দল নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে আগেই জাতীয় নির্বাচকদের উদ্দেশ্যে তোপ দেগেছিলেন গৌতম গম্ভীর। এবার সরাসরি ‘টিম ইন্ডিয়া’র কোচিং স্টাফদের কাঠগড়ায় তুললেন ভারতের প্রাক্তন ওপেনার। ঘরোয়া ক্রিকেটে দিনের পর দিন ভালো পারফর্ম করেও জাতীয় দলের দরজা খুলছে না তরুণ ক্রিকেটারদের সামনে, আর অপরপক্ষে অফ ফর্ম নিয়েও দিনের পর দিন দেশের জার্সি গায়ে চাপাচ্ছেন অনেকে, এমন অভিযোগ শোনা গেলো গম্ভীরের (Gautam Gambhir) থেকে। জাতীয় নির্বাচকদের পাশাপাশি এই অস্বচ্ছতার জন্য গম্ভীরের তোপের মুখে ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড় (Rahul Dravid) এবং অন্যান্য কোচিং স্টাফেরা। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-২০ দল ঘোষণা করেছেন BCCI। চোটের কারণে দলে নেই অধিনায়ক রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। অব্যাহতি নিয়েছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli), কে এল রাহুলরা। সিনিয়র খেলোয়াড়রা না থাকা সত্ত্বেও জাতীয় দলের দরজা খোলে নি তরুণ ওপেনার পৃথ্বী শ (Prithvi Shaw)-এর কাছে। বিষয়টি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে বিঁধেছেন গম্ভীর (Gautam Gambhir)। ভারতীয় দলে আদৌ কোচের ভূমিকা কি? তুলেছেন সেই প্রশ্নও।
পৃথ্বী’কে বাইরে দেখে চটেছেন গম্ভীর-
২০১৯ সালে ডোপিং বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পৃথ্বী’র মাঠের বাইরের আচরণ রয়েছে ভারতীয় বোর্ডের আতসকাঁচের তলায়। আইপিএল, সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির মত টুর্নামেন্টে রীতিমত ভালো পারফর্ম করার পরেও ২০২১ এর পর জাতীয় দলের হয়ে টি-২০ ম্যাচে সুযোগ পান নি তিনি। ‘টিম ইন্ডিয়া’র হয়ে একটি টি-২০ তে খেলেছিলেন পৃথ্বী (Prithvi Shaw)। প্রথম বলে ০ রানে আউট হন। দ্বিতীয় সুযোগ আসে নি তাঁর সামনে। মুম্বইয়ের তরুণকে আরও একটা সুযোগ দেওয়া হোক, নানা মহল থেকে উঠছে এমন দাবী। আইপিএলে পাওয়ার প্লে’তে সর্বোচ স্ট্রাইক রেট তাঁর। গত মরসুমের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে ১৮১.৪২ স্ট্রাইক রেটে ৩৩৬ রান করে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীও হয়েছেন তিনি। তবুও ডাক পান নি ‘মেন ইন ব্লু’র। এই বঞ্চনা দেখে স্থির থাকতে পারেন গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir)। স্টার স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “কোচেদের কাজ কি? নির্বাচকেরা কি করতে আছেন? শুধু দল বাছা বা ম্যাচের আগে থ্রো ডাউন দেওয়ার জন্য? ওঁদের উচিৎ ক্রিকেটারদের সাহায্য করা। পৃথ্বী শ (Prithvi Shaw) কতটা প্রতিভাবান তা আমরা সকলে জানি। কোচ বা নির্বাচকদের উচিৎ ওকে সঠিক পথে চালনা করা, সেটাই টিম ম্যানেজমেন্টের কাজ।” আরও বলেছেন, “পৃথ্বীকে জাতীয় দলের পরিসরে রাখা একান্ত দরকার। ও যতটা প্রতিভাবান, আর যেভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু করেছে, ওকে সমর্থন যোগানো উচিৎ। নির্বাচকদের উচিৎ পৃথ্বীর (Prithvi Shaw) পাশে দাঁড়ানো। জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া।”
রাহুল দ্রাবিড়ের দিকেও তোপ দাগলেন গৌতম গম্ভীর-
পৃথ্বী শ’কে (Prithvi Shaw) বাদ দেওয়ার মূল কারণ হিসেবে তাঁর ফিটনেস এবং মাঠের বাইরের আচরণকে দায়ী করা হয়েছে নানা মহল থেকে। ভারতের হয়ে ২০০৭ টি-২০ বিশ্বকাপ এবং ২০১১ একদিনের বিশ্বকাপজয়ী গম্ভীর (Gautam Gambhir) অবশ্য সেই অভিযোগ পাত্তা দিতে নারাজ। খেলোয়াড়দের পাশে থাকতে যথেষ্ঠ উদ্যোগ নিচ্ছেন না কোচ দ্রাবিড়। এমনটাই মত তাঁর। পৃথ্বীর সঙ্গে ২০১৮ অনুর্দ্ধ-১৯ বিশ্বকাপে কাজ করেছেন দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। প্রাক্তন ছাত্রের পাশে দাঁড়ান কোচ, এমনটা অনুরোধ গম্ভীরের (Gautam Gambhir)। তিনি জানান, “ যদি ফিটনেস বা মাঠের বাইরের জীবনযাত্রা দলে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয় তাহলে কোচ রাহুল দ্রাবিড় বা মুখ্য নির্বাচক নিজে পৃথ্বীর (Prithvi Shaw) সাথে কথা বলুক। ওকে সোজাসুজি জানানো হোক কারণটা, আর জাতীয় দলের পরিসরে রাখা হোক। ওর দিকে ঠিক করে নজর রাখার জন্যেও জাতীয় দলের পরিসরে পৃথ্বীকে রাখা খুব জরুরী। বরং সেই পরিসরের বাইরে গেলেই যা খুশি তাই করতে পারে ক্রিকেটারেরা।”
পৃথ্বীর দক্ষতায় পূর্ণ আস্থা রয়েছে গম্ভীরের-
এই মুহুর্তে জাতীয় দলে জায়গা না পেলেও ক্রিকেটার হিসেবে পৃথ্বী শ (Prithvi Shaw) যে বিশ্বমানের তা নিয়ে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই গম্ভীরের (Gautam Gambhir) মনে। আরও একটা সুযোগ তাঁর প্রাপ্য বলেই মনে করছেন প্রাক্তন কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং দিল্লী ক্যাপিটালস অধিনায়ক। পৃথ্বীকে (Prithvi Shaw) পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন “ জাতীয় দলের হয়ে খেলার বাসনা থাকলে প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁক রাখা চলবে না। ফিটনেস বা আচরণ সব দিক থেকেই পারফেক্ট হতে হবে।” এরপরেও আবার নির্বাচকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “একজন তরুণ ক্রিকেটারকে অন্তত কয়েকটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ। যদি তাও সে ব্যর্থ হয়, তাহলে হয়ত সে জাতীয় দলে খেলার যোগ্য নয়, তখন তাকে বাতিল করার কথা ভাবা যেতে পারে।” পৃথ্বীকে ইঙ্গিত করে গম্ভীরের (Gautam Gambhir) মন্তব্য, “ যদি ও যথেষ্ট পরিশ্রম করে, খেলার ব্যাপারে প্যাশনেট হয়, আমি জানি কতটা ধ্বংসাত্মক ব্যাট করতে পারে ও। তখন কোচ, নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্টের সকলের উচিৎ তরুণ প্রতিভাদের পাশে দাঁড়ানো।”