ক্রিকেট কিংবা ফুটবল যেকোনো খেলতেই ইনজুরিতে পড়তে হয় খেলোয়াড়দের। কেউ কেউ ইনজুরিতে পড়ে শেষপর্যন্ত হাল ছেড়ে দিলেও গুরুতর ইনজুরি নিয়ে দেশের জন্য লড়াই করে যাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যাও কম নয়। ভারতের যুবরাজ সিং ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর মরণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর সেখান থেকে ফিরে আবারো দেশের জন্য নিজেকে সমর্পন করা কিংবা বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন মাশরাফির পায়ে একাধিক অস্ত্রোপচারের পরও দেশের জন্য বুক চিতিয়ে লড়ে যাওয়া এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে ক্রিকেটে।

এশিয়া কাপ ২০১৮ এর উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ দল ব্যাটিং করার সময় টাইগারদের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল আঙুলে চোট পেলে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। তবে ইনিংসের ৪৭তম ওভারে এসে নবম উইকেটের পতন ঘটলে আবারও ব্যাট হাতে নেমে পড়েন তামিম। শুধু কি তাই বাম হাতে ব্যথা থাকায় শুধু ডান হাতে ব্যাটিং করেন এই ক্রিকেটার। বাংলাদেশ অবশ্য ম্যাচ জিতেছে ১৩৭ রানে পাশাপাশি ভক্তদের মনও জিতে নিয়েছেন তামিম।
এবার দেখা যাক গুরুতর ইনজুরি নিয়ে মাঠে নামার নজির সৃষ্টিকারী পাঁচজন ক্রিকেটারের নাম।
৫. ইয়ান বেল

২০১০ সালে বাংলাদেশ দল যখন ইংল্যান্ড সফরে যায় ঐ সফরে ব্রিস্টলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল ২৩৬ রানের লড়াকু সংগ্রহ করে। অন্যদিকে ক্যাচ নিতে গিয়ে পায়ে আঘাত পান বেল। পরবর্তীতে মেডিকেল টিমের সাহায্যে মাঠ ছাড়েন ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
ইংল্যান্ড ব্যাটিং করার কালে ২২৭ রানে ৯ উইকেট পড়ে গেলে বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন দেখে। এবং দশ রান করার জন্য ইনজুরি নিয়েই মাঠে নামেন বেল। যদিও ম্যাচ জিতেছিল বাংলদেশই কিন্তু ক্রিকেট ভক্তদের মন জিতে নিয়েছিলেন ইয়ান বেল।
৪. শচীন তেন্ডুলকর

১১ বছর বিরতির পর ভারতের সাথে সিরিজ খেলার জন্য ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান দল আসে ভারতে। টেস্ট ম্যাচে শহীদ আফ্রিদির গড়া ১৪১ রানের ইনিংসে ভর করে চতুর্থ ইনিংসে টিম ইন্ডিয়াকে ২৭১ রানের টার্গেট দেয় পাকিস্তান। এই টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ৮২ রানে টিম ইন্ডিয়ার ৫ উইকেট পড়ে গেলে মাস্টার ব্লাস্টার শচীন ব্যাক পেইনের ইনজুরি নিয়ে মাঠে নামেন ও নায়ান মঙ্গিয়াকে নিয়ে জুটি গড়েন। ঐ ম্যাচে পাকিস্তান ১২ রানে জিতলেও ইনজুরি সাথে নিয়ে ২৭৩ বলে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেন লিটল মাস্টার।
৩. মাইকেল ক্লার্ক

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০১৪ সালে অজিদের টেস্ট সিরিজ চলাকালে যখন অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করছে তখন প্রোটিয়াদের গতিদানব মরনে মরকেলের বাউন্স মোকাবেলা করতে গিয়ে ইনজুরির শিকার হন মাইকেল ক্লার্ক। এবং এই ইনজুরি নিয়েই ৩০১ বল খেলে ১৬১ রান করে ক্রিকেট ভক্তদের মুখে হাসি ফোটান ক্লার্ক। ঐ টেস্ট জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় ক্লার্ক এর নেতৃত্বাধীন দল।
২. স্টিভ ওয়াহ

২০০১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ চলাকালে পায়ের ইনজুরিতে পড়লে শেষ টেস্টের জন্য ৫০% ফিটও নন বলে ফিজিও নিষেধ করেন স্টিভ ওয়াহকে ম্যাচ খেলার জন্য। প্রথম ইনিংসে ৬৪১ রানের মধ্যে ওয়াহ এর অবদান ছিল অপরাজিত ১৫৭ রান। এই ম্যাচ ইনিংস এবং ১৫ রানে জিতে নিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সম্মানের অ্যাশেজ জিতে নেয় অজিরা। পাশাপাশি দলের জন্য লড়াই করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন অজই এই ক্রিকেটার।
১. গ্রায়েম স্মিথ

মাত্র ৮.২ ওভার ব্যাট করতে পারলেই ম্যাচ ড্র হবে। ইতোমধ্যে নয় উইকেট পড়ে যাওয়ায় হারের শঙ্কায় ভুগতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন সমীকরণ নিয়ে ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বিপক্ষে হাতের ইনজুরিতে পড়া স্মিথ ব্যাট হাতে নেমে পড়েন মাঠে। অস্ট্রেলিয়ার অগ্নিঝরা পেস বোলিংয়ের সামনে এমন দুঃসাহস দেখিয়ে ২৭টি বল মোকাবেলা করেন প্রোটিয়া এই ক্রিকেটার। ঐ টেস্ট সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা।