অবশেষে ২৫ বছরের শাপমুক্তি পেরুর! শেষ পেরু বিশ্বকাপ খেলেছিল ১৯৮২ সালে । তারপর বহু সময় কেটে গেলেও পেরুকে আর দেখা যায় নি বিশ্বকাপে। এবারে ফের কনমেবল গ্রুপ থেকে রাশিয়া যাওয়ার টিকিট পেল তাঁরা। প্রায় আড়াই দশক পর যার হাত ধরে বিশ্বকাপের রূপকথার মঞ্চে পেরুর উত্থান সেই রিকার্ডো গারেকার কিন্তু এই কলকাতা শহরের সঙ্গে রয়েছে নাড়ির যোগ ! একটু পেছনে ফিরে যাওয়া যাক ২৩ বছর আগে। সেই বছরেই আর্জেন্টিনা ভারতে এসেছিল নেহরু কাপ খেলতে। তখনকার সেই আর্জেন্টিনা দলের তারকা ছিলেন গারেকা। সেবার নেহেরু কাপে আয়োজক দেশ ভারত ছাড়াও খেলেছিল পোল্যান্ড, চিন, আর্জেন্টিনা, ভাসাস বুদাপেস্ট এবং রোমানিয়ার অনূর্ধ্ব-২১ দল। ভারতের স্কোয়াডে সেবার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বাঙালির ফুটবলারদেরই । সেবার নেহেরু কাপে ভারতীয় দলে ছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, কৃষ্ণেন্দু রায়, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, অলোক মুখোপাধ্যায়ের মত তখনকার তারকারা। অতনু ভট্টাচার্য ছিলেন গোলকিপার। গ্রুপ লিগের পাঁচটি ম্যাচের চারটেতেই হেরে গিয়েছিল ভারত। একমাত্র গোলশূন্য ড্র করেছিল রোমানিয়ার যুব দলের সঙ্গে। যদিও আর্জেন্টিনা তাদের দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে এসেছিল ভারতে। তা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে ১-০ গোলে শেষ মুহূর্তে হেরে যায় ভারত। কৃষ্ণেন্দু-অলোকরা এখনও ৭৮ মিনিটে গোল হজম করার তিক্ত স্মৃতি বুকে বয়ে নিয়ে বেড়ান । সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে শেষ মুহুর্তে জেতানোর নায়ক গেরেকাই আজ পেরুর কোচ।
ময়দানের বান্টু দা বলে পরিচিত কৃষ্ণেন্দু রায়ের কাছে এখনও সেই স্মৃতি উজ্জ্বল। তার কথায়, ‘‘ তখন আর্জেন্টিনা মানেই আমাদের কাছে মারাদোনা। তবে সেই টুর্নামেন্টে মারাদোনা না এলেও সেদিন আমরা এক নতুন তারকার উত্থান দেখেছিলাম। তিনি হলেন এই গারেকা। ও যে বিশ্বফুটবলের পরবর্তী তারকা হতে চলেছে, সল্টলেক স্টেডিয়ামেই তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।’’ ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে অংশ নেওয়া মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যও গারেকাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আজও স্মৃতিমেদুর হয়ে যান। মনোরঞ্জনের কথায়, ‘‘গারেকা সেই সময় ছিল উঠতি ফুটবলার। আর্জেন্টিনার কোচ কার্লোস বিলার্দো সেবার বাছাই করা উঠতি ফুটবলারদের নিয়েই নেহরু কাপে অংশ নিতে এসেছিলেন। গারেকা কিন্তু কোচের আস্থার মর্যাদা দিয়েছিলেন গারেকা।’’
পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই স্পষ্ট হয়ে যায় কেন আজও গারেকাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ময়দানের মনাদা-বান্টুদারা । সেবার নতুন ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়া আর্জেন্টিনা নেহরু কাপের ফাইনালে যেতে পারেনি। তবে তিনটে গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন গারেকা।
তবে আর্জেন্টিনার সেই অনূর্ধ্ব ২১ দল থেকে গারেকা, বুরুচাগা এবং গোলকিপার নেরি পমপিদো দু-বছর পর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন। মারাদোনা ম্যাজিকে মেক্সিকোর সেই বিশ্বকাপেই এই আর্জেন্টিনার শৌর্য দেখেছিল গোটা বিশ্ব। তবে বান্টুদা তথা কৃষ্ণেন্দু রায়ের কাছে নেহরু কাপে আর্জেন্টিনা মানেই কিন্তু একমাত্র গারেকা-র বীরত্বগাথা নয়। তিনি স্মৃতি হাতড়ে হাতড়ে বলছিলেন, ‘‘আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ভাল খেলার সুবাদে তৎকালীন ফেডারেশন সভাপতি প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সী আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে ১০০০ টাকা করে দিয়েছিলেন। আমরা সবাই সেই টাকায় ধর্মতলার স্যান্টোস টেলার্স থেকে পোশাক বানিয়েছিলাম।’’ আপাতত পেরুর রূপকথা সদৃশ উড়ান নিয়ে চমকৃৎ গোটা ফুটবলবিশ্ব। কিন্তু পেরুর রূপকথা সদৃশ উঠে আসার নেপথ্যের মানুষটির উত্থানও যে কলকাতা শহরেই সে কথা কী জানে ফুটবল বিশ্ব?