IND vs ENG: ভালো খেলিয়াও পরাজিত’, গত কয়েক বছরে আইসিসি প্রতিযোগিতায় এই ধারা’ই দেখিয়ে আসছে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ দক্ষিণ আফ্রিকা বা নিউজিল্যান্ড নয় অনেকের মতে দিনে দিনে আসল ‘চোকার’ হয়ে উঠেছে ভারত’ই। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ জয়ের পর অনেক আশা নিয়ে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলো টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে। রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বে ভারত প্রায় ১৫ বছর পর আবার টি-২০ বিশ্বকাপ শিরোপা জিতবে এমনটা আশা করেছিলেন ১৪০ কোটি ভারতবাসী’ও। কিন্তু ফের একবার তীরে এসে তরী ডুবতেই দেখলেন দেশের ক্রিকেটপ্রেমী’রা। ২০১৪, ২০১৬ সালেও শেষে এসে হারতে হয়েছিলো। ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে এসে কপালে জুটলো হার। তাও হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে সন্মানের হার নয়। ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ চারের মোকাবিলায় হারলো ১০ উইকেটে।আশা জাগিয়ে শুরু করেছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া।’ গ্রুপ-২ থেকে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবুয়ে’কে হারিয়ে সর্বোচ্চ ৮ পয়েন্ট নিয়ে কনফার্ম করেছিলো সেমিফাইনালের টিকিট। কিন্তু বিধি বাম। আরও একবার নক-আউট থেকে খালি হাতেই ফিরছেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি’রা। গতকাল অ্যাডিলেডে ভারতের হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর নানান মহলে শুরু হয়ে গিয়েছে কাটাছেঁড়া, চুলচেরা বিশ্লেষণ। সাধারণ ক্রিকেট সমর্থক থেকে প্রাকত্ন ক্রিকেটার কেউ বাদ নেই নিজেদের মত করে ভারতের হার’কে ব্যাখ্যা করতে। সেই তালিকায় যুক্ত হলেন শোয়েব আখতার(Shoaib Akhtar)। দলচয়নের ভাবনাচিন্তাতেই গলদ ভারতের, মত দিলেন পাক পেস কিংবদন্তী।
সেমিফাইনালে লজ্জার হার ভারতের-
অ্যাডিলেডের মাঠে এর আগে বাংলাদেশ’কে হারিয়েছিলো ভারত। মাঠের পরিবেশে নিয়ে ছিলো সম্যক ধারণা। আগে ব্যাট করলে জিতবে দল, এই মাঠের ইতিহাস বলছে সেই কথা। যে দল টসে জেতে সেই দল অ্যাডিলেডে ম্যাচ জেতে না। টসে জিতে ইংল্যান্ড অধিনায়ক যখন ভারত’কে ব্যাট করতে পাঠালেন তখন যাবতীয় পারমুটেশন-কম্বিনেশন ভারতের পক্ষেই দেখাচ্ছিলো। ছবিটা পাল্টালো খেলা শুরু হতেই। ওপেনিং ব্যর্থতা ভারতের নিত্যদিনের সঙ্গী। আজ দ্রুত ফিরলেন কে এল রাহুল। মার্ক উডহীন ইংরেজ বোলিং লাইন আপ দুর্দান্ত বল করলো অ্যাডিলেডে। রোহিত শর্মা(Rohit Sharma) ফর্ম সমস্যায় ভুগে ২৮ বলে ২৭ করেন। সূর্যকুমার ১০ বলে ১৪ করেই ফিরে যান ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে। ভারত’কে টানলেন কোহলি(Virat Kohli) আর পান্ডিয়া(Hardik Pandya)। বিরাট চলতি বিশ্বকাপে চতুর্থ অর্ধশতক করলেন। ৪০ বলে ৫০ করে আউট হন। হার্দিকের ৩৩ বলে ৬৩ রানের ধুমধাড়াক্কা ইনিংস ভারত’কে সন্মানজনক ১৬৮ রানে পৌঁছে দেয়। এর পরেও লড়াই হবে আশা করা হচ্ছিলো। কিন্তু ভারত’কে লজ্জার মুখে ফেলে দিলেন বোলার’রা। ভুবনেশ্বর, শামি, অর্শদীপ, অশ্বিন, অক্ষর, হার্দিক ব্যর্থ হলেন সবাই। ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটির বিক্রমের সামনে শুরু থেকেই মাথা নুইয়ে দিলেন তাঁরা। ৭.৫০ ইকোনমিতে রান দিলেন অর্শদীপ আর অক্ষর। বাকিরা ১০ এর তলায় নেই কেউই। ১ টি উইকেট তুলতেও ব্যর্থ হয় ভারত। অ্যালেক্স হেলসের(Alex Hales) অপরাজিত ৮৬ রান আর অধিনায়ক জস বাটলার-এর(Jos Buttler) অপরাজিত ৮০ রানের সুবাদে ১৬ ওভারে লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে ভারত’কে ১০ উইকেটে লজ্জার হার উপহার দিলো ইংরেজ’রা। অ্যাডিলেডে হতশ্রী প্রদর্শনের পর কোন কোন বিষয় ভারতের বিপক্ষে গিয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শোয়েব আখতার (Shoaib Akhtar)।
প্রথম একাদশে চাহাল নেই! অবাক আখতার-
সেমিফাইনালে ভারতের হারের পর নিজের ট্যুইটারে একটি ভিডিও আপলোড করেন আখতার(Shoaib Akhtar)। ভারতের হারের কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী জোর তিনি দিলেন বোলিং ব্যর্থতা , দলগঠনের সমস্যা, দলের মানসিকতা, আগ্রাসনের অভাব সহ না্না বিষয় উত্থাপন করেন তিনি। ভারতের কি অধিনায়ক পরিবর্তন করা উচিৎ? সেদিকেও ইঙ্গিত করেন শোয়েব(Shoaib Akhtar)। ভিডিও’র শুরুতে আখতার বলেন, “জঘন্যভাবে হারলো ভারত। যা খেলেছে আজ এটাই ওদের প্রাপ্য ছিলো। ইংল্যান্ড পুরো দুরমুশ করে দিয়েছে ভারত’কে।” তাঁর নিজের দেশ পাকিস্তান ফাইনালে উঠেছে। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে শোয়েবের বক্তব্য, “আমরা তো ভেবেছিলাম ফাইনালে ভারতের সাথে দেখা হবে আমাদের, কি আর করা যাবে! এখন আর তা সম্ভব নয়। ফাইনালের পর দেখা হবে। ” হতাশাজনক বোলিং পারফর্ম্যান্সের কথা উল্লেখ করার পরে সরাসরি টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে তোপ দাগেন তিনি। বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেডের পিচ খানিক মন্থর ছিলো। সুবিধা পেয়েছেন ইংল্যান্ডের দুই লেগস্পিনার আদিল রশিদ আর লিয়াম লিভিংস্টোন। সেইকথা মাথায় রেখে আখতারের প্রশ্ন? “দলে চাহাল নেই কেনো?” তিনি বলেন, “ভারতের কাছে চাহালের মত একজন প্রকৃত স্পিনার রয়েছে, তাকে গোটা বিশ্বকাপে কেনো খেলানো হলো না বুঝলাম না আমি। খুবই বিভ্রান্তিকর দল নির্বাচন করেছে ভারত।” বস্তুত যজুবেন্দ্র চাহালের (Yuzvendra Chahal) মত একজন আক্রমণাত্মক লেগ স্পিনার থাকতেও গোটা বিশ্বকাপে তাঁকে কেনো বাইরে রাখা হলো আসে বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে ভারতেও। যেখানে ভারতীয় একাদশের দুই স্পিনার রবিচন্দ্রণ অশ্বিন আর অক্ষর প্যাটেল চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন দিনের পর দিন সেখানে চাহালের সুযোগ না পাওয়া সত্যিই বিভ্রান্তিকর। “৯ নম্বর অব্দি ব্যাটিং চাই না। একটা ঠিকঠাক স্পিনার চাই” বলেছেন ভারতের প্রাক্তনী মহম্মদ কাইফ’ও (Mohammad Kaif)।