অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-২০ বিশ্বকাপ আরও একবার হাতছাড়া হয়েছে ভারতের। রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বে প্রায় ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কাপ আসবে ভারতে, এই আশা নিয়েই ক্যাঙ্গারুর দেশে গিয়েছিলেন ‘টিম ইন্ডিয়া’র খেলোয়াড়’রা। কিন্তু আশাপূরণ হয় নি ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে। প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেটে লজ্জার হার দিয়েই থেমে গিয়েছে ভারতের রথ। এই হতশ্রী পারফর্ম্যান্সের পর কাটাছেঁড়া চলছে ভারতের স্ট্র্যাটেজি এবং খেলোয়াড়দের পারফর্ম্যান্স নিয়ে। আগামী টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২৪ সালে। সেই কথা মাথায় রেখে এখনই দলের বয়স্ক খেলয়াড়দের ছেঁটে ফেলে তারুণ্যের পথে হাঁটা দরকার ভারতের? অনেকেই মনে করছেন সেই কথা। ভারতের বহু যুদ্ধের ঘোড়া রোহিত শর্মা(Rohit Sharma) এবং বিরাট কোহলি’র(Virat Kohli) জায়গা হবে পরবর্তী কুড়ি-বিশের বিশ্বকাপে? উঠছে সেই প্রশ্ন’ও। ক্রমাগত চলতে থাকা বিতর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন ‘মেন ইন ব্লু’র কিংবদন্তী অফস্পিনার হরভজন সিং(Harbhajan Singh)।
কোথায় দরকার বদল? যা জানালেন হরভজন-
টি-২০ ক্রিকেটের জন্য বিশেষ দল তৈরি হবে মূলত অল্পবয়সীদের নিয়ে। তারুণ্যের স্পর্ধাতেই ২০২৪ সালের কাপ জিততে চাইছে ভারত। বিসিসিআই সূত্রের খবর এমনটাই। সেক্ষেত্রে কি হবে বিরাট বা রোহিতের ভবিষ্যৎ? রোহিতের বয়স এখন ৩৫ আর বিরাট ৩৪ ছুঁয়েছেন কিছুদিন আগে। তাঁদের কি সরে যেতে অনুরোধ করা হবে? বোর্ড সূত্রে খবর যে দুই মেগাস্টার’কে নিজেদের ভবিষ্যৎ ঠিক করার সুযোগ দেবে তারা। তবে কুড়ি-বিশের ক্রিকেট থেকে এখনই সরে না গিয়ে বরং নিজেদের খেলায় কিছু বদল এনে কেরিয়ার দীর্ঘায়িত করার পরামর্শ দিলেন তাঁদের একসময়ের সতীর্থ হরভজন সিং(Harbhajan Singh)।
বিরাট কোহলি(Virat Kohli) এবং রোহিত শর্মা’কে(Rohit Sharma) আন্তর্জাতিক টি-২০ আঙিনায় আরও কিছুদিন দেখতে চান হরভজন। তবে টি-২০ ক্রিকেট খেলার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন দরকার তাঁদের। এমনটাই মতামত তাঁর। নিজেদের কেরিয়ার’কে দীর্ঘায়িত করতে দু’জনকেই ভাজ্জি অনুরোধ করেছেন নিজেদের স্ট্রাইক রেট বাড়াতে।
সদ্যসমাপ্ত টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত’কে ভুগিয়েছে দলের ওপেনারদের ফর্ম। অন্যান্য দলগুলি যেখানে প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার-প্লে ব্যবহার করে বড় রান তুলে নিয়েছে সেখানে ভারত প্রতি ম্যাচেই শুরু করেছে মন্থর গতি’তে। এই নিয়ে সমালোচনার মুখে ভারতের টপ অর্ডার। বিরাট এবং রোহিত দু’জনেই টপ অর্ডার ব্যাটার। রোহিত ওপেনার এবং বিরাট খেলেন ৩ নম্বরে। সংবাদসংস্থা PTI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হরভজন(Harbhajan Singh) জানিয়েছেন, “ টি-২০ ক্রিকেটে প্রথম ৬ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রথম ৬ ওভারে আমাদের খেলার দৃষ্টিভঙ্গির বদল খুব জরুরী। শুরুতে সাফল্য না আসলে সূর্যকুমার বা হার্দিক পান্ডিয়ার থেকে ২০ বলে ৫০ রান করার আশা নিয়ে বসে থাকতে হয় আমাদের। রোজ সেটা হলে বিপদ ভারতের।”
জয়ের জন্য সকলের যোগদান জরুরী। পাওয়ার প্লে’তে মন্থর খেলার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভাজ্জি আরও বলেছেন, “ যদি সূর্যকুমার যাদব বা হার্দিক পান্ডিয়া কোনওদিন ব্যর্থ হয় তাহলে তো ভারতের খেল খতম।” টি-২০ বিশ্বকাপের চিত্র মনে করে বলা যায় যে খুব ভুল বলছেন না হরভজন। শুরুর ওভারগুলোয় ব্যর্থতা বহুবার ভুগিয়েছে ভারত’কে। অধিনায়ক রোহিত শর্মা যেভাবে এই দোষে দোষী, সেই একই ভাবে আঙুল তোলা যায় আরেক ওপেনার ও দলের সহ-অধিনায়ক কে এল রাহুলের দিকেও। বিশ্বকাপে চূড়ান্ত হতাশ করেছেন তিনিও।
শুরুর ওভারগুলোকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারায় প্রায় প্রতি ম্যাচেই শেষের দিকে ব্যাটিং চাপে পড়েছে ভারতের। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে হোক বা সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে, দেখা গিয়েছে একই চিত্রনাট্য। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে সূর্যকুমারের হাফসেঞ্চুরি হোক বা সেমিফাইনালে হার্দিকের ঝোড়ো ইনিংস, কোনওভাবেই দলের হার আটকানো যায় নি। সিমিত ওভারের খেলায় দৃষ্টিভঙ্গি বদলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইংল্যান্ডের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন হরভজন। তিনি বলেন, “নিজেদের খেলার ধরণ বদলে ইংল্যান্ড পরপর দুটি বিশ্বকাপ ঘরে তুলে নিয়েছে।”
PTI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হরভজন জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের স্টাইল’কেই মাথায় রাখা উচিৎ ভারতের। দলের প্রথম তিন ব্যটারের (রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল এবং বিরাট কোহলি) কাছে তিনি আবেদন জানিয়ে বলেছেন, “টি-২০ ক্রিকেট খেলতে হলে স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর দিকে নজর দিক উপরের তিন ব্যাটসম্যান।”