IND vs NZ: শ্রীলঙ্কাকে একদিনের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বছরটা দুর্দান্তভাবে শুরু করেছিলো ভারতীয় দল। এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়নদের পর বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের সামনে প্রতিপক্ষ ছিলো নিউজিল্যান্ড। আইসিসি ক্রমতালিকায় এক নম্বর দল হিসেবে ভারতের মাটিতে পা রেখেছিলো কিউইরা। উপমহাদেশের উইকেট সম্বন্ধে সম্যক ধারণাও ছিলো ডেভন কনওয়ে (Devon Conway), টম ল্যাথামদের। পাকিস্তানে বাবর আজম, মহম্মদ রিজওয়ানদের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেই এই দেশে এসেছিলেন তারা। কিন্তু ভারতের অশ্বমেধের সামনে রীতিমত গুঁড়িয়ে গেলো নিউজিল্যান্ডের প্রতিরোধ। হায়দ্রাবাদে প্রথম ম্যাচে শুভমান গিলের (Shubman Gill) দ্বিশতরানের দৌলতে ১২ রানে জয় এসেছিলো। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্ল্যাক ক্যাপসদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলো শামি-সিরাজদের আগুনে বোলিং। আর তৃতীয় ম্যাচে ভারতীয় ওপেনারদের ব্যাটিং তাণ্ডবে ধরাশায়ী হলেন ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’রা। ইন্দোরের হোলকার স্টেডিয়ামে আজ টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ল্যাথাম (Tom Latham)। রোহিত শর্মা (Rohit Sharma), শুভমান গিলের জোড়া শতরান এবং হার্দিক পান্ডিয়ার (Hardik Pandya) অর্ধশতকে ভর করে ভারত তোলে ৩৮৫ রান। জবাবে ডেভন কনওয়ে লড়াই করলেও কিউইরা থামলো ২৯৫ রানে। ৯০ রানে হেরে শূন্য হাতেই একদিনের ক্রিকেটের পালা শেষ করলো নিউজিল্যান্ড। আইসিসি র্যাঙ্কিং-এ শীর্ষে উঠে এলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’
ওপেনারদের সামনে মাথানত কিউইদের-

টি-২০ বিশ্বকাপের পর থেকে ভারতীয় দলের ওপেনিং সমস্যা নিয়ে পাতার পর পাতা লেখা হয়েছে সম্ভবত। শিখর ধাওয়ান, কে এল রাহুল থেকে ঋষভ পন্থ অব্দি অনেককেই ব্যবহার করে দেখেছে ভারত। আশানুরূপ ফল আর আসে নি। দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য জমজমাট এক ওপেনিং জুটি সম্ভবত তৈরি করে ফেলতে পেরেছে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ বছরের গোড়ায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেই প্রথম ওপেন করেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma) এবং শুভমান গিল (Shubman Gill)। থামার নাম নিচ্ছেন না দু’জনেই। ৬ ম্যাচে মাত্র ১বার পঞ্চাশের কম রানের জুটি গড়েছেন তাঁরা। আজ যোগ করলেন ২১২ রান। ১১০০ দিন পর শতরান এলো রোহিতের ব্যাট থেকে। সিনিয়রের ফর্মে ফেরার দিনে ফর্ম ধরে রাখার ইঙ্গিত দিলেন জুনিয়র সতীর্থ শুভমান। আজ ১১২ রান করেন তিনি। সিরিজের তিন ম্যাচে ৩৬০ রান এলো তাঁর ব্যাট থেকে। গড় ১৮০। বাবর আজমের বিশ্বরেকর্ডে ভাগ বসালেন শুভমান। ১০১ রানে রোহিত এবং ১১২ রানের মাথায় শুভমান আউট হতে খানিক চাপে পড়েছিলো ভারত। রানের গতি কমে এসেছিলো। আজ রান পান নি ঈশান কিষণ (১৭), বিরাট কোহলি (৩৬), সূর্যকুমার যাদব (১৪)। তবে শেষলগ্নে সংহার যজ্ঞ শুরু করেন হার্দিক পান্ডিয়া (Hardik Pandya)। সহ-অধিনায়ক পান্ডিয়ার ৩৮ বলে ৫৪ রানের ইনিংসের সুবাদেই ৩৮৫ অব্দি পৌঁছায় ভারতের ইনিংস। ১৭ বলে ২৫ করেন শার্দূল ঠাকুরও। নিউজিল্যান্ড বোলারদের মধ্যে ব্লেয়ার টিকনার (Blair Tickner) ৭৮ রান খরচ করে ৩ উইকেট নেন। নবাগত জেকব ডাফি (Jacob Duffy) ৩ উইকেট পেলেও ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে খরচ করেন ১০০ রান।
কনওয়ে ফিরতেই জয়ের আশা নিভলো নিউজিল্যান্ডের –

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জোড়া শতরান করে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে (Devon Conway)। তবে ভারতের বিপক্ষে শান্তই ছিলেন প্রথম দুই ম্যাচে। আজকের সন্মানরক্ষার খেলায় অবস্য জ্বলে উঠতে দেখা গেলো তাঁকে। প্রথম ওভারে ০ রানে ফিরে যান ফিন অ্যালেন। তারপর হেনরি নিকোলস’কে সাথে নিয়ে ইনিংস গড়ার কাজ চালিয়ে গেলেন কনওয়ে। হোলকার স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায়ক পিচে দুর্দান্ত কিছু শট দেখা গেলো তাঁর থেকে। ৪০ বলে ৪২ রান করে ফিরে যান নিকোলস (Henry Nicholls)। ভারত’কে আরও একবার অ্যাডভান্টেজ এনে দেন কুলদীপ যাদব। তারপরেও পেন্ডুলামের মত দুলছিলো ম্যাচের ভাগ্য। ড্যারিল মিচেলকে (Daryll Mitchell) সাথে নিয়ে লড়ে যাচ্ছিলেন কনওয়ে (Devon Conway)। এই সময়েই পরপর দুই বুলে মিচেল এবং অধিনায়ক ল্যাথামকে (Tom Latham) আউট করে ম্যাচের রাশ ভারতের দিকে নিয়ে আসেন শার্দূল ঠাকুর। বেশ কয়েকদিন ধরে জাতীয় দলে শার্দূলের (Shardul Thakur) জায়গা পাওয়া নিয়ে বিস্তর সমালোচনা চলছিলো। আজ ম্যাচ জয়ে ব্যাটে-বলে বিশেষ অবদান রাখলেন তিনি। নিলেন ৩ উইকেট। ১০০ বলে ১৩৮ রান করে অবশেষে উমরান মালিকের (Umran Malik) বলে পরাস্ত হতে হলো কনওয়েকে। প্রথম একদিনের ম্যাচে ১৩১/৬ অবস্থা থেকে কিউইদের জয়ের কাছাকাছি এনে দিয়েছিলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল (Micheal Bracewell), মিচেল স্যান্টনার (Mitchell Santner) জুটি। আজ ব্রেসওয়েল’কে আউট করে সেই সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করেন কুলদীপ (Kuldeep Yadav)। ম্যাচে ৩ উইকেট নিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার। তিন বছর পর একদিনের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন হলো কুল-চা জুটির। কুলদীপের পাশাপাশি তাঁর বোলিং পার্টনার চাহাল’ও (Yuzvendra Chahal) আজ সফল। ২ উইকেট পেলেন তিনিও। মিচেল স্যান্টনারকে আউট করে কিউইদের ইনিংস ২৯৫ রানে গুটিয়ে দেন তিনি। ৯০ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে আরও একবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করলো ভারত।