দিনকয়েক আগেই ইতিহাস রচনা করেছেন ভারতের অনূর্দ্ধ-১৯ মহিলা ক্রিকেট দল। মেয়েদের প্রথম অনূর্দ্ধ-১৯ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে ৭ উইকেটে পরাজিত করে বিশ্বখেতাব ঘরে তুলেছেন শেফালো ভার্মা, তিতাস সাধুরা। জুনিয়ররা ট্রফির মুখ দেখলেও ঝুলি শূন্যই থেকে গেলো ভারতের সিনিয়র দলের। বিশ্বকাপ ২০১৭, টি-২০ বিশ্বকাপ ২০২১ এর পর দক্ষিণ আফ্রিকায় ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালেও হারতে হলো স্মৃতি মন্ধানা (Smriti Mandhana), হরমনপ্রীত কৌরদের (Harmanpreet Kaur)। ফাইনালের চাপ সামলাতে আরও একবার ব্যর্থ হলো ভারতের মেয়েরা। গোটা টুর্নামেন্ট অনবদ্য খেললেও সেই তীরে এসে তরী ডোবার চেনা চিত্রনাট্য মেনেই চললো খেলা। অথচ দিনের শুরুটা ভালোই হয়েছিলো ভারতের। ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে টসে জেতেন ভারতীয় অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ‘টিম ইন্ডিয়া।’ সেই সিদ্ধান্ত অবশ্য বিশেষ কার্যকরী হয় নি এদিন। প্রোটিয়া বোলারদের সামনে কেঁপে যায় ভারতের মেয়েদের ব্যাটিং। ২০ ওভারের শেষে মাত্র ১০৯ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেছিলো ‘উইমেন ইন ব্লু।’ ১৮ ওভারেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারত,দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উইন্ডিজ মহিলা দলের মধ্যে এই ত্রিদেশীয় সিরিজ’কে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের মহড়া বলেই মনে করছিলো ক্রিকেটদুনিয়া। ফাইনালে ভারতের পারফর্ম্যান্স চিন্তা বাড়িয়ে রাখলো টিম ম্যানেজমেন্টের।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় ব্যাকফুটে ভারত-
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছেছিলেন ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর – (Harmanpreet Kaur)। প্রতিপক্ষের জন্য বড় রানের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়াই ভাবনাতে ছিলো দলের। কিন্তু লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হলেন ব্যাটাররা। স্মৃতি মান্ধানার (Smriti Mandhana) ব্যাটিং-এর ওপর অনেকটাই নির্ভর করে ‘টিম ইন্ডিয়া’র সাফল্য। চলতি সিরিজেও ফর্মেই দেখা গিয়েছিলো বাঁ-হাতি ব্যাটারকে। তবে ফাইনালে খাতাই খুলতে পারলেন না তিনি। ৮ বলে ০ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ দেখেন স্মৃতি। আরেক ওপেনার জেমাইমা রড্রিগেজ’কে (Jemimah Rodrigues) সপ্রতিভ লাগে নি এদিন। ১৮ বলে ১১ করে আউট হন তিনিও। ডুবতে থাকা ভারতীয় দল’কে খানিক তুলে ধরার প্রচেষ্টা করেছিলেন যথাক্রমে তিন ও চারে নামা হরলীন দেওল এবং হরমনপ্রীত কৌর। হরলীন (Harleen Deol) ৪৬ এবং হরমন (Harmanpreet Kaur) ২১ রান করলেও দু’জনেই মন্থর ইনিংস খেললেন ফাইনালে। ৪টি চারে সাজানো হরলীনের ৪৬ রানের ইনিংসটি এলো ৫৬ বলে। অপর দিকে ২১ করতে হরমন নিলেন ২২ বল। দীপ্তি শর্মা (Deepti Sharma) ১৪ বলে ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ১০৯ রানেই থেমে যায় ভারতের মেয়েদের ব্যাটিং। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আয়াবোঙ্গা খাকা ও সুনে লিস ১ টি করে উইকেট পান। প্রোটিয়াদের পক্ষে সফলতম বোলার মালাবা। তিনি ২ উইকেট পেয়েছেন।
সারলো না পুরনো রোগ, হার ভারতের-
ব্যাটাররা ব্যর্থ হওয়ার প্রথম ইনিংস শেষে এমনিতেই চাপে পড়েছিলেন ভারতের মেয়েরা। শেষমেশ জয় অধরাই থেকে গেলো পূজা, রাজেশ্বরীদের (Rajeshwari Gaikwad)কাছে। ১০৯ রানের পুঁজি নিয়ে বোলিং করতে নেমে শুরুতেই হাল অবশ্য ছেড়ে দেন নি ভারতের মেয়েরা। প্রত্যাঘাতের প্রচেষ্টা জারি রেখেছিলেন দীপ্তি শর্মা, স্মেহ রাণারা (Sneh Rana)। ০ রান করে দীপ্তি শর্মার বলে ফিরে গিয়েছিলেন ওপেনার লরা উলভার্ট। ১৫ বলে ৮ করে স্নেহ রাণার বলে আউট হন আরেক ওপেনার তাজমিন ব্রিটস (Tazmin Brits)। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরবোর্ডে যখন মাত্র ২১ তখন রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ের বলে ফিরে যান লারা গুডঅল। ৪৭ রানে প্রোটিয়াদের ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ভারতের বোলাররা। তবে স্বপ্নভঙ্গ হলো ক্লোয়ি ট্রায়নের ব্যাটে। ৩২ বলে ৫৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচ ভারতের থেকে অনেক দূরে নিয়ে চলে যান ক্লোয়ি (Chloe Tryon)। ৬টি চার এবং ২টি ছক্কায় সাজানো ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা তিনিই। ক্লোয়ির সঙ্গে নাদিন দে ক্লার্ক। তিনি ১৭ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১২ বল বাকি থাকতেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আরও একবার ফাইনালে হেরেই মাঠ ছাড়তে হলো ভারতকে। গোটা টুর্নামেন্টে অনবদ্য পারফর্ম্যান্স করায় ভারতের দীপ্তি শর্মাকেই (Deepti Sharma) ত্রিদেশীয় সিরিজের প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারী মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই হারের যন্ত্রণা ঝেড়ে ফেলে সেদিন মাঠে নামার লড়াই ভারতের মেয়েদের।
Read More: Top 3: ৩ ক্রিকেটার যারা আসন্ন বর্ডার-গাভাস্কার সিরিজে জল বয়ে বেড়াবে !!