আইপিএলের ষোড়শ মরসুমের শুরুতেই অধিনায়ক প্রশ্নে সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (KKR)। পিঠের চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ারের (Shreyas Iyer)। মুম্বইয়ের মিডল অর্ডার ব্যাটারকে না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই অধিনায়ক বদলাতে হয়েছিলো বলিউড বাদশাহ’র দলকে। নতুন নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয় নীতিশ রানাকে (Nitish Rana)। ২০১৮ সাল থেকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাথে রয়েছেন নীতিশ। তাঁর অভিজ্ঞতা নেহাৎ কম নয়। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইনদের (Sunil Narine) নাম ঘোরাফেরা করলেও, তাই রানাকেই যোগ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত ও টিম ম্যানেজমেন্ট।
তবে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম মরসুমটা বিশেষ ভালো যায় নি রানার (Nitish Rana)। প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ডাকওয়ার্থ ল্যুইস পদ্ধতিতে হেরে গিয়েছিলো নাইট রাইডার্স (KKR)। মরসুমের শেষ ম্যাচেও ১ রানে হারতে হয় লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টসের বিরুদ্ধে। বাকি ম্যাচগুলিতেও ফর্মের ওঠানামা চলে লাগাতার। কখনও ইডেন গার্ডেন্সে স্পিন ত্রয়ীর দাপটে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে বা আহমেদাবাদে রিঙ্কু সিং-এর অবিশ্বাস্য ব্যাটিং-এর বদান্যতায় গুটিকয় ম্যাচ জিতলেও ধারাবাহিকতা দেখাতে পারে নি নাইট বাহিনী। ফলস্বরূপ দশ দলের লীগে সপ্তম স্থানেই শেষ করতে হয় তাদের। অধিনায়ক হিসবে দাগ কাটতে পারেন নি রানাও (Nitish Rana)। তবে ব্যাট হাতে বেশ ভালো খেলেন তিনি। তাঁর ব্যাটিং সাফল্যের কারণেই লক্ষ্ণৌ ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফ থেকে লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো রানাকে।
Read More: অধিনায়কের দায়িত্ব পেলেন নীতিশ রানা, ক্রিকেট মাঠে ফের দেখা যাবে যুবরাজ সিং’কে !!
নীতিশ রানাকে পেতে টোপ লক্ষ্ণৌর-
২০২২ সালে আইপিএলের আঙিনায় আত্মপ্রকাশ করে লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস (LSG)। প্রথম মরসুমে প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করলেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) বিরুদ্ধে হেরে যাত্রা সমাপ্ত হয় তাদের। ইডেন গার্ডেন্সে রজত পতিদারের (Rajat Patidar) ঝোড়ো শতরানের জবাব দিতে পারেন নি কে এল রাহুল (KL Rahul), ক্যুইন্টন ডি কক’রা (Quinton De Kock)। দ্বিতীয় মরসুমে খেতাব জয়ের ক্ষেত্রে মরিয়া ছিলো তারা। তবে বাধ সাধে অধিনায়ক রাহুলের চোট। এছাড়াও সঠিক টিম কম্বিনেশন বাছতেও সমস্যায় পড়েছিলো লক্ষ্ণৌ (LSG)। কলকাতাকে লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে হারিয়ে ১৫ পয়েন্ট সঙ্গে করে প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জন করলেও বেশ নড়বড়ে লাগছিলো তাদের। অবশেষে গতবারের মতই দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে যাত্রা থামলো তাদের। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI) কাছে হেরে ছিটকে গেলো লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস।
টানা দুই মরসুম তীরে এসে তরী ডোবায় হতাশ লক্ষ্ণৌ খেতাব জিততে নতুন করে দল সাজানোর কথা ভাবছে তারা। ২০২৩ আইপিএলে লক্ষ্ণৌর অন্যতম সমস্যা ছিলো তাদের মিডল অর্ডার। আয়ুষ বাদোনী (Ayush Badoni), দীপক হুডা-রান পান নি কেউই। নিকোলাস পুরান, মার্কাস স্টয়নিস কিছু ম্যাচে ভালো খেললেও অপরপ্রান্তে সাথীর অভাবে হারতে হয়েছে বেশ কিছু ম্যাচ। মিডল অর্ডার শক্তিশালী করতে সুপারজায়ান্টস টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় ছিলো নীতিশ রানার (Nitish Rana) নাম। সদ্যসমাপ্ত মরসুমে নীতিশ ১৪ ম্যাচে করেছেন ৪১৩ রান। রয়েছে তিনটি অর্ধশতকও। স্ট্রাইক রেট ১৪১-এর আশেপাশে। রানাকে পেতে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে (KKR) ট্রেডিং-এর ‘অপশন’ দিয়েছিলো লক্ষ্ণৌ। গত মরসুমে ট্রেডিং-এর মাধ্যমেই শার্দূল ঠাকুর, লকি ফার্গুসনদের দলে নিয়েছিলো কলকাতা। কিন্তু রানাকে ছাড়তে রাজী নয় শাহরুখ খানের দল। লক্ষ্ণৌর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে।
গম্ভীর ফিরছেন KKR-এ?
২০১২ এবং ২০১৪-আইপিএলের ইতিহাসে দুইবার ট্রফি জিতেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এবং চেন্নাই সুপার কিংসের পর তৃতীয় সফলতম দল কলকাতা। এই সাফল্যের অনেকখানি কৃতিত্বই গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir)। ২০১১-র আইপিএল নিলামে ১১ কোটি টাকার বিনিময়ে গৌতম গম্ভীরকে দলে নেয় নাইট রাইডার্স। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে গম্ভীরের হাতেই অধিনায়কত্ব তুলে দেয় তারা। ফলও মেলে হাতেনাতে। নিজের দ্বিতীয় মরসুমেই নাইট বাহিনীকে খেতাব উপহার দেন তিনি। লম্বা আইপিএল কেরিয়ারের অধিকাংশটাই গম্ভীর কাটিয়েছেন কলকাতা ডাগ-আউটে। যদিও অবসর নিয়েছিলেন দিল্লী ক্যাপিটালস (DC) জার্সিতে। ক্রিকেটার হিসেবে বাইশ গজকে বিদায় জানানোর পর মেন্টর হিসেবে যুক্ত হয়েছেন লক্ষ্ণৌ সুপারজায়ান্টস (LSG) দলে।
নীতিশকে লক্ষ্ণৌতে আনার পরিকল্পনা গম্ভীরের (Gautam Gambhir) বলেই শোনা যাচ্ছে। ক্রিকেটমহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে যে রানা’কে ট্রেডিং পদ্ধতিতে লক্ষ্ণৌতে পাঠানোর বদলে পাল্টাচালের পরিকল্পনা আঁটছে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। শোনা যাচ্ছে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে (Andy Flower) বাতিল করে জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে (Justin Langer) কোচ করে আনতে পারে সুপারজায়ান্টস (LSG) ফ্র্যাঞ্চাইজি। তাদের ডাগ-আউট থেকে গম্ভীরকে ছিনিয়ে আনার পথে হাঁটতে পারে কেকেআর। গম্ভীর নিজেও নাকি মেন্টর হিসেবে কলকাতা জার্সিতে ফিরতে আগ্রহী। ফ্রি প্রেস জার্নালে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী কথাবার্তা এগোচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। ‘সিটি অফ জয়’-এর অত্যন্ত প্রিয় মানুষ গম্ভীর। তাঁর প্রত্যাবর্তনের আশায় প্রহর গুণছেন প্রত্যেক নাইট ভক্ত।