IND vs BAN: ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ হবে আর স্নায়ুর চাপে ভুগবেন না ক্রিকেটপ্রেমী’রা? এ এখন অসম্ভবের দিকে এগোচ্ছে আস্তে আস্তে। ঢাকার মাঠেও বদলালো না ছবিটা। শেষ উইকেট জুটিতে দুর্দান্ত খেলে ভারতের মুখের সামনে থেকে ম্যাচ কেড়ে নিয়ে গেলেন মেহদী হাসান মিরাজ(Mehidy Hasan Miraj)। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয়তম এক দিন উপহার দিলেন মেহদী। অনবদ্য খেলে একদিনের সিরিজের দুর্দান্ত সূচনা করে দিলেন বাংলাদেশী অলরাউন্ডার। উল্টোদিকে অন্ধকারে ডুবে গেলো ভারত। নিউজিল্যান্ড সফরে দলে ছিলেন না রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি’র মত তারকা’রা। ভারত একদিনের সিরিজ হারায় দায়ী করা হচ্ছিলো দলের অনভিজ্ঞতা’কে। পূর্বের পড়শিদের বিপক্ষে ফিরেছেন সকল মহাতারকাই। ঢাকার শের-ই-বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টসে জিতে ভারত’কে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশের অস্থায়ী অধিনায়ক লিটন দাস। কিন্তু ব্যাটিং-এর যা চিত্র তুলে ধরলো ‘টিম ইন্ডিয়া’, তাতে আগামী একদিনের বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি’তে যে ঘাটতি রয়েছে তা প্রমাণ হয়ে গেলো আরও একবার। ভারতীয় দল স্পিন বরাবর ভালো খেলে, এমনটাই জেনে এসেছে ক্রিকেটজনতা। আর তারাই কিনা স্পিন অস্ত্রে ঘায়েল হয়ে গেলো বাংলাদেশের মাঠে? তাবড় মহাতারকাদের রীতিমত নাস্তানাবুদ হতে দেখলো ঢাকা’র মাঠে উপস্থিত জনতা। দেখলেন টিভির সামনে বসা অগণিত সমর্থক’ও। বোলিং দিয়েই ম্যাচ জিততে হৎ ভারত’কে। কাছাকাছি এসেও ছিলো ‘টিম ইন্ডিয়া’। মেহদী’র ‘মিরাকল’ উল্টেপাল্টে দিলো সব হিসেব।
চূড়ান্ত ব্যর্থ ভারতীয় ব্যাটিং, বল হাতে চমক শাকিবের-
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে হেভিওয়েট ব্যাটিং কোন দলের? প্রশ্নের উত্তরে চোখ বুজে নব্বই শতাংশ ক্রিকেটভক্ত বলবেন ভারতের নাম। বিরাট কোহলি থেকে রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান থেকে সূর্যকুমার যাদব, একের পর এক নাম বলে চলা যায়। তালিকা ফুরোতেই চাইবে না। সেই তারকাদের সাম্প্রতিক ব্যাটিং-এর যা হাল, তাতে আত্মতুষ্টির কোনো জায়গা নেই ভারতের সামনে। আগামী বছর ভারতেই বসবে একদিনের বিশ্বকাপ। তার আগে এই জাতীয় ব্যাটিং চলতে থাকলে এখন থেকেই কাপ স্বপ্ন ভুলতে পারে ভারত। আজ ঢাকায় ওপেনিং জুটি আরো একবার ব্যর্থ হলো ‘টিম ইন্ডিয়া’র। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান(Shikhar Dhawan) এবং রোহিত শর্মা(Rohit Sharma), কেউই বড় রান করতে পারেন নি। শিখর মেহদী হাসান মিরাজ’কে অহেতুক রিভার্স স্যুইপ মারতে গিয়ে বোল্ড হন ১৭ বলে ৭ রান করে। আর রোহিতের উইকেট ভেঙে দেয় শাকিব আল হাসানের বল। একই ওভারে বিরাটকেও(Virat Kohli) ফেরান শাকিব। কভারে বাজপাখির ক্ষিপ্রতায় উড়ে গিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নিলেন নবনিযুক্ত টাইগার্স অধিনায়ক লিটন দাস। আশা জাগিয়েও আজ ব্যর্থ হন শ্রেয়স আইয়ার। ৩৯ বলে ২৪ করে এবাদত হোসেনের শিকার হলেন তিনি। ওয়াশিংটন সুন্দর’কে(Washington Sundar) নিয়ে লড়লেন কে এল রাহুল(KL Rahul)। ওয়াশিংটন’কে ১৯ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখান শাকিব(Shakib Al Hasan)। কিছুক্ষণ পর ৭০ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন রাহুল’ও। ভারতের যাবতীয় লড়াইতেও যেন ইতি পড়ে সেখানেই। ০ করে আউট হন শাহবাজ আহমেদ। ব্যর্থ শার্দূল ঠাকুর এবং দীপক চাহার। তাঁদের সংগ্রহ যথাক্রমে ২ এবং ০। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার শাকিব বোঝালেন কেনো তিনি বিশ্বের সেরা। মাত্র ৩৬ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিলেন তিনি। ৪৭ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিলেন এবাদত হোসেন’ও। ৪১.২ ওভারের মাথায় ১৮৬ রানেই থেমে গেলো ভারতীয় ইনিংস।
ম্যাচে ফেরালো বোলার’রা, ‘মিরাকল’ মেহদীর সৌজন্যে শেষমেশ জয় টাইগার্সদের-
কম রানের পুঁজি রক্ষা করতে নেমে শুরুতেই ভারতের প্রয়োজন ছিলো উইকেট। সেই কাজটা ঠিকঠাকই করেছিলেন দীপক চাহার(Deepak Chahar)। বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম বলেই তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাঁ-হাতি ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত’কে। চাহারের বল শান্ত’র ব্যাটের বাইরের কোণা ছুঁয়ে স্লিপে দাঁড়ানো রোহিত শর্মা’র হাতে জমা পড়ে। শুরুতেই উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের স্বপ্ন’কে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন চাহার। তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসা আনামুল হক বিজয়’ও টেকেন নি বেশীক্ষণ। মহম্মদ সিরাজের গতি বুঝতে না পেরে ওয়াশিংটন সুন্দরের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। করলেন ২৯ বলে ১৪ রান। দ্রুত দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় ম্যাচে যখন ভারত জাঁকিয়ে বসবে বলে মনে হচ্ছে,তখন উইকেটে থিতু হয়ে যান বাংলাদেশের অস্থায়ী অধিনায়ক লিটন দাস(Litton Das) এবং ‘টাইগার্স’ ক্রিকেটের স্তম্ভ শাকিব আল হাসান। খুচরো রান হোক বা বাউন্ডারি, দু’জনে ম্যাচ’কে ধীরে ধীরে ম্যাচের পাল্লা বাংলাদেশের দিকে ঝোঁকাতে থাকলেও ভারত’কে ম্যাচে ফেরান ওয়াশিংটন সুন্দর।(Washington Sundar) লিটন এবং শাকিব দুজনকেই আউট করে ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছিলেন সুন্দর। ‘টাইগার্স’দের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদুল্লাহ এবং মুশফিকুর (Mushfiqur Rahim)রহিমের দিকে তাকিয়ে ছিলো বাংলাদেশ টিম। পরপর দুই বলে তাঁদের ফেরান শার্দূল(Shardul Thakur) এবং সিরাজ(Mohammad Siraj)। দীর্ঘসময় ব্যাকফুটে থেকেও চালকের আসনে ফেরে ‘টিম ইন্ডিয়া।’আফিফ হোসেন’কে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম উইকেট নিলেন কুলদীপ সেন(Kuldeep Sen)। স্টেডিয়ামে উপস্থিত জনতা ধরেই নিয়েছিলেন এই ম্যাচ বেরিয়ে গিয়েছে হাত থেকে। অন্য কিছু ভেবেছিলেন মেহদী হাসান মিরাজ। শেষ উইকেটে বাকি ছিলো ৫১ রান। উইকেটে টিকে থেকে ‘মিরাকল’ করে দেখালেন মেহদী। মুস্তাফিজুর রহমান’কে সাথে নিয়ে ভারতের বোলারদের সাধারণের স্তরে নামিয়ে এনে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন মেহদী। এর আগে বেশ কয়েকবার ভারতের কাছে তীরে এসে তরী ডুবেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু আজ দিন’টা আলাদা। শার্দূল, চাহার’কে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি মেরে শেষ উইকেটে ৫১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে বাংলাদেশ’কে বৈতরণী পার করালেন মেহদী(Mehidy Hasan Miraj)। অপরাজিত থাকলেন ৩৯ বলে ৩৮ রান করে, মেরেছেন ৪ টি চার এবং ২ টি ছক্কা। চাপের মুখে বোলিং আক্রমণের ভেঙে পড়া আবারও চিন্তায় রাখবে ভারত’কে। মেহদী’র ক্যাচ ফেলে বাংলাদেশ’কে সাহায্য করেন কে এল রাহুল’ও। এই অবিশ্বাস্য জয়ের পর আবেগে ভাসছে বাংলাদেশ। প্রায় জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ায় আঁধারে ডুবেছে ভারতীয় শিবির।