ঘোর ডামাডোলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট। টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিলেন বাবর আজম, মহম্মদ রিজওয়ানরা। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত চোটের কারণে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi)। এরপর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ল্যাজেগোবরে হয়ে টেস্ট সিরিজ হেরেছে পাকিস্তান। নিজেদের পছন্দে পিচ বানিয়েও বেন স্টোকসদের কাছে ৩-০ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে পাক দল। সর্বস্তরে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান্ রামিজ রাজাকেও (Ramiz Raja) সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। নিজের স্বল্পদিনের দায়িত্বকালেই একাধিকবার অহেতুক ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য করে আদপে পাক ক্রিকেটকে বিশ্বের দরবারে একঘরে করে দিচ্ছিলেন রাজা। তাঁকে সরিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে হয়েছে বোর্ডকে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এসেছেন নাজম শেঠি (Najam Sethi)। পরিকল্পনার অভাবে ধুঁকতে থাকা পাক দলকে সঠিক রাস্তায় ফেরাতে প্রধান নির্বাচক মহম্মদ ওয়াসিমকে সরিয়ে অস্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিংবদন্তী শাহীদ আফ্রিদিকে (Shahid Afridi)। টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও সামান্য আশার আলো দেখছেন পাক ভক্তরা। হাঁটুর চোট সারিয়ে বাইশ গজে ফেরার দিকে এগোচ্ছেন পেস সুপারস্টার শাহীন শাহ আফ্রিদি।
শাহীনের অভাব ভালোই বোধ করেছে পাকিস্তান-
বাঁ-হাতি পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদিকে (Shaheen Shah Afridi) এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা পেস প্রতিভা বলে মনে করা হয়। ২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপে একাই ভারতকে ধসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ভারতের তিন ব্যাটিং মহাতারকা রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), কে এল রাহুল এবং বিরাট কোহলির (Virat Kohli) উইকেট তুলে নিয়ে এসেছিলেন পাদপ্রদীপের আলোয়। বয়সে তরুণ হলেও ইতিমধ্যেই পাক বোলিং-এর অঘোষিত নেতা বলা যায় তাঁকে। গুরুত্বপূর্ণ বোলারকে হারিয়ে তাই ব্যাকফুটেই রয়েছে আপাতত পাক দল। ২০২২ এশিয়া কাপের আগে থেকেই হাঁটুর সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এশিয়া কাপে দলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী গেলেও ক্রাচে ভর দিয়েই তাঁকে হাঁটতে দেখা গিয়েছিলো। টি-২০ বিশ্বকাপের আগে মাঠে ফিরেছিলেন তিনি। প্রথম কিছু ম্যাচে আশানুরূপ বল করতে না পারলেও টুর্নামেন্টের সঠিক সময়ে ছন্দেও ফিরেছিলেন তিনি। নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। তবে শাহীনের (Shaheen Shah Afridi) দুর্ভাগ্য যে ফাইনালে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আবার হাঁটুতে চোট পান তিনি। ইংল্যান্ডের কাছে ফাইনাল হারার পর পাক অধিনায়ক বাবর আজম (Babar Azam) স্বীকার করেন যে শাহীনের মাঠের বাইরে চলে যাওয়াই ম্যাচের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ছিলো। সেই ফাইনালের পর আর মাঠে নামতে পারেন নি তিনি। গ্যালারি থেকেই দেখেছেন টেস্টে জাতীয় দলের হতশ্রী পারফর্ম্যান্স।
শাহীনের কামব্যাক নিয়ে আশাবাদী শাহীদ আফ্রিদি-
গতকাল এক ট্যুইট বার্তায় PCB জানিয়েছে যে করাচীতে জাতীয় দলের সঙ্গে রিহ্যাব শুরু করেছেন শাহীন (Shaheen Shah Afridi) । পাক বোর্ডের অস্থায়ী প্রধান নির্বাচক শাহীদ আফ্রিদি আশাবাদী তারকা পেসারের প্রত্যাবর্তন নিয়ে। পাকিস্তান সুপার লীগেই মাঠে ফিরতে পারেন শাহীন এমনটাই জানাচ্ছেন তিনি। টিভি চ্যানেল সামা টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহীদ আফ্রিদি (Shahid Afridi) জানান, “ও(শাহীন) বোলিং শুরু করেছে। এখনও রিহ্যাব চলছে। জাতীয় দল এই মুহূর্তে করাচীতে রয়েছে তাই শাহীনকেও ওখানে রাখা হয়েছে। জাতীয় দলের সাথেই অনুশীলন করছে। আজ (সোমবার) বোলিং শুরু করেছে ও। আগামীকাল সম্ভবর ব্যাটিং-এর পরিকল্পনা রয়েছে। ওকে যথাযথ অনুশীলন আর বিশ্রামের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।” শাহীনের পাশাপাশি চোটের কারণে বাইরে আরেক পেস তারকা হ্যারিস রউফও (Haris Rauf)। তাঁকেও ডেকে পাঠানো হয়েছে করাচীতে। দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু শাহীন আর হ্যারিস একই সাথে রিহ্যাব করুক, এমনটাই চেয়েছেন তিনি। দাবী করলেন শাহীন আফ্রিদি (Shaheen Shah Afridi) । সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে PCB-কে অনুরোধ করেছিলাম হ্যারিসকেও করাচীতে ডাকার জন্য, কারণ বন্ধুত্ব অটুট থাকা প্রয়োজন। অনুশীলনের সময় একজন বন্ধুকে প্রয়োজন হয়, এতে পরিবেশ ইতিবাচক থাকে।” একদিনের বিশ্বকাপের আগে সেরা ফর্মে ফিরুন দুই পেসারই, এমনটাই প্রার্থনা করছে পাকিস্তান।