গ্লাভস হাতে তিন কাঠির পেছনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বলের দিকে তাকিয়ে থাকেন উইকেটরক্ষক। বল গ্লাভস বন্দী করে ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিং রুমে পাঠানোর কাজটা বেশ ভালই করে থাকেন উইকেটরক্ষকরা। অন্যদিকে ডিসমিসাল করার কাজটাও করতে হয় উইকেটরক্ষককে। তবে একজন সেরা উইকেটরক্ষক খুঁজতে গেলে কখনোই শুধু বল গ্লাভস বন্দী করার দিকে হিসেব মিলালে চলবে না এর বাইরেও কিছু সমীকরণ থাকে সেরা উইকেটরক্ষক বিচার করতে গেলে।
একজন উইকেটরক্ষকের ব্যাট হাতে মাঠে নামা দলের জয়ে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অন্যদিকে লম্বা সময় ধরে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব পালনে কতটা সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত একজন উইকেটরক্ষক সেটাও মাথায় রাখতে হবে। অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ জয় কিংবা পরাজয়ের ক্ষেত্রে একজন উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করা এবং দক্ষতার পরিচয় দেয়া উইকেটরক্ষককে সেরাদের সেরা হিসেবে বিবেচনা করার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে।
জটিল সব হিসেব শেষে এবার দেখা যাক সারা বিশ্বে ওয়ানডে ফরম্যাটে সর্বকালের সেরা পাঁচ উইকেটরক্ষকের তালিকা।
৫. মার্ক বাউচার
দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে ১৪ বছর দেশের প্রতিনিধিত্ব করা উইকেটরক্ষক মার্ক বাউচার গ্লাভস হাতে দক্ষতার পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ছিলেন পটু। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে একসময় সবচেয়ে দ্রুত ফিফটি হাঁকানো ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। অন্যদিকে তাঁর ব্যাট চালানোর হাত যে কতটা শাণিত তা বুঝা যায় তাঁর হাত ধরেই ওয়ানডেতে ৪৩৪ রানের পাহাড় টপকানো দক্ষিণ আফ্রিকার দলের দিকে তাকালে। স্পিন বলে ব্যাট চালাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা এই কিংবদন্তি উপমহাদেশের বোলারদের বিপক্ষেই ছিলেন বেশি সফল।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ২৯৫ ম্যাচ খেলে গ্লাভস হাতে ৪২৫ ডিসমিসাল করা বাউচার ১টি সেঞ্চুরি এবং ২৬টি ফিফটির সাহায্যে ব্যাট হাতে করেছেন ৪৬৮৬ রান। অন্যদিকে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ২৮.৫৭।
৪. ব্রেন্ডন ম্যাককালাম
তালিকার চতুর্থ স্থানে থাকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ক্রিকেটের যে ফরম্যাটেই বিচরণ করেছেন সাফল্য পেয়েছেন দুহাত ভরে। কিউই দলের সাবেক কাপ্তান দলের সকলকে একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক্রিকেট খেলতে বেশি উৎসাহ প্রদান করতেন যা প্রকাশ পেত ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষায়। ২০১৫ বিশ্বকাপে তাঁর আগ্রাসী মনোভাবের ফলে নিউজিল্যান্ড দল মন কেড়ে নিয়েছিল অনেক ক্রিকেতভক্তের। প্রকৃতপক্ষে একজন ক্রীড়াবিদ, দলনেতা, উদ্ভাবনী ব্যাটিং কুশলী হিসেবে ম্যাককালামের কোনো তুলনা হয় না।
ওয়ানডে ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের এই ক্রিকেটার খেলেছেন ২৬০টি ম্যাচ। ২৪২ ডিসমিসালের পাশাপাশি ব্যাট হাতে ৩০.৪১ গড়ে ৫ সেঞ্চুরি ও ৩২ ফিফটির মাধ্যমে করেছেন ৬০৮৩ রান। প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৬.৩৭।
৩. কুমার সাঙ্গাকারা
লঙ্কান দলের হয়ে দীর্ঘদিন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করা উইকেটরক্ষক কুমার সাঙ্গাকারা বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন তাঁর শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের জন্য। সূক্ষ্ম দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বিশ্বকাপে রানার আপ পুরস্কার এবং ব্যাটিংয়ে একাধিক পুরস্কার পাওয়ার দিকে নজর দিলে অন্যতম সেরা একজন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে সাঙ্গাকারার নামটিই আসবে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে প্রবেশ করলেও পরবর্তিতে গ্লাভস হাতে তুলে নেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪০৪ ম্যাচে ৪৮২ ডিসমিসালের মালিক সাঙ্গাকারা ব্যাট হাতেও ছিলেন সফল। একদিনের ফরম্যাটে ৪১.৯৮ গড়ে ২৫টি শতক এবং ৯৩টি অর্ধশতকের মাধ্যমে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৪২৩৪ রান। যা তালিকার তিনে স্থান দিয়েছে তাঁকে।
2. মহেন্দ্র সিং ধোনি
৩৩২ ম্যাচ, ৪২৫ ডিসমিসাল, গড় ৫০.১১, সেঞ্চুরি ১০, হাফ সেঞ্চুরি ২৬, মোট রান ১০১৭৩। এই পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে মহেন্দ্র সিং ধোনি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে কতটা সফল।
বর্তমানে টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেনের দায়িত্বে না থাকলেও নেতৃত্বের ভার লম্বা সময় ধরে ছিল ধোনির কাঁধেই। বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলা কিংবা দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে ম্যাচ ফিনিশ করার কাজটা দক্ষ হাতেই সামাল দিচ্ছেন ক্যাপ্টেন কুল হিসেবে খ্যাত এই ক্রিকেটার। তাঁর নেতৃতেই ২০১১ বিশ্ব আসরে শিরোপা, টি-২০ বিশ্ব আসরের শিরোপা, টেস্টে ভারতের প্রথম স্থান অধিকার করা সহ অসংখ্য সাফল্য এসেছে ধোনির হাত ধরে। এতসব হিসেবের খসড়া করে মহেন্দ্র সিং ধোনির অবস্থান দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।
১. অ্যাডাম গিলক্রিস্ট
একজন উইকেটরক্ষকের প্রতিভা শুধু গ্লাভস হাতেই নয় ব্যাট হাতেও যে হতে পারে সেই ধারনা প্রথম প্রবর্তন হয় গিলক্রিস্টের হাত ধরেই। অজি এই ক্রিকেটার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েই। ক্রিকেট বিশ্বে বোলারদের ত্রাস গিলক্রিস্ট অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে জিতেছেন তিনটি বিশ্বকাপ।
আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৮৭ ম্যাচে ৪৭২ ডিসমিসালের মালিক গিলক্রিস্ট ব্যাট হাতে করেছেন ৯৬১৯ রান। ৩৫.১৯ গড়ে ব্যাট করে যাওয়া এই অজি তারকা ১৬টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ৫৫টি ফিফটি। তাই তালিকার প্রথম স্থানে জায়গা পেয়েছেন সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার।