আরও একটা টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে ভারতীয় দল’কে। ইংল্যান্ডের কাছে ভারতের হারের পর থেকেই চলছে ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত। কেউ দোষ দিচ্ছেন BCCI-এর দল নির্বাচন’কে। কেউ বা কোচ দ্রাবিড় এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মা’কে। তবে একটি বিষয়ে সকলেই একমত যে ভারতের দৈন্যদশার অন্যতম কারণ ওপেনিং জুটির লাগাতার ব্যর্থতা। পাওয়ার-প্লে’র প্রথম ৬ ওভারে বাকি দলগুলো যেখানে বড় রান তোলার দিকে মন দিয়েছিলো সেখানে ভারত নিয়মিত মন্থর ভাবে ইনিংস শুরু করেছে। ওপেনিং থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো কে এল রাহুল অথবা রোহিত শর্মা’কে। কে হতে পারতেন বিকল্প? উঠে আসছে ঋতুরাজ গায়কোয়ারের(Ruturaj Gaikwad) নাম। চলতি বিজয় হাজারে ট্রফিতে ঋতুরাজের(Ruturaj Gaikwad) ব্যাটে রানের ফুলঝুড়ি দেখে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ’রা বলতে বাধ্য হচ্ছেন, যে ভুল হয়ে গিয়েছে ভারতীয় বোর্ডের। ঋতুরাজ’কে টি-২০ বিশ্বকাপে সুযোগ দিলে হারতে হত না ভারত’কে। ট্রফি নিয়েই হয়ত দেশের বিমানে উঠতেন বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়া’রা।
সাত ছক্কায় রেকর্ড বইতে নাম তুললেন ঋতুরাজ-
ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ কয়েকবছর ধরেই দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন মহারাষ্ট্রের ঋতুরাজ গায়কোয়াড়(Ruturaj Gaikwad)। চলতি বছরের বিজয় হাজারে ট্রফিও তার ব্যতিক্রম নয়। এখনও অব্দি ৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২১৫ বল খেলে তাঁর মোট রান ২৭৫। মাত্র ১ বার আউট হওয়ায় ব্যাটিং গড়’ও ২৭৫। আজ বিজয় হাজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে অনন্য কীর্তি স্থাপন করলেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রের হয়ে ১৫৯ বলে ২২০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস তো খেললেন’ই। তার সাথে এক ওভারে কিনা নিলেন ৪৩ রান! এই অবিশ্বাস্য কান্ডের সাক্ষী থাকলো আজ ক্রিকেট বিশ্ব। ইনিংসের ৪৯ তম ওভারে বল করতে এসেছিলেন শিবা সিং। ঋতুরাজ রীতিমত রাজ করলেন তাঁর বোলিং-এ। প্রথম চারটি বল গ্যালারিতে পাঠিয়েছিলেন আগেই। পঞ্চম বল’টি হতাশ শিবা নো করে বসেন। ঋতুরাজ সেটিকেও পাঠিয়ে দেন মাঠের বাইরে। ষষ্ঠ বলেরও একই দশা হয়। পঞ্চম বলটি নো হওয়ায় আরও একটি বল অতিরিক্ত করতে হয় শিবা’কে। সংহার মূর্তি ধরা ঋতুরাজ কোনোরকম দয়ামায়া না দেখিয়ে সেটিকেও গ্যালারির রাস্তা দেখান। এক ওভারে সাতটি ছয় এবং এক রান অতিরিক্ত। মোট ৪৩ তুলে নিয়ে রেকর্ড বইতে নাম তুলে ফেললেন তিনি। রবি শাস্ত্রী, যুবরাজ সিং বা হার্শেল গিবস, এক ওভারে ছয় ছক্কার রেকর্ড করেছেন বেশ কয়েকজন। তবে একদম সাত ছক্কা? উত্তর খুঁজতে পরিসংখ্যানবিদ’দের বিপদে পড়তে হবে।
আন্তর্জাতিক স্তরে ফেরানো হোক ঋতুরাজ’কে, উঠছে দাবী-
আন্তর্জাতিক মানের বোলারদের খেলার অভিজ্ঞতাও ভরপুর রয়েছে মহারাষ্ট্রের ব্যাটারের। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি। নিয়মিত ওপেনার’ও বটে। ২০২১ মরসুমে চেন্নাইয়ের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিলো ঋতুরাজ(Ruturaj Gaikwad) ও ফাফ দু প্লেসি’র(Faf Du Plessis) ওপেনিং জুটি। সেই মরসুমে ১৬ ম্যাচে ৬৩৫ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের কমলা টুপি নিজের নামে করেছিলেন ঋতুরাজ(Ruturaj Gaikwad)। করেছিলেন শতরান’ও। এখনও অব্দি নিজের আইপিএল কেরিয়ারে ৩৬ ম্যাচে ১২০৭ রান করেছেন ডান-হাতি ওপেনার। ব্যাটিং গড় ৩৮ এর কাছে। আইপিএল পারফর্ম্যান্সের পর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। খেলেছেন ১ টি একদিনের ম্যাচ এবং ৯ টি টি-২০, তবে বিশেষ সাফল্য আসে নি। একটি টি-২০ অর্ধশতরান করলেও দেখাতে পারেন নি ধারাবাহিকতা। তাই তাঁকে ছেঁটে ফেলতে দেরী করে নি ভারতের ক্রিকেট বোর্ড। যেখানে ভারতের নিয়মিত ওপেনার’রা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছেন, দ্রুত গতিতে রান তুলতে পারছেন না, সেখানে নতুন রক্ত আমদানির প্রয়োজন রয়েছে মানছেন অনেকেই। আর ঋতুরাজের(Ruturaj Gaikwad) প্রতিভা’র কথা মাথায় ততই স্পষ্ট হচ্ছে তাঁকে দলে ফেরানোর দাবী।