বিরাট কোহলি এবং তার দল ইতিহাস তৈরি করল নাগপুরে সেই সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে বড় জয়ের বরাবরি করে ফেলল। ইনিংস এবং ২৩৯ রানে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় ২০০৭ এর ৫ই মে তে বাংলাদেশে সঙ্গে জয়ের ব্যবধানের সমান। এই মুহুর্তে বিরাট ব্যাট হাতে এবং অধিনায়কত্ব দুই ক্ষেত্রেই অপ্রতিরোধ্য। টেস্ট ক্রিকেটে ভারত তার রূপকথা সমান যাত্রা বজায় রেখেছে এই সিরিজেও। এবং সিরিজে ১-০ এগিয়ে রয়েছে এই মুহুর্তে তারা। এবং অধিনায়ক হিসেবেও নিজেকে মেলে ধরে বিরাট এই টেস্টে নিজের পঞ্চম ডবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। রেকর্ড ভাঙাকে অভ্যাসে পরিনত করে ফেলা দিল্লীর এই ব্যাটসম্যান এই ম্যাচেও সেই অভ্যেস বজায় রেখেছেন। ১০টি সেঞ্চুরি করে এক ক্যালেন্ডার বছরে ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করার দৌড়ে বিরাট কিংবদন্তী রিকি পন্টিং(৯) এবং গ্রেম স্মিথকেও(৯) পেছনে ফেলে দিয়েছেন। এই দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যান টেস্টে পাঁচটি ডবল সেঞ্চুরি করে ধরে ফেলেছেন রাহুল দ্রাবিড়কেও। এই মুহুর্তে ডবল সেঞ্চুরি করার ক্ষেত্রে একমাত্র তার সামনে রয়েছেন শচীন তেন্ডুলকর (৬) এবং বীরেন্দ্র সেহবাগ (৬)। ম্যাচ শেষে এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বিরাট জানিয়েছেন তিনি তার ন্যাচারাল গেম খেলতে চাওয়ার পাশাপাশি স্ট্রাইক রোটেট করতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে তিনি পার্টিকুলারলি কয়েকদিন ধরেই চেষ্টা করে গেছেন নিজের শতরান গুলিকে আরও বড় রানে পরিনত করতে। এবং যে জায়গাগুলিতে নিজের শুধরানো প্রয়োজন মনে করেছে, নিজেকে শুধরেছেন। তিনি বলেছেন দীর্ঘ সময় ব্যাট করার ক্ষেত্রে তার ফিটনেসই একমাত্র বড় কারণ। এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “ এই পিচটি ব্যাট করার ক্ষেত্রে আদর্শ ছিল। পিচ সামান্য স্লো থাকলেও বেশি কিছু ঘটে নি।

আমি যে ভাবে ব্যাট করি সেভাবেই ব্যাট করতে চেয়েছিলাম — ভালো জায়গায় পৌঁছতে চাওয়ার পাশাপাশি স্ট্রাইকও রোটেট করতে চেয়েছিলাম। এবং চেষ্টা করে গেছিলাম স্কোর বোর্ডকে সচল রাখতে। তাড়াতাড়ি রান করতে চেয়েছিলাম যাতে প্রতিপক্ষকে আউট করার সময় পাই যা আমাদের এই সফরে জন্য করার দরকার ছিল। সেই সঙ্গে আমি চাইছিলাম নিজেকে আরও উন্নত করতে (শতরানকে আরও বড় রানে বদলাতে) যাতে করে দলের প্রয়োজন মেটাতে পারি। সেঞ্চুরি করার পর যখন আপনি মনোসংযোগ হারিয়ে ফেলেন, তখন তারপরেই আপনি দ্রুত দুটো উইকেটও হারিয়ে ফেলেন। তাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানই খেলাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল সেঞ্চুরি করার পর আপনাকে ধরে থাকতে হবে যাতে দল একটা ভালো জায়গায় পোঁছুতে পারে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ব্যাট করার জন্য আমার ফিটনেস আমাকে সাহায্য করেছে প্রচুর পরিমানে। এটা অনেক কিছুর কম্বিনেশনের ফলেই হয়েছে”। চেতেশ্বর পুজারা, মুরলী বিজয়, রোহিত শর্মার প্রশংসাও বিরাট করেছে, এরা তিনজনেই এই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন। ইশান্ত শর্মার দলে ফিরে আসাতেও যথেষ্ট অভিভূত হয়েছেন বিরাট, কারন এই ম্যাচে তিনি দুর্দান্ত বল করে দলকে জেতাতে সাহায্য করেছেন। এই নিয়ে বলতে গিয়ে বিরাট বলেন, “পুজারা, অবশ্যই খুবই ধারাবাহিক। বিজয় অনেকদিন বাদে খেলল, এবং টেস্টে ও অনেকবারই ভারতকে গৌরব এনে দিয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে ও অনেকগুলো টেস্টে খেলতে পারেনি, আমি জানি এটা ওর পক্ষে কতটা যন্ত্রনাদায়ক। রোহিতও, ওর প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে। ও নিজের জন্য একটা স্টেটমেণ্টও তৈরি করেছে। আমরা যখন ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যখন কোনো কম্বিনেশনের কথা ভাবি তখন রোহিত অবশ্যই সেই ভাবনার মধ্যে থাকে। ভুবি ভারতের জন্য গত কয়েক মাসে অনেক বেশি ক্রিকেট খেলেছে। তেমনিভাবে উমেশ, শামী এবং ইশান্ত সেভাবে খেলেনি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলাটা ওদের সাহায্য করেছে। ইশান্ত দুর্দান্ত। উমেশও বেশ ভাল ছন্দে রয়েছে। কলকাতাতে শামীও যথেষ্ট ভাল ফর্মে ছিল। আমাদের বোলাররা সকলেই বেশ ভালো ছন্দে রয়েছে। আমরা চাই ওরা যথা সম্ভব বেশি খেলুক। আমরা আগামী ট্যুরের (দক্ষিণ আফ্রিকা সফর) কথা ভেবে প্রস্তুতি নিতে চাই। তাই আমরা তেমনই পীচ চেয়েছিলাম যাতে বেশি করে প্রাণ আছে। যাতে আমাদের জোরে বোলারা সাহায্য পায় এবং আগামি সফরের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। দ্বিতীয় দিন থেকে এই পীচে প্রাণ চলে গিয়েছিল। কলকাতাতেও দুর্দান্ত উইকেট ছিল, যেমনটা আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা ট্যুরের আগে চাইছিলাম। ওই ট্যুরটা আমাদের জন্য খুব বড় একটা সফর। সকলেই ওই সফরের দিকে তাকিয়ে আছে”।