সে এক অদ্ভূত পাখি। বুড়ো হওয়ার পর মৃত্য়ু সজ্জায় এসে আপনা থেকেই গায়ে আগুন ধরে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আবার সেই ছাই থেকে নবজন্ম নেয়। ফিনিক্স পাখি। রোমান উপকথা ও গ্রিক রূপকথার গল্প যাঁরা শুনেছেন, এই পাখি তাঁদের কাছে অত্য়ন্ত পরিচিত। মার্কিন মুলুকের অনেক সিনেমাতেও ফিনিক্স পাখির পরিচিতি পাওয়া যায়। অবশ্য়ই রূপকথার গল্পে। তবে, এই প্রতিবেদন কোনও রূপকথার গল্প শোনানোর জন্য় নয়। এই প্রতিবেদন এক জীবন্ত ফিনিক্স পাখির। বাস্তবের মাটি থেকে ডানা মেলে বহুবার তাঁকে আকাশে উড়তে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। নিজের সীমা বরাবর নিজেই ঠিক করছেন তিনি। আর সেই ক্রিকেটারের নাম যুবরাজ সিং। ভারতের স্টার আলরাউন্ডার। কোহলি-শাস্ত্রীর দল থেকে এখন তিনি ব্রাত্য়।
ভারতীয় দলে খেলা সেই উইকেটকিপার ব্য়াটসম্য়ানটিকে মনে আছে? চোখে বল লেগে যাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। অসময়ে কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি জাতীয় নির্বাচক ছিলেন একসময়। তাঁর আমলে যুবরাজ সিং দাপটে ফিরেছিলেন বাদ পড়ার পর। আজ সেই পাঞ্জাবের স্টার অলরাউন্ডারকে বর্তমান জাতীয় নির্বাচকরা পাত্তাই দিচ্ছেন। বলছেন, তাঁর জায়গা নেওয়ার জন্য় অনেক ক্রিকেটার এসে গিয়েছে ভারতীয় দলে। কিন্তু, যুবরাজের মতো ক্রিকেটারের কি সত্য়িই কোনও পরিবর্ত পাওয়া যায়। তাঁদের পরিবর্ত তো তাঁরাই হন। এমএসকে প্রসাদ যখন যুবিকে দল থেকে বাদ দিয়ে চলেছেন ক্রমাগত, তখন তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সাবা করিম। বললেন, যুবি ফিনিক্স পাখির মতো। পুড়ে ছাই হওয়ার পর বারবার নতুন করে জন্ম নিতে ভালোবাসেন। অতীতে বহুবার করে দেখিয়েছেন, আবারও তা করে দেখাবেন যুবি।
শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর অস্ট্রেলিয়া সিরিজেও ব্রাত্য় যুবি। এ প্রসঙ্গে সাবা একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্য়মকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্তমান জাতীয় নির্বাচকদের একহাত নেন। বলেন, ”যুবরাজকে বাদ দিচ্ছো, দাও। কিন্তু, নিজের ঝুঁকিতে। ও ফিনিক্স পাখির মতো। সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করতে ছাই থেকে ফের জন্ম নিতে ভালোবাসে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দেওয়ালের লিখন এখন থেকে পড়ে ফেললে ভুল হবে। কিছু সমস্য়া হচ্ছে বটে। কিন্তু, ভুলে গেলে চলবে না, যুবি চ্য়াম্পিয়ন ক্রিকেটার। এখনও সময় আছে। যুবি আবার প্রমাণ করে দেবে।”
যুবরাজের এখন ছত্রিশ বছর বয়স। বিশ্রামের অজুহাতে তাঁকে ভারতীয় দলের বাইরে বের করে দিয়েছেন নির্বাচকরা। কারণ, অধিনায়ক কোহলি ও কোচ শাস্ত্রীর পরিকল্পনায় ফিট হচ্ছেন না তিনি। দু’মাস হয়ে গেল ভারতীয় দলের বাইরে যুবি। এপ্রসঙ্গে, প্রাক্তন নির্বাচক বলেন, ”সত্য়ি কথা বলছি, আমরা যখন জাতীয় নির্বাচক ছিলাম। আমরাও তখন ভেবেছিলাম যুবি শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ও আমাদের ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিল। আর তার জন্য় আমি খুশি। তাই বলছি, ও আবার দলে ফিরবে।” তবে, সাবা মেনে নিয়েছেন, আগের চেয়ে যুবরাজের বয়স এখন বেড়েছে, তাই এবার দলে ফিরতে হলে নিজের ফিটনেস নিয়ে অনেক বেশি খাটতে হবে তাঁকে। সাবা এরপর বলেন, ”কখনই এটা বলা যায় না যে ‘এ’ দলে ফিট করবে না বা ‘বি’ ফিট করবে। পরিস্থিতি সবসময় বদলাতে থাকে। যুবরাজের যা অভিজ্ঞতা রয়েছে, সময় এলে দেখা গেল, ওকেই তখন দলে ডাকছে টিম ম্য়ানেজমেন্ট। তাই বলছি, দেওয়ালের লিখনটা এখন থেকেই নিশ্চিত হয়ে পড়ে ফেলবেন না।”