IND vs WI: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হারের পর এক মাসের বিরতি পাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজ হওয়ার কথা থাকলেও ভেস্তে গিয়েছে সেই পরিকল্পনা। জুলাইয়ের ১২ তারিখ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরছে টিম ইন্ডিয়া। এক মাসব্যপী ক্যারিবিয়ান সফরে টেস্ট, একদিনের ম্যাচের পাশাপাশি টি-২০’ও খেলবে ভারত। এই বছরেই অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে রয়েছে এশিয়া কাপ, তারপরে অক্টোবর-নভেম্বরে রয়েছে একদিনের বিশ্বকাপ। তার আগে উইন্ডিজ সফরে কোন দল নিয়ে যায় ভারত, তা নিয়ে ছিলো জল্পনা। সেই জল্পনার অবসান হলো গতকাল। টেস্ট ও একদিনের দল ঘোষণা করলো বিসিসিআই। টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে হারের পর লাল বলের ক্রিকেটে নতুন মুখেদের জায়গা দেওয়ার প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে বোর্ডের। যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal), ঋতুরাজ গায়কোয়াড়রা (Ruturaj Gaikwad) পেয়েছেন সুযোগ। বাদ পড়েছেন বহু যুদ্ধের ঘোড়া চেতেশ্বর পূজারা (Cheteshwar Pujara), উমেশ যাদব (Umesh Yadav)। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে মহম্মদ শামিকে (Mohammed Shami)।
একদিনের দলের ক্ষেত্রেও টিম ইন্ডিয়া বিশ্বকাপের আগে হেঁটেছে পরীক্ষানিরীক্ষার পথে। অধিনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে রোহিত শর্মাকেই (Rohit Sharma)। দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড়ের মাঝেও দুই ফর্ম্যাটে নেতৃত্ব বজায় রেখেছেন তিনি। বিরাট কোহলি, শুভমান গিল, হার্দিক পান্ডিয়াদের পাশাপাশি দলে ফেরানো হয়েছে ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে (Ruturaj Gaikwad)। ঋষভ পন্থ, কে এল রাহুল চোটের জন্য বাইরে। এমতাবস্থায় সঞ্জু স্যামসনের (Sanju Samson) প্রত্যাবর্তনকে ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঈশান কিষণের (Ishan Kishan) পাশাপাশি উইকেটিকিপিং বিকল্প হিসেবে সঞ্জুকেও পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা থাকবে ভারতের। টেস্টের মত একদিনের দলেও জায়গা পেয়েছেন যশস্বী জয়সওয়াল (Yashasvi Jaiswal)। বপছর ২১-এর বাঁ-হাতি ব্যাটার টেস্ট ম্যাচে পূজারার ছেড়ে যাওয়া তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নামতে পারেন। একদিনের দলে আপাতত তাঁর জায়গা হতে পারে মিডল অর্ডারে। উইন্ডিজ সফরের জন্য টেস্ট ও একদিনের ক্রিকেটে যে দল ভারত ঘোষণা করেছে তাতে নবীন ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ভারসাম্য থাকলেও একজনের অনুপস্থিতি অবাক করেছে অনেককেই। তিনি বাংলার ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha) ।
Read More: WC 2023: ওডিআই বিশ্বকাপের আগে দুঃসংবাদ, ICC করলো এই বোলারকে নিষিদ্ধ !!
ফর্মে থেকেও ব্রাত্য ঋদ্ধিমান সাহা-

ভারতীয় দলের জার্সিতে টেস্ট ক্রিকেটে দীর্ঘ সময়ে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha) । গোটা বিশ্ব মুগ্ধ হয়ে দেখেছে শিলিগুড়ির ক্রিকেটারের উইকেটিকিপিং। ব্যাট হাতেও বেশ কিছু ভালো পারফর্ম্যান্স রয়েছে তাঁর। উইন্ডিজের মাটিতেই কঠিন পরিস্থিতিতে রবিচন্দ্রণ অশ্বিনকে সাথে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। করেছিলেন শতরান। এছাড়াও ইডেনে ঘূর্ণি উইকেটে দুই ইনিংসে অর্ধশতরান করে ম্যাচ জেতানোর নজির আছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শতরান করেছেন। তার পরেও ২০২১ সালে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) গুড বুকে থাকতে না পেরে।
দল থেকে বাদ পড়ার পরেও নিরন্তর ভালো খেলে গিয়েছেন। বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরার জার্সিতে রঞ্জি খেলতে নেমে করেছেন শতরান। আইপিএলেও দারুণ পারফর্ম্যান্স তাঁর। ২০২২ সালে গুজরাত টাইটান্সের (GT) হয়ে জিতেছেন খেতাব। এবারও লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের (LSG) বিরুদ্ধে ঝোড়ো ৮২, আইপিএল ফাইনালে চেন্নাইয়ের (CSK) বিরুদ্ধে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। উইকেটের পিছনে দুরন্ড ডাইভ দিয়ে একাধিক ক্যাচ ধরে বুঝিয়েছেন ৩৮ বছরেও ফিটনেসে ঘাটতি নেই তাঁর। তবুও জাতীয় দলে ঋদ্ধির ((Wriddhiman Saha) বিরুদ্ধে বঞ্চনার ছবিটা অব্যাহত। ঋষভ পন্থের অবর্তমানে অধিকাংশ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ চেয়েছিলেন টেস্ট দলে উইকেটরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব সামলান ঋদ্ধিমান সাহা। কিন্তু উইন্ডিজগামী দলে উইকেটরক্ষক হিসেবে কে এস ভরত (KS Bharat) এবং ঈশান কিষণকেই (Ishan Kishan) জায়গা দেওয়ার পথে হেঁটেছে ভারতীয় দল।
সফর শেষ ঋদ্ধিমানের, জানাচ্ছে বোর্ড-

দুর্ঘটনার আহত ঋষভ পন্থের বিকল্প খুঁজতে হিমশিম ভারতীয় দল। কে এস ভরতকে সুযোগ দেওয়া হলেও বেশ নড়বড়ে দেখিয়েছে তাঁকে। ক্যাচ ছেড়েছেন বেশ কয়েকটি। ব্যাট হাতেও কোনো উলেক্ষযোগ্য ইনিংস এখনও খেলতে পারেন নি । উইকেটের পিছনে ভারতের ভরসা হতে পারতেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha)। মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) ছায়ায় কেরিয়ারের একটা দীর্ঘ সময় ঢাকা পড়তে হয়েছিলো তাঁকে। ২০১৪ সালে ধোনি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর সাদা জার্সিতে নিয়মিত হয়ে ওঠেন তিনি। দীর্ঘ সময় উইকেটরক্ষক হিসেবে দলের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনিই। ঋষভ পন্থের (Rishabh Pant) উত্থানের পরেও কঠিন উইকেটে দস্তানা হাতে ঋদ্ধিতেই আস্থা রাখতেন পূর্বতন কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তবে ছবিটা বদলে যায় রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) কোচ হিসেবে আসার পর। বয়সের দোহাই দিয়ে তিনি ছেঁটে ফেলেন ঋদ্ধিকে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত অর্ধশতক করেও বাদ পড়তে হয় তাঁকে।
ফিটনেসে যে বয়স থাবা বসায় নি তা এই আইপিএলেও প্রমাণ করে দিয়েছেন ঋদ্ধি (Wriddhiman Saha)। অনবদ্য সব ক্যাচ নিয়েছেন। নূর আহমেদ, রশিদ খানদের ঘূর্ণির বিপরীতে তাঁর কিপিং থেকে চমকে গিয়েছে বিশ্ব। তবুও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভাবা হয় নি তাঁকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও মিললো না সুযোগ। ঋদ্ধিমান (Wriddhiman Saha) যে আর ফিরবেন না তা জানিয়ে দিয়েছেন বোর্ড কর্তারাও। এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, “আমাদের এখন ঋদ্ধিমানকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে তাকাতে হবে। ও যে দেশের সেরা উইকেটরক্ষক, তাতে সন্দেহ নেই। তবে ওর বয়স ৩৮, সেটাও অস্বীকার করা যায় না। ঈশান (কিষণ), (কে এস) ভরত, উপেন্দ্র যাদবদের মত তরুণ প্রতিভাকে আমাদের ঘষেমেজে নিতে হবে।”