World Cup 2023: চলতি বছরে ঠাসা ক্রিকেটসূচী রয়েছে ভারতীয় দলের সামনে। শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সীমিত ওভারের সিরিজ দিয়ে বছরটা শুরু করেছিলো টিম ইন্ডিয়া। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চার টেস্টের বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি খেলেছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli), রোহিত শর্মারা (Rohit Sharma)। খেলেছেন তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজও। তারপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে আইপিএলের আঙিনায় দেখা গিয়েছে জাতীয় দলের তারকাদের। ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লীগের পর এবার চ্যালেঞ্জ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনাল। এরপর রয়েছে উইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড সফর। সেপ্টেম্বরের রয়েছে এশিয়া কাপ এবং অক্টোবর-নভেম্বরে বসবে বিশ্বকাপের (ICC World Cup) আসর। ক্রিকেটের মেগা ইভেন্টকেই পাখির চোখ করেছে ‘মেন ইন ব্লু।’
২০২৩ সালের বিশ্বকাপের আসর বসতে চলেছে ভারতের মাটিতেই। প্রথমবার একক দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন করছে বিসিসিআই। ট্রফি জেতার তাগিদ তাই বহুগুণ বেশী এবার। এর আগে ২০১১ সালে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শেষবার বিশ্বখেতাব নিজেদের ঘরে তুলেছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া। ১২ বছর পর তার পুনরাবৃত্তির আশায় বুক বাঁধছেন সমর্থকেরা। প্রস্তুতিতে যাতে কোনো ফাঁক না থাকে সেই জন্য বদ্ধপরিকর বিসিসিআই’ও। বছরের গোড়া থেকেই বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে ক্রিকেটারদের দিকে। ফিটনেস থেকে ওয়ার্কলোড, ক্রিকেটারদের দিকে সতর্ক নজর রাখছে ভারতীয় বোর্ড। শোনা যাচ্ছে মাসখানেকের মধ্যেই বিশ্বকাপের জন্য ফল ঘোষণা করা হতে পারে। কারা জায়গা পাবেন সে নিয়ে চলছে জল্পনা। আইপিএল (IPL) পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতে দলে জায়গা করে নিতে পারেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। সেই দলে থাকতে পারেন শিবম দুবে, বরুণ চক্রবর্তী এবং বিজয় শঙ্কর।
Read More: বিশ্বকাপের আগে আবারও জাতীয় দলে এন্ট্রি হচ্ছে MS Dhoni-র, BCCI দিচ্ছে এই বড় দায়িত্ব !!
বিজয় শঙ্কর-

তামিলনাড়ুর বিজয় শঙ্করের (Vijay Shankar) কাছে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে যখন বসেছিলো বিশ্বকাপের আসর, তখনও জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা গিয়েছিলো বিজয় শঙ্করকে। অম্বাতি রায়ডুকে বাইরে রেখে বিজয় শঙ্করকেই জায়গা দেওয়া পথে হেঁটেছিলো এম এস কে প্রসাদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। সেই সময় শঙ্করকে নিয়ে এম এস কে প্রসাদের ‘থ্রি ডি’ প্লেয়ার উক্তিটি এখনও ভারতীয় ক্রিকেটের অলিন্দে সকলের মুখে মুখে ফেরে। ২০১৯ সালে সেমিফাইনালে যাত্রা থেমেছিলো ভারতের। বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেন নি শঙ্করও। তবে ২০২৩-এ অনেকটাই বদলেছে পরিস্থিতি।
এই বছর গুজরাত টাইটান্সের হয়ে বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভালো খেলেছেন বিজয় শঙ্কর (Vijay Shankar)। চার নম্বরে নেমে দ্রুত গতিতে তিনি যে রান তুলতে সক্ষম তা বুঝিয়েছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) বিরুদ্ধে ২৪ বলে করেছেন ৬৩* রান।১৪ ম্যাচে ৩৭.৬৩ ব্যাটিং গড় ও প্রায় ১৬১ স্ট্রাইক রেটে ৩০১ রান করেছেন তিনি। একদিনের ক্রিকেটে ভারতীয় দলে এখন মিডল অর্ডারে ফাঁক রয়েছে। সূর্যকুমার যাদব (Suryakumar Yadav) ধারাবাহিক নন, ফর্মে নেই ঈশান কিষণ। চোট সারিয়ে শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer), কে এল রাহুল (KL Rahul) আদৌ ফিট হবেন কিনা তা নিশ্চিত নয়, সেক্ষেত্রে ফের একবার বিশ্বকাপে শিকে ছিঁড়তেই পারে বিজয় শঙ্করের ভাগ্যে। হার্দিক পান্ডিয়ার সাথে দ্বিতীয় পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি দলের সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।
বরুণ চক্রবর্তী-

সাড়া জাগিয়ে শুরুটা করেছিলেন রহস্য স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী (Varun Chakravarthy)। জায়গা পেয়েছিলেন জাতীয় দলেও। কিন্তু নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেন নি তিনি। দেশের জার্সিতে ৬টি টি-২০ ম্যাচ খেলে মাত্র ২টি উইকেট পেয়েছিলেন। ফলত বাদ দেওয়া হয় তাঁকে। বেশ কিছুদিন লাইমলাইট থেকে দূরে ছিলেন তিনি। কিন্ত ২০২৩ আইপিএলে বল হাতে ফের একবার জ্বলে উঠতে দেখা গেলো তাঁকে। বরুণের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স এবারের মরসুমে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারে নি। দশ দলের লীগে শেষ করেছে সপ্তম স্থানে। কিন্তু বরুণের (Varun Chakravarthy) বলে দেখা গিয়েছে ভেল্কি। একাধিক ম্যাচে একক কৃতিত্বে তিনি দলকে জয় এনে দিয়েছেন।
পাওয়ার প্লে হোক বা ডেথ ওভার, বল হাতে সমান স্বচ্ছন্দ দেখিয়েছে বরুণকে। ১৪ ম্যাচে ২১.৪৫ বোলিং গড় ও মাত্র ১৫.২৫ স্ট্রাইক রেটে ২০ উইকেট নিজের নামের পাশে লিখেছেন তিনি। ২০২৩-এর বিশ্বকাপ আয়োজিত হতে চলেছে ভারতের মাটিতে। স্বাভাবিক ভাবেই স্পিনের গুরুত্ব এবার অত্যধিক হওয়ার সম্ভাবনা। সেই কথা মাথায় রেখে প্রতিপক্ষকে ধাঁধায় ফেলতে বরুণ চক্রবর্তীকে (Varun Chakravarthy) দলে সামিল করতে পারে ভারত। কুলদীপ বা চাহালের লেগস্পিনের সাথে বরুণ চক্রবর্তীর রহস্য স্পিন ঘাতক হয়ে উঠতে পারে বাকি দলগুলির কাছে।
শিবম দুবে-

এই তালিকায় তৃতীয় নাম হতে পারে শিবম দুবে (Shivam Dube)। দীর্ঘকায় অলরাউন্ডারকে একটা সময় দ্বিতীয় যুবরাজ সিং বলা হচ্ছিলো। বিশেষ করে ব্যাকলিফটের ক্ষেত্রে বেশ সাদৃশ্য দেখা যেত। কিন্তু যুবরাজের উচ্চতায় পৌঁছানো হয় নি তাঁর। তার আগেই ক্রিকেটজীবন ঢলে পড়েছিলো বিস্মৃতির অতলে। ২০২০ সালে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ১৩টি টি-২০ খেলেন। খেলেছিলেন একটি মাত্র একদিনের ম্যাচ। বিশেষ সুবিধা করতে না পারায় ছেঁটে ফেলতে দ্বিধা করে নি ভারতীয় দল। ২০২১ এর পর থেকে দুই বছর সময়ে জাতীয় দলের জন্য ভাবা হয় নি তাঁকে। বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু চেন্নাই সুপার কিংস (CSK) এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) হাত ধরে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন শিবম। ফের একবার জায়গা করে নিয়েছেন জাতীয় দল নির্বাচকদের রেডারে।
এই বছরে চেন্নাই জার্সিতে বারবার জ্বলে উঠতে দেখা গিয়েছে শিবমকে (Shivam Dube)। প্রতিপক্ষের স্পিনারদের মোকাবিলা করার জন্য কখনও তিন বা কখনও চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছেন তিনি। মর্যাদা রেখেছেন দলের আস্থার। ১৬ ম্যাচে ৪১৮ রান করেছেন তিনি। গতবারের তুলনায় বেড়েছে স্ট্রাইক রেট। ২০২৩ মরসুমে ১৫৮.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি। ব্যাটিং গড় ছিলো ৩৮। টুর্নামেন্টে ৩৫টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন শিবম (Shivam Dube)। পরিসিংখ্যান অনুযায়ী সবচেয়ে বেশী ছক্কার নিরিখে কেবল ফাফ দু প্লেসির (Faf Du Plessis) পরেই তিনি। এই মরসুমে তিনবার অর্ধশতরানের গণ্ডীও পেরিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে মিডল অর্ডার বা লোয়ার অর্ডারে দুবের (Shivam Dube) অন্তর্ভুক্তি ভারতের বিগ হিটারের অভাব পূরণ করতে পারবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।