WTC Final: কেনিংটন ওভালে চতুর্থ দিনের শেষে বলা যায় যে অ্যাডভান্টেজ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালের প্রথম দুই দিন নিজেদের হাতের মুঠোয় রেখেছিলো ব্যাগি গ্রিনরাই। তৃতীয় দিন অজিঙ্কা রাহানে, শার্দুল ঠাকুরের ব্যাটে খানিক প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিলো ভারত। ম্যাচের দাঁড়িপাল্লায় সাম্য আনতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকে খানিকটা নিজেদের দিকে টেনে আনতে পেরেছিলো ‘টাগ অফ ওয়ারের’ দড়ি। আজ অর্থাৎ চতুর্থ দিনে ফের একবার ভারতকে নিঃসন্দেহে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন স্টিভ স্মিথ, প্যাট কামিন্সরা। ২০২১ সালে সাউদাম্পটনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেরে টেস্টে সেরা হওয়ার সম্ভাবনার সলীল সমাধি হয়েছিলো ভারতের। ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সুযোগকেও ভারত টেমসের জলে ভাসিয়ে দেবে কিনা সেই উত্তর পাওয়া যাবে কাল। তবে চতুর্থ দিনের শেষে খেলা যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে আপাতত ডন ব্র্যাডম্যানের দেশই যে ‘ফেভারিট’ তা বললে বিন্দুমাত্র অত্যুক্তি করা হয় না। ৪৪৪ তাড়া করতে নেমে ভারতের স্কোর এখন ১৬৪/৩। এখনও ২৮০ রানে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। আগামীকাল লাল বল হাতে রূপকথা লেখার স্বপ্ন দেখতেই পারেন কামিন্স-স্টার্করা। তাঁদের গোলাগুলির সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ানোর কাজটা করতে হবে রাহানে এবং বিরাট কোহলিকেই।
Read More: WTC Final: ওভালে ‘বেনিফিট অফ দ্য ডাউট’ পেলেন না শুভমান গিল, উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে ভারত !!
ভারতের ওপর চাপ বাড়ালেন ক্যারি-স্টার্ক-

তৃতীয় দিনের শেষে সাজঘরে ফিরেছিলেন মার্নাস লাবুশেন এবং ক্যামেরন গ্রিন। চতুর্থ দিনের সকালে লাবুশেনের ইনিংস বেশীদূর এগোতে দেন নি উমেশ যাদব। অতিরিক্ত বাউন্সে যেভাবে প্রথম ইনিংসে কোহলিকে ফিরিয়েছিলেন স্টার্ক, ঠিক একইভাবে লাবুশেনকে আউট করলেন উমেশ যাদব। ব্যক্তিগত ৪১ রানের মাথায় পূজারার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ক্যামেরন গ্রিনকে আউট করেন জাদেজা। বাঁ-হাতি স্পিনারের বল রুখে দিতে চেয়েছিলেন গ্রিন। কিন্তু তা প্রায় গড়িয়ে গিয়ে স্টাম্প ভেঙে দেয়। দ্রুত দুই উইকেট তুলে নিয়ে আশার সঞ্চার হয়েছিলো ভারতীয় শিবিরে। গতকাল ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন যে ৩৫০ রানের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার লিডকে বেঁধে রাখতে পারলে জয়ের সম্ভাবনা থাকবে ভারতের। লাবুশেন এবং গ্রিনের উইকেট নিয়ে সেই স্বপ্নই দেখিয়েছিলেন উমেশ ও জাদেজা।
আশার প্রদীপ নিভতে অবশ্য সময় লাগলো না। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার অ্যালেক্স ক্যারির সাথে জুটি বেঁধে অজি ইনিংসকে লম্বা করলেন মিচেল স্টার্ক। চার পেসারকে নিরন্তর ব্যবহার করেও এই জুটিকে ভাঙতে বেশ বেগ পেতে হলো ভারতকে। দ্বিতীয় ইনিংসে একমাত্র অস্ট্রেলীয় ব্যাটার হিসেবে অর্ধশতকের গণ্ডী পেরোন তিনি। অপরাজিত থাকেন ৬৬ রান করে। শামির বলে ব্যক্তিগত ৪১ রানের মাথায় আউট হন স্টার্ক। অজি অধিনায়ক কামিন্স ৫ বলে ৫ রান করে শামির দ্বিতীয় শিকার হলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয় তারা। স্কোরবোর্ডে তখন ২৭০/৮। আগের ইনিংসের ১৭৩ যোগ করে মোট লিড় দাঁড়ায় ৪৪৩। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৪৪।
কোহলি আর রাহানেই এখন ভরসা ভারতের-

ওভালের ইতিহাস বলছে ২৬৩ রানের বেশী চতুর্থ ইনিংসে তাড়া করে জয়ের কোনো নজির নেই। সেখানে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য স্পর্শ করা যে কঠিন হবে তা বলাই বাহুল্য। প্রথম ইনিংসে যেভাবে ভারতের টপ অর্ডার ধ্বসে পড়েছিলো তেমনটা না হলেও আজ আবার ভারতীয় ব্যাটিং- মন ভরাতে পারলো না। দেশের মাটিতে রানের পাহাড় গড়েছিলেন শুভমান গিল। ইংল্যান্ডের পিচে আবার সমতলে নেমে আসতেই হলো তাঁকে। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৩। দ্বিতীয় ইনিংসে থামলেন ১৯ বলে ১৮ রান করে। অবশ্য দুর্ভাগ্যও সঙ্গী হলো তাঁর। স্কট বোল্যান্ডের লাফিয়ে ওঠা বল তাঁর ব্যাটের কোণা স্পর্শ করে গালিতে ক্যামেরন গ্রিনের হাতে জমা পড়ে। গ্রিনের ক্যাচটি আদৌ বৈধ কিনা তা নিয় বিতর্ক হতে পারে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ফিরলেন নাথান লিয়ঁকে স্যুইপ মারতে গিয়ে। তাঁর সংগ্রহ আজ ৪৩ রান।
রোহিত আউট হওয়ার কিছু পরেই ফেরেন চেতেশ্বর পূজারাও। ম্যারাথন রান চেজে তাঁর থেকে লম্বা ইনিংসের আশায় ছিলেন ভারতীয় সমর্থকেরা। কিন্তু ২৮ রানের বেশী এগোলো না পূজারার ইনিংস। প্রথম ইনিংসে ডুবতে থাকা ভারতীয় ইনিংসের নাবিক হয়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে ফের একবার ভারতের মানরক্ষার দায় তাঁর কাঁধেই। বাইশ গজের অপর প্রান্তে রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র বিরাট কোহলি। আজ তৃতীয় সেশনে তিনি খেলেছেন ৬০ বল। বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে তাঁকে। ৭টি চারের সাহায্যে তিনি ৪৪ রান করে অপরাজিত রয়েছেন চতুর্থ দিনের শেষে। রাহানের সংগ্রহ আজ ৫৯ বলে ২০*। টিম ইন্ডিয়ার স্কোর বর্তমানে ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১৬৪। জয়ের জন্য এখনও চাই ২৮০ রান। ৯০ ওভার আর হাতে ৭ উইকেট। এই সহজ সমীকরণ মাথায় রেখেই শেষ দিনে মাঠে নামতে হবে ভারতকে। লড়াই কঠিন, তবে খেলার মাঠে ‘মিরাকল’ তো মাঝেমধ্যেই হয়।