মচকে গিয়েছিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে ওর খেলার কোনো সম্ভবনাই ছিল না। কিন্তু নেহেরা জি প্রত্যেক প্লেয়ারের কাছে গিয়ে গিয়ে বলেছে যে ও খেলতে চায়। এতসব কিছুর পরেও, সকলেই এমনকী ডারবানের হোটেল অ্যাটেনডেন্টসরাও জেনে গেছিল আশু খেলার জন্য কতটা মরিয়া। আগলে ৭২ আওয়ারস উসনে ৩০-৪০ বার আপনে অ্যাঙ্কেল কি আইসিং করাই, টাপিং করাই, পেন কিলার খাইয়ি (আগামি ৭২ ঘন্টা ও ৩০-৪০ বার নিজের অ্যাঙ্কেলের আইসিং করিয়েছে,ট্যাপিং করিয়েছে, পেন কিলার খেয়েছে), এবং অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনকভাবে খেলার জন্য তৈরি হয়ে গেলো। বাইরের দুনিয়া মনে করত যে ও এগুলো নিয়ে কেয়ার করে না, কিন্তু আমরা জানি ও ঠিক কতটা মরিয়া হয়ে এগুলো নিয়ে ভাবত। ২৩ রানে ৬ উইকেট নেয় ওই ম্যাচে আর ভারত জিতে যায়। আশু একজন আদ্যন্ত টিমম্যান। ২০১১ ওয়ার্ল্ডকাপে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত বলও করেছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চোট পাওয়ায় ও ফাইনালে খেলতে পারে নি। আমি অনেক খেলোয়াড়দেই চিনি যারা এই সময় আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে, চুপচাপ হয়ে যায়। কিন্তু ও সেরকম নয়। ওহ হাসতা রেহেতা থা (ও হাশিখুশি থাকত) এবং সবসময় অন্য সাহায্য করার জন্য তৈরি থাকত। ও আমাদের সঙ্গে ফাইনালের দিন মুম্বাইতে ছিল, এবং আমাদের জন্য জল, টাওয়াল সব এগিয়ে দিয়েছিল, এমনকী যখন পরামর্শের প্রয়োজন হয়েছে তাও এগিয়ে এসেছে। বাইরের লোকের কাছে এসব হয়ত অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার, কিন্তু যখন আপনি কোনো টিম গেম খেলেন, এবং আপনি দেখেন যে আপনার সঙ্গে এমন একজন সিনিয়ার টিম মেম্বার রয়েছে যে অক্লান্তভাবে পেছনের ব্যাপারগুলোকে সামলাতে এগিয়ে আসছে তখন ব্যাপারটা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে। ওর একটা দারুণ পরিবার রয়েছে। ওর দুজন সুন্দর ছেলে মেয়েও রয়েছে—আরুষ এবং আরাইনা। আরুষও বোলিং করে, এবং ওর বোলিং অ্যাকশন ওর বাবার থেকেও অনেক ভালো (ভগবানকে এর জন্য ধন্যবাদ, লোল)। আশু নিজের ব্যাটিং নিয়ে কখনও নম্র হয়নি। যখন ও ওর ব্যাটিং দক্ষতাকে কিংবদন্তি আখ্যা দিত আমি হাসতে হাসতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়তাম। শুধু তাই নয় ও দাবী করত যে ও যদি একজন ব্যাটসম্যান হত তাহলে ও ৪৫ বছর অব্ধি খেলতে পারত। এটা আমার কাছে একটা আবেগী মুহুর্ত, এবং আমি নিশ্চিত ওর এবং ওর পরিবারের কাছেও তা। আমি কৃতজ্ঞ যে একজন সত্যিকারের বন্ধু পেয়েছি যাকে সারাজীবন হৃদয়ে রাখা যায়”।
নেহেরার অবসরে আবেগী যুবরাজ। ফেসবুকে লিখলেন বিদায়ী ম্যাসেজ 2

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *