১৯৮৯ সালে যখন শচীন তেন্ডুলকর প্রথমবার টিম ইন্ডিয়ার (Team India) জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায় পা রেখেছিলেন তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ১৬। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিষেক সিরিজে মোকাবিলা করেছিলেন ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আক্রমদের (Wasim Akram)। আব্দুল কাদিরের মত স্পিনারকে যেভাবে বারবার আছড়ে ফেলেছিলেন মাঠের বাইরে তা নিয়ে আজও চর্চা চলে ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে। আরও একবার দেশের ক্রিকেট অঙ্গলে শচীনের স্মৃতি ফেরালেন এক কিশোর। ১৬ নয়, তাঁর বয়স আরও কম। মাত্র ১৩ বছরের বৈভব সূর্যবংশী (Vaibhav Suryavanshi) অস্ট্রেলিয়ার অনুর্দ্ধ-১৯ দলের বিরুদ্ধে ভারতের জার্সি গায়ে যেভাবে ব্যাটিং করলেন তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভাষা হারিয়েছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাই। ধুন্ধুমার শতরানে মেতে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
Read More: “খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে…” সিরিজের সেরা হয়ে খুশি অশ্বিন, রোহিত শর্মা কে নিয়ে দিলেন বড় বয়ান !!
বৈভবের বিক্রমে ত্রস্ত অস্ট্রেলিয়া-
ওডিআই সিরিজে অস্ট্রেলিয়া’র অনুর্দ্ধ-১৯ দলকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়েছে ভারতের অনুর্দ্ধ-১৯ দল (India U-19)। পুদুচ্চেরিতে আয়োজিত তিনটি ম্যাচ’ই জিতেছে ‘বয়েজ ইন ব্লু।’ চেন্নাইতে চার দিনের প্রথম ম্যাচটিতে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক সাইমন বাজ (Simon Budge)। রাইলি কিংসেলের ৫৩, ক্রিশ্চিয়ান হাউ-এর ৪৮ ও এইডান ও’কনরের ৬১ রানের সৌজন্যে তারা তোলে ২৯৩ রান। ভারতের অনুর্দ্ধ-১৯ দলের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন সমর্থ নাগরাজ ও মহম্মদ এনান (Mohammad Enaan)। ২টি উইকেট পান আদিত্য রাওয়াত। একটি করে সাফল্য আদিত্য সিং ও সোহম পটবর্ধনের। ভারতের হয়ে ওপেন করতে নামেন বিহান মালহোত্রা ও বৈভব সূর্যবংশী (Vaibhav Suryavanshi)। তাঁদের জুটির সৌজন্যে শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছিলো দল।
বিহান খানিক সময় নিয়েছেন ক্রিজে থিতু হতে। কিন্তু বছর ১৩-এর বৈভব (Vaibhav Suryavanshi) ছিলেন আগাগোড়া আগ্রাসী। অজি বোলারদের বাউন্ডারির ঠিকানায় পাঠিয়েছেন নিয়মিত। এইডেন ও’কনার, হেডেন শিলার, টমাস ব্রাউন’রা চেন্নাইয়ের মাঠে বারবার হতদ্যম হয়ে পড়েছেন বৈভবের ব্যাটিং বিক্রম রুখতে গিয়ে। মাত্র ৫৮ বলে শতরানের মাইলস্টোন স্পর্শ করে ফেলেন বিহারের ক্রিকেটার। ক্রিকেটের পরিভাষায় যাকে ‘ড্যাডি হান্ড্রেড’ বলা হয় তা অবশ্য করে উঠতে পারেন নি তিনি। ৬২ বলে ১০৪ করে উইকেট হারান তিনি। মারেন ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কা। বিহান আউট হন ৭৬ রান করে। দুই ওপেনার ফেরার পর চাপে পড়ে ভারতীয় দল (India U-19)। একটা সময় মনে হয়েছিলো বড় রানের লিড নেবে তারা। কিন্তু শেষমেশ ২৯৬ তে থামতে হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত অজি বোলার বিশ্ব রামকুমার পেয়েছেন ৪টি উইকেট।
রঞ্জি ট্রফিতে রেকর্ড গড়েছেন বৈভব-
এই প্রথম নয়, এর আগেও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের লাইমলাইট কেড়ে নিয়েছিলেন বিহারের বৈভব সূর্যবংশী (Vaibhav Suryavanshi)। গত জানুয়ারি মাসে মাত্র ১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে রঞ্জি ট্রফি (Ranji Trophy) খেলতে নেমেছিলেন তিনি। বিহারের হয়ে খেলেন মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে। টুর্নামেন্টের ৯০ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে চতুর্থ কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। তালিকায় সবার উপরে রয়েছেন রাজপুতানা’র আলিমুদ্দীন (Alimuddin), যিনি ১৯৪২-৪৩ মরসুমে ১২ বছর ৭৩ দিন বয়সে রঞ্জিতে খেলেছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে এস কে বোস (SK Bose), ১৯৫৯-৬০ মরসুমে বিহার বনাম অসম ম্যাচে তিনি মাঠে নেমেছিলেন ১২ বছর ৭৬ দিন বয়সে।
তৃতীয় স্থানে মহম্মদ রমজান (Mohammad Ramzan)। নর্দার্ন ইন্ডিয়ার হয়ে ইউনাইটেড প্রভিন্সের বিরুদ্ধে ১৯৩৭-৩৮ মরসুমে মাত্র ১২ বছর ২৪৭ দিন বয়সেই রঞ্জি অভিষেক হয়েছিলো তাঁর। চার নম্বরে রয়েছেন বৈভব (Vaibhav Suryavanshi)। নিজের প্রথম রঞ্জি মরসুমে ২টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান বিহারের ‘বিস্ময় বালক।’ মুম্বইয়ের বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেন ১৯ ও ১২। ছত্তিশগড়ের বিরুদ্ধে অবশ্য ‘কিং পেয়ার’ বা দুই ইনিংসেই শূন্য করেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখনও পায়ের তলার মাটি শক্ত হয় নি তাঁর। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শতরানের আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত-বি অনুর্দ্ধ-১৯ (India B U-19) দলের হয়ে কিছু চমৎকার ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।