অভিষেক থেকে অবসর, একজন ক্রিকেটারের কাছে এটি একটি বৃত্তপূরণ।অভিষেকের সময় কাজ করে এক আনন্দময় উদ্দীপনা, যেখানে অবসরের মধ্যে লুকিয়ে থাকে অসীম বেদনা।যা একজন ক্রিকেটার ছাড়া আর কারোর পক্ষে অনুধাবন করা বেশ কঠিন একটা বিষয়।বিক্ষিপ্ত ঘটনা আবার সবকিছুর ন্যায় এক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়, যেখানে আচমকা অবসরের পর ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেছে তারকা ক্রিকেটারেরা ।তাদের ভক্তদের এই বিষয়টি দিয়েছে অনাবিল আনন্দ।আজ এমনই সাত ক্রিকেটারের কথা বলবো যারা অবসরের পর পুনরায় প্রত্যাবর্তন করেছেন ক্রিকেটে।
আম্বাতি রায়ডু
ভারতীয় ক্রিকেট দলের একসময়ের নিয়মিত সদস্য ছিলেন আম্বাতি রায়ডু।২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।সময়ের সাথে সাথে দুরন্ত ব্যাটিং প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে জাতীয় দলে নিজের জায়গা পাকা করেন তিনি।২০১৮ সাল থেকে জাতীয় দলে ৩ এবং ৪ নম্বর ব্যাটিং স্লটে তার পারফরম্যান্স ছিলো ঋতিমতো প্রশংসনীয়।ধারাবাহিক ভাবে ভালো প্রদর্শন তাকে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের দলে অন্যতম সদস্য হিসেবে প্রথম সারিতে এনে দেয়।কিন্ত সমস্যার সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে।সেইবার প্রত্যাশা মতো পারফরম্যান্স করতে পারেননি তিনি।এরপর আইপিএলে তাকে পাওয়া যায়নি চেনা ছন্দে ।সুযোগ হয়না তার বিশ্বকাপের দলে ।যদিও স্কোয়াডের স্ট্যান্ড বাই ক্রিকেটার ছিলেন তিনি ।কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় তখনই যখন বিজয় শঙ্কর চোট পেয়ে ছিটকে গেলে স্ট্যান্ড বাই ক্রিকেটার হিসেবে তাকে সুযোগ না দিয়ে সুযোগ করে দেওয়া হয় আনক্যাপড ক্রিকেটার ময়ঙ্ক অগ্রবাল’কে।ক্রিকেট মহলে দেখা দেয় তুমুল বিতর্ক।এরপর আচমকা ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই ভারতীয় ব্যাটসম্যান।যদিও পরবর্তী সময়ে নিজের সিদ্ধান্ত বদলে পুনরায় হায়দ্রাবাদের হয়ে মাঠে নামেন তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে।এইমুহুর্তে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএলে খেলতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
কেভিন পিটারসেন
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা একজন ক্রিকেটার কেভিন পিটারসেন।সাউথ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটার ২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেন ইংল্যান্ডের হয়ে।এরপর ধারাবাহিক ভাবে ভালো পারফরম্যান্সের মধ্যে দিয়ে ক্রমশ খবরের শিরোনামে উঠে আসতেন তিনি।২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে আয়োজিত টি টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষেত্রে দেশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কেপি।নির্বাচিত হন ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্ট।কিন্তু পরবর্তী সময় দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার জন্য সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি ২০১২ সালে।যদিও কয়েক মাস বাদেই ফের সীমিত ওভারের খেলায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন তিনি।অবশেষে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই তারকা ইংল্যান্ড ক্রিকেটার।
কার্ল হুপার
নিজের ক্রিকেটীয় সময় অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে গন্য হতেন কার্ল হুপার।ডান হাতি ব্যাটসম্যান এবং ডান হাতি এই অফস্পিনার একসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার সপ্তাহ তিনেক আগে আচমকা ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।তার আচমকা এমন সিদ্ধান্ত অবাক করেছিলো তার সতীর্থ থেকে ক্রিকেট বোর্ড’কে।যদিও পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে পুনরায় ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।এবং দেশের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেন।২০০৩ সালের বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক।১৯৮৭ থেকে ২০০৩ অবধি ক্রিকেট খেলেছিলেন তিনি ।দেশের হয়ে খেলেছিলেন ১০২ টেস্ট এবং ২২৭ টি ওয়ানডে।
শাহিদ আফ্রিদি
পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা একজন অলরাউন্ডার হলেন শাহিদ আফ্রিদি।একজন লেগ স্পিনার হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার।পরবর্তী সময়ে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন তার বিস্ফোরক ইনিংস খেলার প্রতিভার জন্য।২০০৯ সালের পাকিস্তানের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন আফ্রিদি ।নির্বাচিত হয়েছিলেন ফাইনালের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ ।১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল অবধি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন আফ্রিদি ।এর মাঝে একাধিক বার অবসর নিয়েছিলেন তিনি।এখনো ঘরোয়া টি টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলতে দেখা যায় তাকে।
ইমরান খান
পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেস বোলিং অলরাউন্ডার ছিলেন।১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন তিনি ।কিন্তু ঠিক তার পরের বছর দেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়া উল হকের অনুরোধে পুনরায় দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়ে প্রতাবর্তন করেছিলেন তিনি।১৯৯২ সালে তার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জিতেছিলো পাকিস্তান।ফাইনালে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি ।দেশের হয়ে সেটাই ছিলো তার শেষ ম্যাচ।
জাভেদ মিয়াদাঁদ
পাকিস্তান ক্রিকেট জগতের আরেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার হলেন জাভেদ মিয়াদাঁদ।তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলাকালীন পাকিস্তান ক্রিকেট দল সাফল্যের শিখরে পৌছায় ।এবং এক্ষেত্রে অন্যতম কারণ মিয়াদাঁদের ব্যাটিং।একাধিক ম্যাচে দেশকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি।১৯৯২ সালে দেশের বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মিয়াদাঁদ।১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।যদিও পরবর্তী প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে।কিন্তু সেইবার বিশ্বকাপে বিশেষ কিছু করে উঠতে পারেননি তিনি।এরপর ক্রিকেট থেকে পাকাপাকি অবসর নেন এই তারকা পাকিস্তানি ক্রিকেটার।
যুবরাজ সিং
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন অলরাউন্ডার হলেন যুবরাজ সিং।২০০৭ এর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ,২০১১ সালে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এই পান্জাবের অলরাউন্ডার ।এমনকি ২০১১ সালের বিশ্বকাপের ম্যান অফ দ্য টুর্নামেন্টে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফির ফাইনালে দেশের হয়ে শেষ বারের মতো খেলতে দেখা যায় যুবি’কে।এরপর জাতীয় দলে ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন তিনি।এবং অবশেষে অবসর নেন ২০১৯ সালের জুন মাসে।খুব সম্প্রতি ফের আরেকবার ঘরোয়া ক্রিকেটে টি টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে নিজের রাজ্যের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুবি।তার এহেন সিদ্ধান্তে দারুণ খুশি তার ভক্তরা।