চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) নিয়ে ভারত-পাক দড়ি টানাটানি জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেটমহলের চর্চায়। আইসিসি’র ইভেন্ট ক্যালেন্ডার অনুযায়ী টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা পাকিস্তানের। কিন্তু ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা সেখানে যথেষ্ট নয়, এই যুক্তি সামনে রেখে বেঁকে বসেছিলো বিসিসিআই। ওয়াঘা সীমান্তের ওপারে পা রাখবে না টিম ইন্ডিয়া, স্পষ্ট জানিয়েছিলো তারা। এই নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলে দুই পক্ষের তরজা। ২০২৩-এর এশিয়া কাপের (Asia Cup 2023) মতই ২০২৫-এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও (Ct 2025) হাইব্রিড মডেলে হোক, দাবী করেছিলো ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। পিসিবি’র তরফে লম্বা সময় এই দাবীর বিরোধিতা করা হলেও শেষমেশ অবস্থা বেগতিক দেখে খানিক পিছু হটেন মহসীন নকভি’রা (Mohsin Naqvi)। কিন্তু বিনা যুদ্ধে সূচাগ্র মেদিনীও হাতছাড়া করে নি তারা। বরং হাইব্রিড মডেলে সম্মতিদানের বদলে আদায় করে নিয়েছে নিজেদের দাবীও।
Read More: অবিরাম বৃষ্টি ‘ব্রিসবেনে’, বন্ধ হলো ভারত-অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনের খেলা !!
শর্ত চাপিয়েছিলো পাকিস্তান বোর্ড-
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025) নিয়ে সমস্যা চলেছে বেশ কয়েক মাস। সম্ভাব্য ক্রীড়াসূচি ও গ্রুপ বিন্যাস পিসিবি’র তরফে আইসিসি’র কাছে জমা করা হয় জুনে। তার পরেই নিজেদের আপত্তির কথা সরকারী ভাবে সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থাকে জানিয়ে দেয় বিসিসিআই। ভারতকে রাজী করানোর জন্য চেষ্টার কসুর করে নি পাক সংস্থা। প্রথমে তাদের তরফে জানানো হয় যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টিম ইন্ডিয়ার সবক’টি ম্যাচ আয়োজন করা যেতে পারে লাহোরে। পরে মরিয়া হয়ে মহসীন নকভি’রা (Mohsin Naqvi) পাকিস্তানের মাটিতে ম্যাচ খেলার পরেই ভারতে ফেরার প্রস্তাবও দিয়ে দেখেছিলেন। কিন্তু চিঁড়ে ভেজে নি কিছুতেই। নিজেদের দাবীতে অনড় ছিলো ভারত। চাপে পড়ে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েও দেখেছে পাক বোর্ড। কিন্তু লাভ হয় নি কিছুই।
ভারতকে ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Ct 2025) আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছিলো পাক সংস্থা। কিন্তু মুহূর্তে খারিজ হয়ে যায় তা। পরে জানা যায় যে হাইব্রিড মডেলে সায় দিতে রাজী আছেন নকভি’রা। কিন্তু শর্ত চালিয়েছেন আইসিসি ও বিসিসিআই-এর উপর। তাঁরা নাকি আইসিসি’র লভ্যাংশের অন্তত ৭ শতাংশ দাবী করেছেন। সাথে ভারতে আয়োজিত আইসিসি ও অন্যান্য বহুদলীয় টুর্নামেন্টগুলিও যাতে হাইব্রিড মডেলে হয় তা নিশ্চিত করার জন্যও সওয়াল করেছেন। ২০৩১ অবধি কোনো প্রতিযোগিতা খেলতে পাক দল ভারতে আসতে রাজী নয়। পরে পাক সংবাদমাধ্যমে পিসিবি (PCB) সূত্রে দাবী করা হয় যে বাড়তি অর্থের দাবী করা হয় নি। কেবল ২০২৭ অবধি ভারতে না যাওয়ার ব্যাপারেই সবুজ সংকেত চাওয়া হয়েছে। সম্মানজনক সমাধানসূত্র না মিললে তারা যে সম্মতি জানাবেন না তাও ঘোষণা করেন পিসিব প্রধান মহসীন নকভি।
পিসিবি’র দাবী মানছে আইসিসি-
ভারতে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই, তাই পাকিস্তানের আসতে না চাওয়ার পিছনে কোনো যুক্তিও নেই, আইসিসি’কে জানিয়েছিলো ভারত। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন দর কষাকষি চলে। অবশেষে আইসিসি’র মধ্যস্থতায় একটি সমাধানসূত্র মিলেছে বলে খবর সূত্র মারফত। শনিবার একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিতে পারে সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা। আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ, বিসিসিআই ও পিসিবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন এই বৈঠকে। জানা গিয়েছে যে হাইব্রিড মডেলেই হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (CT 2025)। ভারত নিজেদের ম্যাচগুলি খেলবে দুবাইতে। ২০২৭ অবধি ভারতে না আসার যে দাবী পাক বোর্ড তুলেছিলো, তাতে আদৌ সম্মতি মিলেছে কিনা জানা যায় নি। ভারতের তরফে লিখিত আশ্বাসবাণী না মেলারই সম্ভাবনা।
তবে ২০২৬-এর টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য বাবর আজমদের যে ভারতের মাটিতে পা রাখতে হবে না তা এক প্রকার নিশ্চিত। যৌথ আয়োজক হিসেবে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। সেখানেই ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। ভারত-পাক (IND vs PAK) ম্যাচ’ও সরে যাচ্ছে কলম্বোতে। কোনো রকম বাড়তি অর্থ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে দেওয়া হবে না। এছাড়া ২০২৭-এর পর মেয়েদের একটি আইসিসি ইভেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব পাকিস্তানকে দেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। সম্পূর্ণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (Ct 2025) দেশে আয়োজনের স্বপ্ন ভাঙছে পাক বোর্ডের। কিন্তু সম্পূর্ণ আশাহত সম্ভবত হবেন না মহসীন নকভি’রা। তীব্র দর কষাকষির পর অন্তত ২০২৬-এর টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য ভারতে যাতে না যেতে হয় তার মৌখিক সম্মতি আদায় করতে পেরেছে তাঁরা। বিষয়টিকে জয় হিসেবেই দেখতে পারে পাকিস্তান।