IND vs PAK : ক্রিকেট মাঠে কিছু কিছু মূহুর্ত, কিছু কিছু ইনিংস কখনো ভোলা যায় না। তেমন একখানা ইনিংস গতকাল মেলবোর্নের ঐতিহাসিক এম সি জি’তে ক্রিকেটভক্তদের উপহার দিলেন বিরাট কোহলি। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম টেস্ট ম্যাচ হয়েছিলো এই মাঠে, ভারতের ১৯৮৫ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জয়, পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়, সবই এম সি জি’র সবুজ গালিচায়। কিন্তু গতকাল টি২০ বিশ্বকাপের গ্রুপ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোহলি যা করে দেখালেন তার সমতুল্য কিছু এম সি জি দেখেছে কিনা গবেষণা হতে পারে তা নিয়ে। টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। মূলত পেসারদের সৌজন্যে দারুণ ফর্মে থাকা পাক ব্যাটিং মাথা তুলতে পারে নি গতকাল। ইনিংস থামে ১৫৯ রানে। ১৬০ এর লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করা মেঘলা মেলবোর্নের মাঠে সহজ ছিলো না। শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ভারত। এক সময় স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছিলো ৩১-৪। তারপর যা হলো তা ব্যাখ্যা করার মত বিশেষণ হয়ত অভিধানে খুঁজলেও পাওয়া দুষ্কর।
IND vs PAK : হারের অন্ধকার থেকে জয়ের আলোয়,বিরাট মাস্টারক্লাস-
মাত্র ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে ভারতের ব্যাটিং, অতি বড় ‘টিম ইন্ডিয়া’ ভক্ত’ও মনে মনে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন হয়ত। কিন্তু আশা ছাড়েন নি বিরাট কোহলি। বাইশ গজের অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থ ব্যাটারদের হারাকিরি করতে দেখেও একবিন্দু বিচলিত হন নি তিনি। বরং সঙ্কল্প করেছেন কঠিন ম্যাচে শেষ অব্দি ক্রিজ ছেড়ে না যাওয়ার। জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার। হার্দিক পান্ডিয়া বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন কাল। ব্যাট হাতে তাঁকেই সঙ্গী পেলেন বিরাট। ১১৩ রানের জুটি’টা ভারত’কে শুধু ম্যাচে ফেরালো না, ইস্পাতকঠিন মানসিকতার পরিচয় দিয়ে গেলো। মেলবোর্নের মাঠ বড়। ছোটো ছোটো ফাঁকফোকড়ে বল ঠেলে এক-দুই রান নিয়ে স্কোরবোর্ড চালু রাখেন কোহলি। লক্ষ্য নজরে আসতেই বদলালেন গিয়ার। প্রথমে নওয়াজ’কে স্টেপ আউট করে ছয়। তারপর রউফ’কে।
হ্যারিস রউফের ওভার সাহায্য করেছে
হ্যারিস রউফ’কে খেলতে অসুবিধায় ছিলেন ভারতের ব্যাটার’রা। কিন্তু কোহলি বোঝালেন কেনো তিনি ‘কিং।’ ১৯ তম ওভারের পঞ্চম বলে রউফের শর্ট বল যেভাবে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে গ্যালারিতে পাঠালেন তাতে স্কিলের সাথে মিশে ছিলো খানিক ঔদ্ধত্য। যেন বলছেন ‘এই মাঠে রাজা একজন,সেটা আমি।’ নাটকীয় শেষ ওভারে দরকার ছিলো ১৬। সেটাও তুলে নিয়ে একসময় নিশ্চিত হার মনে হতে লাগা ম্যাচ’কে জয়ের সরণীতে এনে ফেললেন বিরাট। প্রমাণ করলেন ‘চেজমাস্টার’ তকমা তাঁকে এমনি দেওয়া হয় নি। সেটা তিনি অর্জন করেছেন। ম্যাচের পর ৬ টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো ৫৩ বলে ৮২*র এই ইনিংস’কে নিজের টি২০ কেরিয়ারে সেরা বলেছেন কোহলি।
IND vs PAK : বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস সাজঘরে,বিরাট’কে আলিঙ্গন দ্রাবিড়ের-
দুবাইতে ২০২১ সালে প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপের আঙিনায় পাকিস্তান পরাজিত করে ভারত’কে। তাও আবার ১০ উইকেটে। অধিনায়ক সেদিন ছিলেন বিরাট’ই। সম্প্রতি এশিয়া কাপেও সুপার ফোর পর্বে পাকিস্তানের কাছে হারতে হয় ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। সেই ক্ষত বুকে নিয়ে এতদিন বেড়াচ্ছিলেন ভারতের খেলোয়াড়’রা। তাই কালকের ম্যাচে রুদ্ধ্বশ্বাস জয় তুলে নিতেই আবেগ বাঁধ মানে নি কারও। মাঠেই ছুটে এসে বিরাট’কে কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ফ্রেমটি ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে। আবেগ সাধারণত প্রকাশ করেন না কোচ রাহুল দ্রাবিড়। কিন্তু কাল আগল ভাঙার দিন। স্বভাবের বিপরীতে গিয়েই যেন উদ্বেলিত ‘দ্য ওয়াল।’ বিরাট সাজঘরে ফিরতেই তাঁকে বুকে টেনে নেন। সস্নেহে মাথায় রাখেন হাত। ভারতের দু’ই ক্রিকেট কিংবদন্তীর এই আবেগঘন মূহুর্ত বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা আইসিসি পোস্ট করেছে তাঁদের ইন্সটাগ্রামে। আর তা মন জিতে নিয়েছে নেটিজেনদের।
নীচে রইলো ভিডিও’টি-