IND vs WI: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (WTC) ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০৯ রানের শোচনীয় হারের পর এক মাস বিরতি পাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। জুলাই মাসের গোড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে উড়ে যাবে ভারতীয় দল। কাইল মেয়ার্স, রস্টন চেজদের বিরুদ্ধে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই খেলবে ভারত। সফরে সূচনা হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে। এরপর রয়েছে তিনটি একদিনের ম্যাচ এবং সবশেষে অগস্টের গোড়ায় শুরু হবে পাঁচ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ। কুড়ি-বিশের সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ খেলতে দুই দল উড়ে যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলে আয়োজিত হবে শেষ ম্যাচ দুটি।
লাল বলের ক্রিকেটে ভারতীয় দলের হয়ে উইকেটকিপিং কে করবেন? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ‘মেন ইন ব্লু’র অন্দরে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে গাড়ি দুর্ঘটনায় চোট পেয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে ছিটকে গিয়েছেন ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। সেই দুর্ঘটনার ফল ভুগতে হচ্ছে টিম ইন্ডিয়াকে। টেস্ট ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক হিসেবে পন্থ গত দুই বছরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলেন। তাঁর শূন্যতা কাকে দিয়ে ঢাকা যায় সেই নিয়েই এখন চলছে জল্পনা। দৌড়ে প্রধানত রয়েছে তিনটি নাম। প্রথম দুজন কে এস ভরত (KS Bharat) এবং ঈশান কিষণ (Ishan Kishan)। এছাড়াও ঘুরপাক খাচ্ছে ঋদ্ধিমান সাহার (Wirddhiman Saha) নাম। ২০২১-এর পর টেস্টে খেলেন নি তিনিও। এমতাবস্থায় ভরত, ঈশানদের তারুণ্য নাকি ঋদ্ধিমানের অভিজ্ঞতা, কোন দিকে ঝুঁকবে বিসিসিআই? উত্তরের সন্ধানে দেশের ক্রিকেটজনতা।
Read More: IND vs WI: উইন্ডিজ সফরে নয়া ওপেনিং জুটি পাচ্ছে ভারতীয় দল, দৌড়ে রয়েছেন চার তরুণ ক্রিকেটার !!
ভাবনায় নেই ঋদ্ধিমান, জানাচ্ছে বোর্ড-

উইকেটের পিছনে ঋষভ পন্থের (Rishabh Pant) অভাব ঢাকতে পারতেন ঋদ্ধিমান সাহা (Wirddhiman Saha)। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ উইকেটরক্ষক যে শিলিগুড়ির ক্রিকেটার তা মানতে বাধ্য হন সকলেই। মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) ছায়ায় কেরিয়ারের একটা দীর্ঘ সময় ঢাকা পড়তে হয়েছিলো তাঁকে। ২০১৪ সালে ধোনি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর সাদা জার্সিতে নিয়মিত হয়ে ওঠেন তিনি। দীর্ঘ সময় উইকেটরক্ষক হিসেবে দলের প্রথম পছন্দ ছিলেন তিনিই। ঋষভ পন্থের (Rishabh Pant) উত্থানের পরেও কঠিন উইকেটে দস্তানা হাতে ঋদ্ধিতেই আস্থা রাখতেন পূর্বতন কোচ রবি শাস্ত্রী এবং অধিনায়ক বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। তবে ছবিটা বদলে যায় রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) কোচ হিসেবে আসার পর। বয়সের দোহাই দিয়ে তিনি ছেঁটে ফেলেন ঋদ্ধিকে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত অর্ধশতক করেও বাদ পড়তে হয় তাঁকে।
ফিটনেসে যে বয়স থাবা বসায় নি তা এই আইপিএলেও প্রমাণ করে দিয়েছেন ঋদ্ধি (Wirddhiman Saha)। অনবদ্য সব ক্যাচ নিয়েছেন। নূর আহমেদ, রশিদ খানদের ঘূর্ণির বিপরীতে তাঁর কিপিং থেকে চমকে গিয়েছে বিশ্ব। তবুও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভাবা হয় নি তাঁকে। ঋদ্ধিমান (Wirddhiman Saha) যে আর ফিরবেন না তা জানিয়ে দিয়েছেন বোর্ড কর্তারাও। এক পদস্থ কর্তার মন্তব্য, “আমাদের এখন ঋদ্ধিমানকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে তাকাতে হবে। ও যে দেশের সেরা উইকেটরক্ষক, তাতে সন্দেহ নেই। তবে ওর বয়স ৩৮, সেটাও অস্বীকার করা যায় না। ঈশান (কিষণ), (কে এস) ভরত, উপেন্দ্র যাদবদের মত তরুণ প্রতিভাকে আমাদের ঘষেমেজে নিতে হবে।”
টেস্ট অভিষেক হবে ঈশানের?

উইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুটি টেস্টে অনেকেই উইকেটের পিছনে দেখতে চাইছেন ঈশান কিষণকে (Ishan Kishan)। পন্থের (Rishabh Pant) মতই ঈশানও বাঁ-হাতি এবং প্রয়োজনে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে দলকে দ্রুত বড় রানের দিকে নিয়ে যেতে পারেন। তাই তাঁকেই পন্থের ‘লাইক ফর লাইক’ বিকল্প হিসেবে মনে করা হচ্ছে। লাল বলের ক্রিকেটে ঈশানের (Ishan Kishan) দক্ষতার ওপর বোর্ডের যে আস্থা আছে, তা পরিষ্কার। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো তাঁকে। এছাড়াও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও পাঠানো হয়েছিলো ইংল্যান্ডে। দেশের হয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়মিত তিনি। কিন্তু এখনও কোনো টেস্ট ম্যাচে মাঠে নামেন নি । ২০২৩-২৫ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সাইকেলের শুরুতে ঈশানকে (Ishan Kishan) রেখেই সম্ভবত টেস্ট দল ঘোষণা করতে চলেছে বোর্ড।
১৫ বা ১৮ সদস্যের দলে থাকলেও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ঝাড়খণ্ডের বছর ২৪-এর উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের খেলার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আগামী ২৮ জুন শুরু হতে চলেছে দলীপ ট্রফি। সেখানে পূর্বাঞ্চলের হয়ে তাঁকে খেলার অনুরোধ করা হলেও রাজী হন নি ঈশান (Ishan Kishan)। তাঁর দলীপ ট্রফি না খেলা থেকেই পরিষ্কার যে জাতীয় দল হয়ত এক্ষুণি ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফর্ম্যাটে ঈশানকে উইকেটরক্ষক হিসেবে প্রথম পছন্দ ভাবছে না।
ভরতেই আস্থা রাখছেন দ্রাবিড়-

ঋষভ পন্থের পরিবর্ত হিসেবে প্রথম থেকেই বর্তমান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) আস্থা কোনা শ্রীকার ভরতের (KS Bharat) ওপর। অন্ধ্রপ্রদেশের উইকেটরক্ষককে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির চার টেস্টেই খেলিয়েছিলেন দ্রাবিড়। বিশেষ ভরসা তিনি দিতে পারেন নি। উইকেটের পিছনে নড়বড়ে লেগেছিলো তাঁকে। বিশেষ করে স্পিনের বিরুদ্ধে সাবলীল দেখায় নি ভরতকে (KS Bharat)। ব্যাট হাতেও আহামরি কিছু করে উঠতে পারেন নি। আহমেদাবাদের নিষ্প্রাণ পিচে একটি ৪৮ রানের ইনিংস ব্যতীত চার ম্যাচের সিরিজে উল্লেখযোগ্য কোনো রান আসে নি তাঁর ব্যাট থেকে।
অজিদের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ব্যর্থতা সত্ত্বেও রাহুলের (Rahul Dravid) পছন্দ ভরতই। কেনিংটন ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও ঈশান কিষণকে (Ishan Kishan) রিজার্ভ বেঞ্চে থেকে উইকেটরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় ভরতকে। দস্তানা হাতে নিরাশ করেন নি তিনি। তবে ব্যাট হাতে পন্থের ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেন নি। দুই ইনিংসে করেছেন ৫ ও ২৩। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজেও ভারতীয় শিবির ভরতের (KS Bharat) ওপরেই সম্ভবর ভরসা রাখতে চলেছে।