World Cup 2023: চলছে বিশ্বকাপের প্রহর গোনা। প্রতিযোগিতা শুরুর ঠিক ১০০ দিন আগে ক্রীড়াসূচী ঘোষণা করে দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। আগামী ৫ অক্টোবর নিউজিল্যান্ড বনাম ইংল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে শুরু হতে চলেছে বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023)। চলবে ১৯ নভেম্বর অবধি। ৪৬ দিন ব্যপী টুর্নামেন্টে থাকছে ৪৮টি ম্যাচ। ১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১-এর পর তৃতীয়বারের জন্য ক্রিকেটের মেগা ইভেন্ট আয়োজন করার সুযোগ পাচ্ছে ভারত।
এর আগের তিনবারই শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের মত উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের সাথে আয়োজক হিসেবে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে হয়েছে বোর্ডকে। এবারই প্রথম একক দায়িত্ব ভারতের কাঁধে ন্যস্ত করেছে আইসিসি। এই বিশেষ অভিজ্ঞতাকে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না বিসিসিআই। যে সূচী সামনে এসেছে তা অনুযায়ী দশটি শহরে বসছে মূলপর্বের খেলা। তালিকায় রয়েছে- আহমেদাবাদ, মুম্বই, কলকাতা, ধর্মশালা, দিল্লী, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, লক্ষ্ণৌ, হায়দ্রাবাদ এবং পুণে। স্টেডিয়ামগুলিকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছে বোর্ড।
২০১১ সালে দেশের মাটিতে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছিলো ভারত। এরপর থেকে আয়োজক দেশের বিশ্বকাপ জয়ের যেন এক ট্র্যাডিশন তৈরি হয়ে গিয়েছে। ২০১৫ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডকে রোমহর্ষক ফাইনালে হারিয়ে কাপ দেশে রেখে দেয় ইংল্যান্ড। সেই ধারা ২০২৩-এ অটুট রাখতে চায় ভারতীয় দল। কেবল ভারত নয়, টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চলা বাকি দেশগুলিও ইতিমধ্যেই ট্রফিকে পাখির চোখ করে শুরু করে দিয়েছে প্রস্তুতি।
দশ দলের প্রতিযোগিতাইয় আট দল ইতিমধ্যে জায়গা নিশ্চিত করেছে। জিম্বাবুয়ের মাটিতে চলছে যোগ্যতা অর্জন পর্ব। সেখানে সেরা দুই দল সুযোগ পাবে মূলপর্বে। কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে ফলাফল। গোটা ক্রিকেটবিশ্ব যখন চার বছরের অপেক্ষা শেষে বিশ্বকাপের আনন্দে মশগুল, সেখানে বেঁকে বসেছে কেবল পাকিস্তান। ভারতে আসা নিয়ে এখনও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না তারা।
Read More: World Cup 2023: পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এই বড় শর্ত মানতে হল আইসিসি’কে, এবার ভারতের হল বড় ক্ষতি !!
বিশ্বকাপের সূচী নিয়ে আপত্তি পাকিস্তানের-

আইসিসির তরফ থেকে যে সূচি প্রকাশ করা হয়েছে তা অনুযায়ী বিশ্বকাপের মেগা ম্যাচে ১৫ অক্টোবর ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এই নিয়ে অষ্টমবার উপমহাদেশের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ সম্মুখ সময়ে নামবে একদিনের বিশ্বকাপে। এর আগের ৭টি সাক্ষাতের প্রতিটিতেই জিতেছে ভারত। এবারও ফলাফলই একই রাখার চেষ্টা থাকবে বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মাদের (Rohit Sharma)। আইসিসি’র তরফে এই ম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামকে। কিন্তু ম্যাচের ভেন্যু নিয়ে আপত্তি তুলেছে পাকিস্তান। আহমেদাবাদে ভারতের মুখোমুখি হতে রাজী নয় তারা। ক্রিকেটারদের সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা। খসড়া সূচী সামনে আসার পরেই পাক বোর্ডের তরফে এই ম্যাচের মাঠ বদলানোর আবেদন করা হয়েছিলো। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় নি। চূড়ান্ত সূচীতেও আহমেদাবাদকেই এই মহাম্যাচের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
ভারত-পাক ম্যাচ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও ম্যাচের জায়গা পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছিলো পাকিস্তান। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চেন্নাইতে এবং অজিদের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে খেলার ব্যাপারে সম্মত ছিলো না তারা। এক্ষেত্রেও পাকিস্তানের দাবী মানে নি আইসিসি। অপরিবর্তিত রয়েছে ম্যাচের জায়গা। অতীতে পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো মুম্বই। শিবসেনা সমর্থকেরা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পিচ খুঁড়ে দিয়েছিলেন। ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল আয়োজিত হবে ওয়াংখেড়েতে। পুরনো স্মৃতি মনে রেখে মুম্বইতে খেলা নিয়েও দ্বিধায় পাকিস্তান বোর্ড (PCB)। এক বিবৃতিতে পাকিস্তান বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ, ভারতের বিরুদ্ধে আহমেদাবাদে খেলা বা যোগ্যতা অর্জন করলে মুম্বইতে সেমিফাইনাল খেলার ব্যাপারটা পুরোটাই নির্ভর করছে সরকারের ছাড়পত্র পাওয়ার উপর।”
বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের ক্রীড়াসূচী-
পাকিস্তানের ভারতসফর এখনও অনিশ্চিত-

২০১৬ সালে শেষবার টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে এসেছিলো পাকিস্তান। সেইবার ইডেন গার্ডেন্সে বৃষ্টিভেজা ম্যাচে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) ব্যাটে ভারতের বিরুদ্ধে হারতে হয়েছিলো পাক দলকে। এবারও যাবতীয় সমস্যা মিটিয়ে পাকিস্তান আসুক ভারতে, এমনটাই চাইছেন সকলে। কিন্তু এখনও অবধি কোনো রকম নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না বাবর আজমদের (Babar Azam) দেশের ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে। তারা বল ঠেলে দিচ্ছে দেশের সরকারের দিকে।
এখনও অবধি কোনো সরকারী বিবৃতি জারি করে নি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। তবে সেই দেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে কোনো এন ও সি বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায় নি। নাজম শেঠি (Najam Sethi) আচমকাই চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় পাক ক্রিকেটে বেড়েছে জটিলতা। পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচন ১৭ জুলাই অবধি পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে অচলাবস্থা।
পিসিবির তরফে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আইসিসিকে ওয়াকিবহাল করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে পিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছি যে বিশ্বকাপে আমাদের অংশগ্রহণ করা বা নির্দিষ্ট কোনো মাঠে খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। গোটা বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। তাই চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। একমাত্র সরকারী ছাড়পত্র পেলেই আমরা ভারতে যাবো।”