IND vs NZ: গতকাল ভারতের মাটিতে ৫০তম একদিনের আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো রায়পুরের শহীদ বীর নারায়ণ সিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। জয় দিয়েই নয়া মাঠের পথচলার শুরুটা স্মরণীয় করে রাখলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’ বর্তমানে একদিনের ক্রিকেটে আইসিসি ক্রমতালিকায় পয়লা নম্বরে থাকা নিউজিল্যান্ডকে হায়দ্রাবাদের পর রায়পুরেও হারিয়ে দিলো রোহিত শর্মা অ্যান্ড কোং। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে কষ্টসাধ্য জয় পেয়েছিলো ‘মেন ইন ব্লু।’ কিন্তু রায়পুরে আগুনে বোলিং করে কিউইদের শুরতেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়ে ৮ উইকেটে সহজেই জয় পেলেন শুভমান গিল (Shubman Gill), ঈশান কিষণরা (Ishan Kishan)। বোলারদের সাফল্যের মঞ্চে আরও একবার নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন তরুণ শুভমান গিল। গত কয়েক মাসে যখনই সুযোগ পেয়েছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে রান পেয়েছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে দ্বিশতরান করেছিলেন। আর দ্বিতীয় ম্যাচেও শেষ অব্দি অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরলেন দলকে। বাইশ গজে কিউই বোলারদের যাবতীয় আক্রমণ সাবলীল ভাবে সামলালেও দিনের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন সম্ভবত শুভমানকে (Shubman Gill) হতে হলো ম্যাচের শেষে। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় বিরাট কোহলি (Virat Kohli) না রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), নন-স্ট্রাইকার এন্ডে কাকে বেশী পছন্দ তাঁর। ব্যাট হাতে যে সপ্রতিভ ভঙ্গীতে বোলারদের সামলান, মাইক হাতেও কঠিন প্রশ্ন একই ভাবে সামলালেন শুভমান।
নায়ক বোলার’রা, রায়পুরে সহজেই জিতলো ভারত –
কয়েকমাস আগেই নিউজিল্যান্ড নিজেদের দেশে ভারতকে হারিয়েছিলো একদিনের সিরিজে। গতকাল রায়পুরের মাঠে কিউইদের পর্যুদস্ত করে তার বদলা নিয়ে নিলো ভারতীয় দল। টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধন্ত নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। মহম্মদ শামি (Mohammed Shami), মহম্মদ সিরাজদের (Mohammed Siraj) আগ্রাসনে শুরুতেই কেঁপে যায় কিউইরা। একটা সময় মাত্র ১৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়েছিলো তারা। ব্রেসওয়েল (২২), গ্লেন ফিলিপস (৩৬) এবং স্যান্টনার (১৭) খানিক লড়াই করায় ১০০ পেরোয় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস। শামি ৩ উইকেট তুলে নেন, ২টি করে উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া এবং ওয়াশিংটন সুন্দর। মহম্মদ সিরাজ এবং কুলদীপ যাদব পান ১ টি করে উইকেট। বোলিং বিক্রমে ১০৮ রানে গুটিয়ে যায় কিউইরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে আরও একবার সফল রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং শুভমান গিলের (Shubman Gill) জুটি। ৭২ রান যোগ করেন দু’জনে। ৫০ বলে ৫১ রান করে আউট হন রোহিত। রায়পুরে তাঁর ব্যাট থেকে দেখা গেলো ট্রেডমার্ক পুল শটও। রোহিতের পর বিরাট কোহলি (Virat Kohli) স্যান্টনারের (Mitchell Santner) বলে আউট হলেও উইকেটে টিকে থেকে দলকে জয় এনে দেন শুভমান গিল (৫৩ বলে ৪০*) এবং ঈশান কিষণ (Ishan Kishan)। ৮ উইকেটে সহজ জয় পেয়ে সিরিজ ঘরে তোলে ভারত। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টানা ৭টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জিতলো ভারতীয় দল।
রোহিত না বিরাট? বেছে নিলেন শুভমান-
রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। আধুনিক ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহীরুহ। কার সাথে ব্যাটিং বেশী পছন্দ শুভমানের? ম্যাচ শেষে প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে রোহিতের সাথে নিয়মিত ওপেনিং করতে দেখা যাচ্ছে রোহিত এবং শুভমানকে। বেশ কিছুদিন পর ওপেনিং জুটিতে ভারতকে সাফল্যও এনে দিয়েছেন তাঁরা। এখনও অব্দি ৫ ইনিংসে ৪ বার পঞ্চাশ রানের গণ্ডী পেরিয়েছে রোহিত (Rohit Sharma) এবং শুভমানের (Shubman Gill) জুটি। অন্যদিনে বিরাটের সাথেও দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। শ্রীলঙ্কা সিরিজে যখন নিজের দ্বিতীয় ODI শতরানটি করেন শুভমা, তখন উল্টোদিকে ব্যাট হাতে ছিলেন কোহলি’ই (Virat Kohli)। বিরাট নিজেও শতরান করেন সেইদিন। সঞ্চালকের প্রশ্নে তাই খানিক বিড়ম্বনাতেই পড়েন পাঞ্জাবের তরুণ ওপেনার। মুহূর্তে সামলে নিয়ে বলেন, “বাইশ গজে সময় কাটানো একটা দুর্দান্ত সুযোগ আমার কাছে। আজকে অপরাজিত থাকতে পেরেছি, ভালো লাগছে। প্রথম চার-পাঁচ ওভারর পর থেকে পেসাররা পিচ থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছিলেন না। তবে স্যান্টনার খানিক টার্ন আদায় করেছিলো আজ।” রোহিত না বিরাট? সেই প্রসঙ্গে বিতর্কে না জড়িয়ে দু’জনকেই তাঁদের প্রাপ্য সন্মান দিয়েছেন শুভমান। বলেন, “রোহিত ভাই, বিরাট ভাই ক্রিজের উল্টোদিকে থাকলে একটা দুর্ধর্ষ অনুভূতি হয়। ছোটোবেলা থেকে ওদের দেখেছি টিভি’র পর্দায় আর আজ ওঁরা আমার সাথে খেলছেন, ভেবে গর্ব হয়।” ঈশান কিষণ (Ishan Kishan)-এর সাথে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন শুভমান। বলেন, “ঈশান আর আমি খুব ভালো বন্ধু। আমরা সবসময় নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করি।”