জয় শাহ বনাম রামিজ রাজা দিয়ে শুরু হয়েছিলো। সময় যত এগিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের ক্রিকেট কর্তাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ গড়িয়েছে চরম পর্যায়ে। এমনিতেই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ বহুদিন হলো। শেষবার ভারত পাকিস্তান গিয়েছিলো ২০০৮ সালের এশিয়া কাপ খেলতে। সেই বছর’ই ২৬শে নভেম্বর মুম্বই-এর তাজ হোটেল সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় জঙ্গী নাশকতার পর আর পাকিস্তানের মাটিতে ভারত-পাক দ্বৈরথ দেখা যায় নি। ২০০৯ সালে ওয়াঘার অপারে যাওয়ার কথা থাকলেও তা বাতিল করে ‘মেন ইন ব্লু।’ ২০১২ সালে পাক দল শেষবার ভারতে এসেছিলো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে। সেই শেষ। এরপর এশিয়া কাপ,বিশ্বকাপ,চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত বহুদলীয় টুর্নামেন্টগুলি ছাড়া খেলার মাঠে দেখা হয় নি দুই দলের। টি-২০ বিশ্বকাপের মত প্রতিযোগিতা খেলতে পাকিস্তান ভারতে এলেও ভারত আর কখনো যায় নি ওয়াঘার পশ্চিম পারে। তবে আগামী বছর এশিয়া কাপ হওয়ার কথা পাকিস্তানের মাটিতে। ভারত এখনও রাজী নয় পড়শি দেশে দল পাঠাতে। আসন্ন এশিয়া কাপে ভারতের খেলা নিয়ে তাই তৈরি হয়ে জটিলতা। এই জটিলতা আরও বাড়িয়েছে ভারতের বোর্ড সচিব জয়ে শাহের মন্তব্য। তার পালটা দিয়ে আগুনে ঘি ঢেলেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রধান রামিজ রাজা(Ramiz Raja)। এবার ক্রিকেটীয় বিতর্কে যুক্ত হলো রাজনীতির রঙ’ও। রাজা’র দিকে তোপ দাগলেন স্বয়ং ভারতের ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর(Anurag Thakur)।
কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন রামিজ রাজা-

ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহ জানিয়েছিলেন, কোনও অবস্থাতেই এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাবে না ভারত। দরকারে কোনও নিরপেক্ষ দেশে খেলা হবে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতা। বিষয়টি নিয়ে আগেও একাধিকবার ঘনিষ্ট মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পিসিবি প্রধান রামিজ রাজা। আরও একবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তিনি। ঊর্দু নিউজ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “ভারতের আগামী বছর যে একদিনের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা আছে, পাকিস্তান যদি সেখানে না খেলে, তবে খেলা দেখবে কে? আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, যদি ভারত এখানে আসে, আমরাও যাবো বিশ্বকাপ খেলতে। যদি ওরা না আসে, তবে আমাদের ছাড়াই বিশ্বকাপ খেলতে হবে ভারত’কে। আগ্রাসী নীতি নেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।” নিজেদের দলের পারফর্ম্যান্স নিয়েও উচ্ছ্বসিত তিনি। জানান, “মাঠে ভালো করছে আমাদের দল। আমি বরাবর বলে এসেছি, পাকিস্তান ক্রিকেট’কে অর্থনৈতিক ভাবে আরও শক্তপোক্ত হতে হবে। একমাত্র মাঠের পারফর্ম্যান্স ভালো হলেই মাঠের বাইরে এই উন্নতিগুলো হওয়া সম্ভব।” ভারতের দিকে খানিক কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়ে তাঁর বক্তব্য, “২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপে ভারত’কে হারিয়েছি আমরা, আবার এই বছরই এশিয়া কাপে আমাদের কাছে হেরেছে ভারত। ওদের বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি থাকতে পারে, কিন্তু এক বছরের মধ্যে দুইবার ওদের হারিয়েছে পাকিস্তান দল।”
আসরে এবার ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর-

দুই পড়শি দেশের মধ্যেকার ক্রিকেট বিতর্কে এবার লাগলো রাজনীতির রঙ। এতদিন দুই দেশের সমর্থক বা ক্রিকেতবোদ্ধাদের মধ্যেই সীমিত ছিলো এই আলোচনা। এইবার সরাসরি আসরে নামলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। কেন্দ্রের মন্ত্রী হলেও হিমাচল প্রদেশের অনুরাগ ঠাকুর ক্রিকেট প্রশাসনে দীর্ঘদিন ছিলেন। রামিজ রাজা’র হুমকিকে পাত্তা দিতেই নারাজ তিনি। গতকাল সাংবাদিক’রা তাঁর কাছে পিসিবি প্রধানের বক্তব্য তুলে ধরলে তিনি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে জানান, “ সময় আসলেই দেখা যাবে। ক্রীড়াদুনিয়ার এখন বড় নাম ভারত। কোনও দেশের সাধ্য নেই ভারত’কে এড়িয়ে চলে।” অর্থাৎ নিজেদের কথা ফিরিয়ে নিয়ে ভারতে একদিনের বিশ্বকাপ খেলতে আসতেই হবে পাক দল’কে, এমনটাই ইঙ্গিত কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী’র। এর আগে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার আকাশ চোপড়া’ও একই কথা বলেছিলেন। জয় শাহের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেছিলেন, “ভারত যখন চাইছে, তখন এশিয়া কাপের জায়গাও পরিবর্তিত হবে। আর পাকিস্তান’ও ঠিকই ভারতে আসবে বিশ্বকাপ খেলতে।” এশিয়া ও বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থাগুলিতে ভারতের যা দাপট, তাতে পাকিস্তানের আপত্তি ধোপে টিকবে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।