গত কয়েকবছরে যে কয়েকটি ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেট অনুরাগীদের চমকে দিয়েছিলো তার মধ্যে অন্যতম ছিলো ২০১৯ সালের একদিনের বিশ্বকাপে বিজয় শঙ্করের (Vijay Shankar) জায়গা পাওয়া। তার থেকেও বেশী ক্রিকেট দর্শকেরা অবাক হয়েছিলেন অম্বাতি রায়ডুকে (Ambati Rayudu) বিশ্বকাপগামী দলে না দেখে। সেই সময় ভারতীয় মিডল অর্ডারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিলেন রায়ডু। কোহলির পরে চার নম্বরে রায়ডুকেই ভেবেছিলেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। কিন্তু হায়দ্রাবাদের ক্রিকেটারকে বাইরে রেখে ভারত বেছে নেয় বিজয় শঙ্করকে। তামিলনাড়ুর ক্রিকেটারকে জায়গা দেওয়ার স্বপক্ষে ভারতের তৎকালীন নির্বাচক প্রধান এম এস কে প্রসাদ (MSK Prasad) বলেছিলেন যে ‘শঙ্কর যেহেতু থ্রি ডি ক্রিকেটার, সেহেতু রায়ডুর বদলে তাঁকেই ভাবা হয়েছে।’ এই মন্তব্য নিয়ে সেই সময় বেশ চর্চা হয়েছিলো। বাদ পড়ে হতাশ রায়ডু (Ambati Rayudu) নিজে ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন, “বিশ্বকাপ দেখবো বলে থ্রি ডি চশমার অর্ডার দিলাম।”
ভারতীয় বোর্ডের ‘ব্লু-আইড বয়’ শঙ্কর (Vijay Shankar) অবশ্য বিশ্বকাপে বিশেষ দাগ কাটতে পারেন নি। ৩ ম্যাচে মাত্র ৫৮ রান এসেছিলো তাঁর ব্যাট থেকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্পেলের প্রথম বলে উইকেট নেওয়াই তাঁর বিশ্বকাপ জার্নির একমাত্র ‘সিলভার লাইনিং।’ টুর্নামেন্টে দুটি মাত্র উইকেট পান তিনি। এরপর চোটের কবলে পড়ে ছিটকে গিয়েছিলেন শেষ দুই ম্যাচ থেকে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে (Mayank Agarwal) তড়িঘড়ি বদলি হিসেবে দলে জায়গা দেওয়া হয়। ফর্মে থাকা রায়ডুকে বাদ দিয়ে শঙ্করকে জায়গা দেওয়া ভারতীয় দলের ভুল সিদ্ধান্ত বলেই একমত হয়েছিলেন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ। বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার পর আর জাতীয় দলে ফেরা হয় নি রায়ডুর (Ambati Rayudu)। ভালো খেলেও ছাঁটাই হওয়ার যন্ত্রণা তিনি যে এখনও ভুলতে পারেন নি তা আবারও বোঝা গেলো সম্প্রতি। আইপিএলের ফাইনালের পর অবসর নিয়েছেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠলো হতাশার কথা।
Read More: রোহিত শর্মার ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা, BCCI-এর শাস্তির মুখে পড়ে হারাচ্ছেন অধিনায়কত্ব !!
খেতাব জিতেই অবসর নিলেন রায়ডু-

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষটা মন ভালো করা না হলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে কিন্তু রূপকথা লিখেই বিদায় নিলেন অম্বাতি রায়ডু (Ambati Rayudu)। আচমকা বাদ পড়েছিলেন ভারতীয় দল থেকে। কিন্তু চেন্নাই সুপার কিংস জার্সিতে আইপিএল ট্রফি জিতেই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে সরে গেলেন তিনি। গুজরাত টাইটান্সের (GT) বিরুদ্ধে রোমহর্ষক ম্যাচে পঞ্চম ট্রফি জেতে চেন্নাই। একই সাথে ষষ্ঠ আইপিএল খেতাব জিতে রোহিত শর্মার (Rohit Sharma) সাথে সফলতম আইপিএল ক্রিকেটার হিসেবে একই ব্র্যাকেটে জায়গা করে নেন রায়ডু। এর আগে তিনটি ট্রফি তিনি জিতেছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে (MI) থাকাকালীন। ৩টি খেতাব তিনি জিতলেন চেন্নাইয়ের (CSK) হলুদ জার্সি গায়ে।
আইপিএল কেরিয়ারে ২০৩ ম্যাচে ৪৩৪৮ রান করেছেন তিনি। করেছেন ১টি শতরান এবং ২২টি অর্ধশতরান। মুম্বই এবং চেন্নাই দলে মিডল অর্ডারের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে নিজের লেগ্যাসি কায়েম করেছেন তিনি। যাওয়ার বেলাতেও আইপিএল ফাইনালকে রানের রোশনাইতে রাঙিয়ে দিয়ে গেলেন রায়ডু (Ambati Rayudu)। ৮ বলে তাঁর ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংসটি চেন্নাইয়ের খেতাব জয়ের পথ সুগম করে। লং অফের ওপর দিয়ে তাঁর মারা একটি ছক্কা দেখে স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনিও (MS Dhoni) বলেছেন, “বুড়ো বয়সেও ভুলবো না।” তাঁকে সম্মান জানাতে অভিনব পন্থা নিতে দেখা যায় ধোনিকে। ট্রফি তুলতে তিনি পাঠান রায়ডুকেই (Ambati Rayudu)।
BCCI-এর প্রতি জমা রয়েছে ক্ষোভ-

ভারতের জার্সিতে অম্বাতি রায়ডু (Ambati Rayudu) খেলেছেন ৫৫টি ম্যাচ। তাঁর ব্যাটিং গড় রীতিমত চোখধাঁধানো। ৪৭.০৬ গড়ে ৫০ ইনিংসে ১৬৯৪ রান করেছেন তিনি। রয়েছে ৩টি শতরান এবং ১০টি অর্ধশতক। তা সত্ত্বেও বাদ পড়ার বিষয়টি মানতে পারেন নি তিনি। ভারতীয় বোর্ডের প্রতি পুষে রেখেছেন ক্ষোভ। অবসরের পর কেরিয়ার নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে TV9 তেলুগুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোর্ডের বিরুদ্ধে রীতিমত বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেন, “বিসিসিআই-এর কর্মকর্তারা ২০১৮’তে আমায় বলেছিলেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হতে।” পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে বোঝা যাবে যে প্রস্তুতিতে কোনো ত্রুটি রাখেন নি রায়ডু (Ambati Rayudu)। ২০১৮ সালে একদিনের ক্রিকেটে ১১ ম্যাচে ৫৬ ব্যাটিং গড়ে ৩৯২ রান করেছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও চূড়ান্ত দলে জায়গা না পাওইয়ার হতাশা এত বছর পরেও ভুলতে পারেন নি তিনি।