IND vs NZ: টি-২০ সিরিজ জয়ের পর আজ অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে একদিনের মোকাবিলায় মুখোমুখি হয়েছিলো ভারত এবং নিউজিল্যান্ড। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের জয়ের ধারাবাহিকতা পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচেও ধরে রাখা লক্ষ্য ছিলো টিম ইন্ডিয়া’র। রোহিত শর্মা না থাকায় ভারতের অধিনায়কত্ব করলেন শিখর ধাওয়ান। টি-২০ বিশ্বকাপ থেকেই দলে তরুণ মুখেদের দেখতে আগ্রহী ছিলো ভারতের ক্রিকেটজনতা। তাদের আশা আজ অনেকটা পূরণ করলেন শিখর ধাওয়ান এবং কোচ ভিভিএস লক্ষ্মণ। প্রথমে একাদশে আজ দেখা গেলো অর্শদীপ, উমরান মালিক’দের। অনেক দিন পর জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে দেখা গেলো সঞ্জু স্যামসন’কে। ভারতের তারুণ্যের পালটা হিসেবে নিউজিল্যান্ড জোর দিয়েছিলো অভিজ্ঞতায়। ঘরের মাঠে টি-২০ সিরিজ হেরে অনেকটাই ব্যাকফুটে ছিলো তারা। জয়ের সরণীতে ফিরতে রান তাড়া করার স্ট্র্যাটেজি নেয় তারা। টসে জিতে ভারত’কে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান কিউই নেতা কেন উইলিয়ামসন। অভিজ্ঞতা বরং তারুণ্যের লড়াইতে নবীন ব্রিগেড’কে দিনের শেষে মাত করলেন ব্ল্যাক ক্যাপসের ‘বুড়ো ঘোড়া’রাই। ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ৩০৭ রানের লক্ষ্যমাত্রা সহজেই টপকে ইডেন পার্কে ১-০ এগিয়ে গেলো নিউজিল্যান্ড দল।
ওপেনিং-এ উঠলো রান, ভরসা দিলেন আইয়ার-
ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণের মন্ত্র নিয়ে খেলতে নেমেছিলো ভারত। ওপেন করতে এসে দুর্দান্ত শুরু করেন শুবমান গিল এবং অধিনায়ক শিখর ধাওয়ান। গত কয়েকটি সিরিজে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন শুবমান। টি-২০তে সুযোগ না পেলেও পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে আবার নিজের কার্যকারীতা বোঝালেন তরুণ ব্যাটার। করলেন ৬৫ বলে ৫০ রান। আপার কাটে একটি ছক্কা মেরে ক্রিকেটপ্রেমী জনতার তারিফ কুড়োলেন তিনি। রানের মধ্যে রয়েছেন ধাওয়ান’ও। ধুন্ধুমার ব্যাটিং কওরে ১৩ টি চারের সাহায্যে ৭৭ বলে ৭২ করলেন তিনি। মাঝে পন্থ এবং সূর্যকুমার’কে হারিয়ে খানিক চাপে পড়লেও তা থেকে দল’কে টেনে বের করে আনেন সঞ্জু স্যামসন এবং শ্রেয়স আইয়ার। সঞ্জু করলেন ৩৮ বলে ৩৬ রান। সাথে সাথে ৭৬ বলে ৮০ রানের চমৎকার ইনিংস খেললেন শ্রেয়স’ও। মারলেন ৪ টি চার এবং ৪ টি ছক্কা। ইনিংসের শেষ দিকে ওয়াশিংটন সুন্দরের ১৬ বলে ৩৭ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ভারত তোলে ৩০৬ রান। আজ চার নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয় ঋষভ পন্থ’কে। কিন্তু তাঁর রান খরা কাটার কোনও সম্ভাবনা দেখা যায় নি আজও। ২৩ বলে ১৫ করেই আউট হলেন নড়বড়ে ঋষভ। বোলারদের মধ্যে ৩ উইকেট নেন লকি ফার্গুসন। টিম সাউদী ৩ উইকেট নিলেও দিয়েছেন ৭৩ রান। অপরদিকে ২০১৭ সালের পর প্রথম একদিনের ম্যাচ খেললেন অ্যাডাম মিলনে। দিনটা ভালো গেলো না তাঁরও। ১০ ওভারে ৬৭ রান দেন তিনি। পান ১টি উইকেট। শূন্য ঝুলি নিয়ে ফেরেন ম্যাট হেনরী ও মিচেল স্যান্টনার।
অনভিজ্ঞ বোলিং ও খারাপ ফিল্ডিং-এ হার ভারতের-
স্কোরবোর্ডে রান থাকলেও তা যে জয়ের জন্য যথেষ্ঠ নাও হতে পারে, ইডেন পার্কের উইকেট দেখেই মনে হয়েছিলো তা। শেষ অব্দি আশঙ্কাই সত্যি হলো। প্রথমে ঢিমেতালে শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন এবং ডেভন কনওয়ে। দলের ৩৫ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় কিউই’রা। শার্দূল ঠাকুরের বলে ঋষভ পন্থের গ্লাভসে বন্দী হন ফিন অ্যালেন। ভারতের ‘স্পিডস্টার’ উমরান মালিক’কে জাতীয় দলে দেখতে মুখিয়ে ছিলেন অনেকে। আজ সুযোগ পেয়ে খারাপ শুরু করেন নি তিনি। দ্রুত আউট করেন ডেভন কনওয়ে এবং ড্যারিল মিচেল’কে। কনওয়ে ৪২ বলে ২৪ করে পন্থের হাতে ধরা পড়েন। মিচেল ১৬ বলে ১১ করে ক্যাচ দেন দীপক হুডা’র হাতে। ৮৮ রানে ৩ উইকেট হারায় ব্ল্যাক ক্যাপস’রা। উমরান-অর্শদীপ’রা যখন ডানা মেলবেন বলে মনে করা হচ্ছিলো তখনই রুখে দাঁড়ান নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের দুই মহারথী, কেন উইলিয়ামসন এবং টিম ল্যাথাম। ধীরেসুস্থে খেলে ইনিংসের ভীত মজবুত করেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন, আর উল্টোদিকে সংহার মূর্তি’তে অবতীর্ণ হন ল্যাথাম। ৯৮ বলে ৯৪ রান করে অপরাজিত থাকলেন উইলিয়ামসন। আর নিজের অষ্টম শতরানসহ ১০৪ বলে ১৪৫ রানের দুর্ধর্ষ ইনিং খেললেন ল্যাথাম। অপরাজিত তিনিও। ব্যাটিং গভীরতা বাড়াতে ষষ্ঠ বোলার খেলায় নি ভারত। একইসাথে অভিষেক হয় দুই তরুণ, উমরান আর অর্শদীপের। বোলিং অনভিজ্ঞতাই ডোবালো ‘মেন ইন ব্লু’কে। অর্শদীপ দিনের শেষে ৮.১ ওভারে দিলেন ৬৮ রান। পেলেন না কোনো উইকেট। ঝুলি শূন্য চাহাল এবং ওয়াশিংটনের’ও। তবে ওয়াশিংটন ১০ ওভারে দেন মাত্র ৪২ রান। ২ উইকেট পেলেও ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়েছেন উমরান। ভারতের হারে ভিলেন ফিল্ডিং’ও। অন্তত ৩ টি ক্যাচ ছাড়ে ‘টিম ইন্ডিয়া’। ১৭ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিলো নিউজিল্যান্ড। আগামী বছর বসতে চলেছেন একদিনের বিশ্বকাপের আসর। তার আগে এহেন বোলিং ব্যর্থতা চিন্তায় রাখবে ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্ক’কে।